প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
মানবদেহে রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৮০-১২০ মি. গ্রাম/ডেসি.লি। রক্তে যদি এ মাত্রা বেড়ে যায়, তবে তাকে ডায়াবেটিস বলে। এ রোগটি হয় ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে বা ইনসুলিন হরমোন সঠিকভাবে কাজ না করলে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগটি দিন দিন বেড়েই চলছে। বিগত দশকে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন থেকে ১৬০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।
ডায়াবেটিস কী
মানবদেহে রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৮০-১২০ মি. গ্রাম/ডেসি.লি। রক্তে যদি এ মাত্রা বেড়ে যায়, তবে তাকে ডায়াবেটিস বলে। এ রোগটি হয় ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে বা ইনসুলিন হরমোন সঠিকভাবে কাজ না করলে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগটি দিন দিন বেড়েই চলছে। বিগত দশকে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন থেকে ১৬০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, সব ডায়াবেটিস রোগীর প্যানক্রিয়াসে ইউরিট্রেমা প্যানক্রিয়েটিকাম (Eurytrema pancreaticum) নামক একটি সাধারণ ফ্লুক (fluke) প্যারাসাইট থাকে যা গবাদিপশুর প্যানক্রিয়াসে অবস্থান করে। এটা মানুষের শরীরে আসে গবাদি পশুর মাংস এবং দুধের মাধ্যমে।
প্রকারভেদ
টাইপ-ও বা ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস (১০-১৪ বছর বয়সীদের বেশি দেখা যায়)।
টাইপ-ওও বা ইনসুলিন অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস (চল্লিশোর্ধ্ব রোগীর ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়)।
টাইপ-ওওও ডায়াবেটিস-৪৫ ঊর্ধ্ব বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
সাধারণ লক্ষণ
* অতিরিক্ত পিপাসা।
* অতিরিক্ত প্রস্রাব বা ঘন ঘন প্রস্রাব (Frequency micturation)। বিশেষ করে রাত্রিকালীন ঘন ঘন প্রস্রাব।
* অতিরিক্ত ক্ষুধা।
* শীর্ণতা (Loss of weight) অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণের তুলনায় শরীরে ওজন কমে যাওয়া।
* অতিমাত্রায় শারীরিক দুর্বলতা।
* বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দেয়া।
* শরীরের কোথাও ক্ষতের (ঝড়ৎব) সৃষ্টি হলে দেরিতে শুকানো।
* সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তবোধ হওয়া।
* যৌনক্ষমতা হ্রাস।
* হাতে পায়ের স্বাভাবিক অনুভূতি লোপ (loss of feel) পাওয়া।
* প্রস্রাবের রাস্তায় প্রদাহ।
* চোখে ঝাপসা দেখা।
* পায়ে ঘা।
অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তাই রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষায় (Blood and urine test) রোগ ধরা পড়ে।
জটিলতাসমূহ
ক. তাৎক্ষণিক জটিলতাসমূহ-
১. হঠাৎ রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া বা হাইপো গ্লাইসেমিয়া। এক্ষেত্রে রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
২. ডায়াবেটিস কিটো অ্যাসিডোসিস, এক্ষেত্রে শরীরে চর্বি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না।
৩. ননকিটোটিক ডায়াবেটিক কোমা, এক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
৪. ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিসথ এক্ষেত্রে দুধ জাতীয় খাবার হজমে সমস্যা হয়।
৫. হঠাৎ রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়া।
খ. দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাসমূহ-
১. ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুতন্ত্রেও সমস্যা।
২. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বা দৃষ্টিজনিত সমস্যা।
