প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর কণ্ঠে দিনরাত্রি
ভাবতে গেলেই চমকে উঠি। সময় এক দ্রুতগামী ট্রেন! পলকেই চলে যাচ্ছে বহুদূর!! মনে হয়, এই তো সেদিন। অথচ তেরো বছর হয়ে গেছে। চাঁদপুর কণ্ঠে যোগ দিয়েছি একযুগ হয়েছে। প্রথমদিকে কাজটা ছিল দায়িত্ব। পরে কাজ হয়ে গেল ভালোবাসা। তাই কখন যে সময় উড়ে গেছে টের পাওয়া যায়নি।
শুরুতে চাঁদপুর কণ্ঠে লিখতাম। এরপর ২০১১ সালে চাঁসক ক্যাম্পাস-এর বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে কাজ করতাম। সম্ভবত একমাস পর যুক্ত হলো স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব। চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদানের প্রথম মাস থেকেই নিয়মিত সম্মানী পেয়েছি। সময়ে সময়ে আমি সংস্কৃতি অঙ্গন, প্রযুক্তি কণ্ঠ, শিক্ষাঙ্গন, সুচিন্তা, পাঠক ফোরামসহ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছি। চাঁদপুর কণ্ঠের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিভাগ পাঠক ফোরাম। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আমি এর বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। পাঠক ফোরামের ৭০০তম এবং ১০০০তম সংখ্যা পূর্তি আমরা উদযাপন করেছি। এটি চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের জন্যে অনেক আনন্দের, আমার জন্যেও।
পাঠক ফোরামে কাজ করাটা অনেক আনন্দের। কারণ নবীন লেখকদের জন্যে কিছু করার সুযোগ আছে। আমি নিজেও পাঠক ফোরামে নিয়মিত লিখতাম। এ বিভাগে চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠিত বহু লেখকের প্রথম লেখাটি ছাপা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে লেখক প্রতিভা বিকাশের আঁতুড়ঘর। চাঁদপুর কণ্ঠ লেখকবান্ধব পত্রিকা। সৃজনশীল মানুষদের আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। গুরুত্ব সহকারে প্রতিনিয়ত গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও কলাম ছাপা হয়। চাঁদপুর কণ্ঠে লিখেনি এমন লেখক সম্ভবত চাঁদপুরে কমই আছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ দায়িত্বশীল পত্রিকা। একযুগ ধরে দেখছি, অত্যন্ত যত্ন করে পত্রিকাটির প্রুফ, সেটাপ, নিউজ ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়। মানসম্মত বলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও চাঁদপুর কণ্ঠ পঠিত হয়। চাঁদপুর কণ্ঠে সবচেয়ে বড় সামাজিক সাফল্য বিতর্ক চর্চার প্রসারে কাজ করা। পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
আরেকটি বিষয় সত্য। চাঁদপুর কণ্ঠের পথচলায় প্রচুর অ-হিতাকাঙ্ক্ষী মানুষ রয়েছেন। কিন্তু যখন দেখি তারাও চাঁদপুর কণ্ঠের কাভারেজ চান, তখন মনে হয় চাঁদপুর কণ্ঠ সার্থক। চাঁদপুর কণ্ঠ হিতাকাঙ্ক্ষী ও অ-হিতাকাঙ্ক্ষী সবার লেখাই তার বুকে পরম যত্নে স্থান দেয়। এটি চাঁদপুর কণ্ঠের আদর্শ ও উদারতা।
চাঁদপুর কণ্ঠের সুনাম এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের শ্রম, ঘাম ও নিবেদন। বিশেষ করে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের জীবন ও জগৎ পত্রিকাটিকে ঘিরে। চাঁদপুর কণ্ঠ তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয়। তাঁর কারণে পত্রিকাটি আজও সযত্নে প্রকাশিত হয়। আমি সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি গিয়াসউদ্দিন মিলন, মির্জা জাকির, শহীদ পাটওয়ারী, এএইচএম আহসান উল্লাহ, বিমল চৌধুরী, সেলিম রেজা, নজরুল ইসলাম স্বপন, চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম, আবদুর রহমান গাজী, মুহম্মদ আলমগীর, জমির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, মানিক দাস, সোহাঈদ খান জিয়া প্রমুখকে। এছাড়া পেয়েছি মিজানুর রহমান রানা, মৃদুল রায় টিটু, উজ্জ্বল হোসাইন, জাহাঙ্গীর হোসেন, সাব্বির হোসেন, রিয়াজ আহমেদ, সুজন, কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন ও আলআমিন হোসাইনকে। অনেকে আজও চাঁদপুর কণ্ঠে আছে, অনেকে অন্যত্র কাজ করছেন। তাদের সবার প্রতি আমার অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা। বিগত দিনে যদি কোনো কাজে আমার ত্রুটি হয়ে থাকে, বা কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, সেজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।
২০১২-১৮ পর্যন্ত চাঁদপুর কণ্ঠে সকালে যেতাম, কখনও কখনও ফিরতাম রাত একটা দুটাতে। এর কারণ ছিল এনালগ পদ্ধতিতে পেজ সেটাপ। পেস্টার কেটে কেটে নিউজ বসাতেন। একাজ শুরুই হতো রাত বারোটার কাছাকাছি। সে কারণে বহু সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত কেটেছে চাঁদপুর কণ্ঠে। আমরা হাতে লিখে নিউজ জমা দিতাম। সেটি টাইপ হতো, তারপর প্রুফে যেত, একজন প্রুফ রিডার পড়তেন, কারেকশন হতো তিনবার, এরপর ট্রেসিং পেপারে প্রিন্ট হতো, তারপর সেগুলো সেটাপের জন্যে পেস্টিংয়ে যেতো। এখন সেটাপের কাজ কম্পিউটারে হয়। নিউজ কেউ হাতে লেখে না, মোবাইলে টাইপ করে। ইমেইলে আসে। আর পত্রিকা ছাপা হয় ঢাকায়। এখন বহু আগেই কাজ শেষ হয়ে যায়। চাঁদপুর কণ্ঠের এমন বিবর্তনের সাক্ষী আমরা।
এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লিখেছিলাম, চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব ভবন হোক। দাবিটি আবারও জানাই।
আমি ভালোবাসা থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যে কাজ করি। চাঁদপুর কণ্ঠ আরও সমৃদ্ধ হোক।
লেখক : মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চাঁদপুর কণ্ঠে যোগ দেন। পাঠক ফোরাম, সুচিন্তা ও শিক্ষাঙ্গন বিভাগের সম্পাদক।
সাহিত্যচর্চায় যুক্ত আছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ২৫টি।