মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

অতিরিক্ত কোলেস্টরেল যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ
অনলাইন ডেস্ক

কোলেস্টেরল মানে হলো রক্তের চর্বি বা ফ্যাট। আমাদের দেহে খারাপ ও ভালো, দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে। আমাদের রক্তে অ্যালবুমিন, চিনি, ভিটামিন, মিনারেল, চর্বি ও খনিজ লবণ রয়েছে। এই উপাদানগুলোর মাত্রা অতিরিক্ত হলে বা কমে গেলে তা হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ।

কোলেস্টেরলের অপর নাম হলো লিপিড। রক্তের মধ্যে রয়েছে কয়েক ধরনের কোলেস্টেরল। কিছু ফ্যাট আমাদের দেহের জন্যে উপকারী। এ ধরনের কোলেস্টেরলের নাম হলো হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন বা এইচডিএল। আর রক্তের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের নাম হলো এলডিএল। ট্রাইগ্লিসারাইড আরও একটি খারাপ কোলেস্টেরলের নাম।

ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা রক্তে গেলে, তা রক্তনালির জন্য ক্ষতিকর। আবার খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা বেড়ে গেলে, সেটাও হয়ে উঠবে বিপজ্জনক। প্রতিটি কোলেস্টেরলের রয়েছে রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রা।

ভালো কোলেস্টেরল রক্তনালির পুষ্টি জোগায়, রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। আর খারাপ কোলেস্টেরলগুলো মাত্রায় বেড়ে গেলে রক্তনালির দেয়ালে জমে যায়। দিনের পর দিন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। কারণ, রক্তনালিতে চর্বি জমে থাকলে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। রক্ত পুরো দেহে খাবারের পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালিতে চর্বি জমে তৈরি হয় ব্লক। এ ব্লকের জন্য রক্তচাপ বাড়ে, দিনের পর দিন রক্তে অক্সিজেনের অভাবে মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়। হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক গতি তৈরি হয়।

কোনো মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি অনেক বেশি থাকে এবং তিনি যদি বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অনেক স্থূলকায় হন, অতিমাত্রায় তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে খুব দ্রুত তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পরেন।

রক্তে চর্বি বেড়ে যাওয়ার কারণ

১. শুরুতেই আসি বংশগত কারণে। যেমন রক্তের আত্মীয়স্বজনের কারও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস থাকলে আপনি সচেতন না হলে খুব দ্রুত এই অসুখগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।

২. বছরের পর বছর কারও যদি দৈহিক পরিশ্রমের অভাব থাকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়ে যারা উচ্চমাত্রার আমিষ, অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের রক্তনালিতে দ্রুত চর্বি জমে যায়।

৩. ধূমপান ও মাদক গ্রহণ রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। বছরের পর বছর রক্তে নিম্নমাত্রার অক্সিজেনের জন্য মস্তিষ্কেও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। পরিণামে মাথার মধ্যে খারাপ লাগে। মাথার ভেতরে থাকা অগণিত শিরা-উপশিরা ও স্নায়ুগুলো হয়ে পড়ে দুর্বল।

৪. দীর্ঘদিন চলতে থাকা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ বছর খেলে অনেক সময় বাড়তে পারে রক্তে চর্বির মাত্রা।

৫. অনেকের থাকে ফ্যাটি লিভার। মানে লিভার বা কলিজায় চর্বি জমে যায়। ফ্যাটি লিভারের রোগীদের সাধারণত রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে।

৬. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চর্বির মাত্রা সাধারণত বেশি থাকে। চেষ্টা করতে হবে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। দীর্ঘ বছর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে রক্তনালি দুর্বল হয়ে যায়। তখন দ্রুত রক্তনালিতে চর্বি জমে।

৭. যারা উদ্ভিজ্জ আমিষের পরিবর্তে প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ করেন বেশি এবং সেই তুলনায় দৈহিক পরিশ্রম না করেন, তাদের খুব বেশি মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়, তাদের রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়তে পারে।

সচেতন হতে যা করবেন

১. প্রতিবছর পুরো দেহের চেকআপ করাতে হবে। ছয় মাস পরপর সম্ভব না হলেও বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের পরীক্ষা করালে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে গেছে কি না, তা জানা যাবে।

২. নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে। প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্য ভালো। সামুদ্রিক মাছ, সবুজ-হলুদ শাকসবজি, গ্রিন টি, মৌসুমি ফল, তিতাজাতীয় খাবার ও মেথি রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়।

৩. নিয়মিত হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা ভীষণ জরুরি। যারা বৃদ্ধ, হাঁটাচলা করতে পারেন না, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করবেন না।

৪. কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, কিডনিতে ডায়ালাইসিস চলছে, এ ধরনের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। রক্তে চর্বির মাত্রা কমানোর জন্য একেকজনের একেক রকম ডোজের ওষুধ লাগে। কোলেস্টেরল খুব বেশি বেড়ে না গেলে খাবার নিয়ন্ত্রণসহ ওজন কমিয়ে আনতে পারলে, অনেকে সুস্থ থাকেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।

৫. নিয়মিত হাত-পায়ের আঙুলে ঝিঁঝিঁ ধরলে বা অবশ লাগলে, রাতে পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে, নিয়মিত মাথাব্যথা করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অধিকাংশ সময়ে বেড়ে থাকলে, হাত-পায়ের আঙুলে ঠিকভাবে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। তখন হাত-পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরা, অবশ লাগা, ব্যথা, হঠাৎ বৈদ্যুতিক শক লাগার মতো লক্ষণ হতে পারে।

৬. মাথা-ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ঘোরানোর সমস্যাও থাকতে পারে। অনেকের চোখের পাতার আশপাশে ব্রণের দানার মতো উঁচু হতে পারে। অনেকের হাত-পায়ের অনেক জায়গায় মাংসপেশি ছোট্ট কুণ্ডলীর মতো গোল হতে পারে। রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল জমে গেলে পরিণামে তৈরি হয় ব্লক। হৃৎপি-ের শিরা-উপশিরার মধ্যে ব্লক তৈরি করলে হার্ট অ্যাটাক হয়।

৭. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়