৩. ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বা কিডনি রোগ।
৪. ডায়াবেটিক ফুট আলসার বা পায়ের ক্ষত।
৫. মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হৃদরোগ।
৬. ডায়াবেটিক গ্যাংগ্রিন বা পচনশীল ক্ষতের সৃষ্টি।
৭. চোখে ছানি পড়া।
ডায়াবেটিক কাদের বেশি হতে পারে
* এ রোগ যে কারো হতে পারেথ
* যাদের বংশের (Hereditary) কেউ না কেউ ডায়াবেটিসে ভুগেছেন বা ভুগছেন।
* মেদবহুল মাঝারি ও বয়স্ক লোক।
* যারা কায়িক পরিশ্রম কম করেন।
* দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন।
ডায়াবেটিস রোগী খাদ্য গ্রহণ এবং করণীয়
ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যথা-খাদ্য, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রা ও ওষুধ।
১. রোগীর শরীরের ওজন যদি বেশি থাকে তাহলে কমাতে হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।
২. প্রতিদিন আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে।
৩. মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয় খাবার অথবা যেসব খাবারের সঙ্গে চিনি যুক্ত করা হয়েছে তা অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
৪. যেসব খাবারে শর্করা বেশি (যেমন-চাল, আলু, আটার তৈরি খাবার) সেগুলো পরিমাণমতো খেতে হবে।
৫. শাক, সবজি, ডাল, টক জাতীয় ফল যেমন : বড়ই, কামরাঙ্গা, জাম, আমড়া, তেঁতুল, লেবু, মাল্টা, জলপাই, কদবেল, আঁশযুক্ত খাবার, টক দই বেশি খেলে কোনো ক্ষতি নেই। গাঢ় সবুজ শাকসবজি (Green vegetables), গাজরের সবুজ অংশ, ডাটা শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি ডায়াবেটিস রোগীর লিভারকে (Liver) সুরক্ষা করে। আঁশ জাতীয় খাবার রক্তে চিনির পরিমাণ ও লিপিড-এর পরিমাণ ঠিক করতে সহায়তা করে।
৬. যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যেমন : ঘি, মাখন, ডালডা, মাংস ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
ক্যালরিযুক্ত (Caloric) খাবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
৭. রোগীর নিয়মিত খেতে হবে।
৮. স্বাভাবিক নিয়মে খাবার গ্রহণ করতে হবে। কোনোদিন বেশি বা কোনোদিন কম এভাবে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৯. নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
চিকিৎসা
প্রবল পিপাসাসহ অত্যধিক প্রস্রাব লক্ষণে - সিজিজিয়াম জ্যাম্বো
প্রস্রাবের বেগ ধারণ করতে পারে না, প্রবল পিপাসা (Unquenchable thirst), খিটখিটে মেজাজ, দিন দিন শুকিয়ে
যেতে থাকে - ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম
রাত্রে শর্করা বা চিনিহীন (Sugar free) প্রচুর পরিমাণ প্রস্রাবে - এসিড ফস
প্রস্রাবে প্রচুর শর্করা (Carbohydrate) ও প্রস্রাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি - জিমনেমা সিলভেষ্টার
চর্মরোগ হলে - ইনসুলিন
হাত-পা জ্বালা করলে - সেফালান্ড্রা ইন্ডিকা
রোগী শুকাতে থাকে, প্রচুর পিপাসা ও প্রস্রাব লক্ষণে - রাস এরোমেটিকা
ডায়াবেটিস এবং জন্ডিস (Diabetes and Jaundice) একত্রে লক্ষণ প্রকাশ করলে - সিওনান্থাস
ডায়াবেটিস রোগজাত পচনশীল ক্ষতরোগ - আর্সেনিক এল্বাম
ছোট ছেলেমেয়েদের ডায়াবেটিস রোগে - ক্রেটেগাস
এছাড়াও রোগীর রোগ লক্ষণ (Totality of symptoms) অনুসারে আরো অনেক ওষুধ আছে সেগুলো হতে সিমিলিমাম করে সঠিক শক্তি ও মাত্রায় প্রয়োগ করলে দীর্ঘদিন রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
ডাঃ মোঃ মাজহারুল হক : বি.এ. ডি.এইচ.এম.এস. (বি.এইচ.বি.) ঢাকা। ডি.ইউ.এম.এস. (কন্ট), এম.এইচ.জি. (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকা।
ইসলামিয়া হোমিও হল। চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।
মোবাইল : ০১৯২২৪৯২৬২৪ ও ০১৭৯৪৫০৯০৮০