প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
কোষ্ঠকাঠিন্য দুই ধরনের- অ্যাকিউট কনস্টিপেশন বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্রনিক কনস্টিপেশন বা দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য। তিন মাসের কম সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে তা সাময়িক। এর বেশি সময় ধরে সমস্যা হতে থাকলে সেটি সারিয়ে তোলা কঠিন হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে প্রথম দিকেই সচেতন হতে হবে।
লক্ষণ
* শক্ত মলত্যাগ হবে। মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা ও অস্বস্তি হবে।
* মলত্যাগের সাধারণ রুটিন যেমন প্রতিদিন সকালে মলের বেগ আসার রুটিন বদলে যাবে।
* পর্যাপ্ত মলত্যাগ না হওয়া বা অল্প অল্প হতে পারে। কিছুক্ষণ পরপর বায়ু ত্যাগ হতে পারে।
* পেট ফুলে যেতে পারে ও ব্যথা হতে পারে। খাওয়ার রুচি কমে যাবে। সারাক্ষণ পেট ভরা বোধ হবে।
জটিলতা
দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা চলতে থাকলে পায়ুপথের আশপাশের রক্তনালিগুলোতে প্রদাহ হতে পারে এবং মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে রক্ত যেতে পারে। এমনকি পায়ুপথে চুলকানিও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দেখা দিতে পারে এনাল ফিস্টুলা। ইউরিনারি ইনকনসিস্টেন্স বা প্রস্রাবে অনিয়মও দেখা দিতে পারে এ সময়।
কেনো হয়
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য এর মূল কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপনের প্রভাব। বিশেষ করে আঁশযুক্ত খাবার বা শাকসবজি কম খাওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া, নিয়মিত মলত্যাগ না করা, মলত্যাগের বেগ এলেও আটকে রাখা ইত্যাদি কারণে হয়। এ ছাড়া নিয়মিত ঘুম কম হলে, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এটা হতে পারে। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে আছেÍক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, অ্যান্টি স্পাজমোডিক, অ্যান্টি ডায়েরিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড ইত্যাদি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে। বেশি খাওয়া যাবে না। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএয়ের তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, আর তিনি যদি ভারী কোনো কাজ না করেন, তা হলে তার দিনে ৬০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। ভারী কাজ বা শরীরচর্চা করলে আরও ৩০ গ্রাম বাড়নো যায়। এর বেশি খেলেই হজমে গোলযোগ বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমনÍপ্রতিদিন পর্যাপ্ত শাকসবজি খেতে হবে। পর্যাপ্ত বলতে প্রতিবেলায় যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ ভাত বা রুটি খাবেন তার দ্বিগুণ পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। দিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি খেতে হবে। খাবার আধা ঘণ্টা আগে-পরে পানি পান করতে হবে। রাতে শোবার আগে নিয়মিত ১ চামচ ইসপগুল কুসুম গরম পানিতে গুলে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি হলে প্রতিবেলা খাবার আগে এই পদ্ধতিতে ১ চামচ করে ইসুপগুল খান। নিয়মিত ইসপগুল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা ৯০ শতাংশ কমে যায়।
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিদিন নাশতায় একটি আপেল খেতে হবে। আপেলে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়।
নিয়মিত ব্যয়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। অন্তত দিনে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি এবং তা দিনের আলো ফোটার আগেই।