মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

শীতে প্রবীণদের চাই বাড়তি যত্ন
অনলাইন ডেস্ক

গাছের শুকনো পাতা আমাদের বার্তা দিচ্ছে যে, শীত এসে গেছে। এখন ঘর থেকে বের হলেই লাগছে সোয়েটার কিংবা শাল। শীতের এই আমেজ উপভোগ করছে সবাই, কারণ বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়ার ফলে শীতকাল পাওয়া যায় খুবই অল্পসময়ের জন্য। তাই যে যার মতো করে চেষ্টা করে শীতকে উপভোগ ও স্মরণীয় করে রাখতে। আবার শীত কিন্তু সবার জন্য উপভোগ্য হয় না। অনেকের কাছেই শীতের দুই মাস অভিশাপের মতো আসে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতের সময়টা খুব কষ্ট পেয়ে থাকেন, কারণ তারা সারা বছরই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত থাকেন, আর সেই রোগগুলোই শীতকালে বেশি তীব্রতা পায়। তার মধ্যে প্রধান সমস্যাগুলো হচ্ছে হাঁপানি, নিউমোনিয়া, জয়েন্ট পেইন, শ্বাসনালির প্রদাহ ইত্যাদি। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ হারুন অর রশীদ প্রবীণদের শীতের সমস্যা নিয়ে বলেন, শীতে প্রবীণদের একটা সমস্যা দেখা যায় তা হলো- হাইপোথার্মিয়া, এটি হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া। শরীরের জন্য কেন্দ্রীয় তাপমাত্রা ৩৫.০ সেন্টিমিটারের নিচে চলে গেলে সাধারণত হাইপোথার্মিয়া দেখা যায়। এটি সবার হতে পারে, কিন্তু বয়স্কদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। হাইপোথার্মিয়া হলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করতে পারে। এ সময় অনেকেই হাড়ে ব্যথায় ভোগেন। কারণ শীতকালে শারীরিক পরিশ্রম কম হয় বলে এই রোগের লক্ষণগুলো আরও বেড়ে যায়। তা ছাড়া আবহাওয়া বদলে যাওয়ার কারণে পরিবেশগত চাপে বদল আসে, যা হাড়ের জোড়ার অভ্যন্তরীণ বায়ুচাপে পরিবর্তন আনে। রেনোড ফেনোমেনন নামক একটা রোগের প্রবণতা শীতের মাঝে দেখা যায় তা হলো হাত ও পায়ের আঙুলের রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হাত-পা নীল হয়ে যায়। এটা সাধারণত তীব্র শীতে দেখা দেয়, যার প্রভাবে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হয় না ও ত্বকে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, শীতে প্রবীণদের কিছু চর্মরোগ দেখা দেয়, এর কারণ অনেকে বয়স্কদের শীত পড়লে ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে গোসল করান না এতে শরীরে অনেক ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে শুষ্কতা, চুলকানি, শরীরে ঘা হওয়া ইত্যাদি।

শীতে বয়স্কদের হাঁপানি সমস্যা প্রবলভাবে দেখা দেয়। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া, উড়ন্ত ধুলাবালি এর জন্য দায়ী। যাদের হাঁপানি সমস্যা আছে তাদের সারা বছর থেকে শীতকালে বেশি হাঁপানির টান ওঠে। ঋতু পরিবর্তনের জন্য জ্বর-সর্দি-কাশি জটিলতা থেকেও হাঁপানি বেড়ে যায়। শীতে বয়স্কদের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শীতে অল্পতেই ঠাণ্ডা বা বুকে কফ লেগে যায়। বুকের কফকে অবহেলা করলে সেই জায়গা থেকে সৃষ্টি হতে পারে নিউমোনিয়ার। শীতের সময়ের এই নিউমোনিয়া বয়স্কদের জন্য এতটাই ক্ষতিকারক যে, এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডাঃ হারুন অর রশিদ আরও জানান, অনেকের কাছেই এটা অজানা যে, শীতের সময় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যান্য সময় থেকে বেড়ে যায়। কারণ এ সময় শরীর থেকে গরম বের হতে পারে না, ঠাণ্ডায় ধমনি সংকোচিত হয়ে রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে। আর শীতে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, ফলে রক্তনারিতে সহজেই রক্তজমাট বাঁধতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ। তাই বয়স্কদের অন্যান্য সময়ের থেকে শীতের সময় চাই বাড়তি যত্ন। তা না হলে এই শীতে তারা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে যেকোনো কঠিন রোগে। ডাঃ হারুন অর রশিদ প্রবীণদের শীতের সময়ের যত্ন নিয়ে বলেন, ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই গরম কাপড় পরে বের হতে হবে। শরীর যতটা সম্ভব গরম রাখতে হবে। বাইরের হাঁটার অভ্যাস থাকলে শীতের সময়টা ঘরে হাঁটার চেষ্টা করতে হবে, কারণ তা না হলে বাইরের ধুলাবালিতে শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা দেখা দেবে। সম্ভব হলে ঘরে হিটারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রতিদিন হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে, কারণ এর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে সব ধরনের চর্মরোগ থেকে। ত্বকের যত্নে সরিষা তেল কিংবা অলিভওয়েল ব্যবহার করতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শীতকালীন সব ধরনের সবজি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে, প্রতিদিন ভিটামিন সি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রতিটি পরিবারের উচিত শীত আসার আগেই তার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তার বাড়তি যত্ন সম্পর্কে জেনে নেয়া। শীতের এই সময়টাতে বয়স্কদের কোনো রোগকে অবহেলা করা যাবে না, কারণ এর থেকে বড় কোনো রোগের জন্ম হয়ে যেতে পারে।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগের লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়