বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

আমার লেখার অনুপ্রেরণা এবং শেখার গুরু চাঁদপুর কণ্ঠ

কবির হোসেন মিজি
আমার লেখার অনুপ্রেরণা এবং শেখার গুরু চাঁদপুর কণ্ঠ

চাঁদপুরের বহুল প্রচারিত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ--এ নামটি শুনলেই আমি যেনো কেমন দুর্বল হয়ে পড়ি। কী এক আন্তরিকতা, ভালোবাসা এবং গভীর সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়। কারণ, চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি সাহিত্যপাতা, সংস্কৃতি অঙ্গন, পাঠক ফোরাম, শিক্ষাঙ্গন, প্রবাসীকণ্ঠ, কৃষিকণ্ঠ, তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ, ইসলামী কণ্ঠ, নামাজের সময়সূচি, এইদিনে, সম্পাদকীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে পাঠক মহলে সমাদৃত। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি আমার অনেক ঋণ জমা পড়ে আছে। আমার সংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাবেক কর্মস্থল হিসেবে কণ্ঠ পরিবারের সাথে জড়িয়ে আছে নানান স্মৃতি। সাহিত্য চর্চায় আমার কবির হোসেন মিজি হয়ে ওঠা এবং সাংবাদিকতায় কিছু শিখতে পারা এই চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যেই হয়েছে। এজন্যে আমি বলবো, আমার লেখালেখির অনুপ্রেরণা এবং সাংবাদিকতায় কিছু শেখার গুরু হচ্ছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। তাইতো এই নামটির প্রতি এবং পত্রিকার পরিবারের প্রতি আমি অনেক দুর্বল।

আমি একটু স্পর্শকাতর মনের মানুষ হওয়ায় কয়েক বছর পূর্বে অভিমান করে চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে অব্যাহতি নিলেও, এখনো যেনো নিজেকে সেই আগের মতোই কণ্ঠ পরিবারের লোকই মনে হচ্ছে। বর্তমানে অন্য পত্রিকায় কাজ করলেও কণ্ঠ পরিবারের সকলের আন্তরিকতা, ভালোবাসাটা সেই আগের মতোই পেয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আমার অগ্রজপ্রতিম রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত, নির্বাহী সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মির্জা জাকির এবং বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাই এখনো মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংবাদ প্রসঙ্গে আমাকে ফোন করেন। অনেক সময় পত্রিকার অ্যাসাইনমেন্টের মতোই বিভিন্নস্থানে যাওয়ার কথা বলেন। এতে আমি ভীষণ খুশি হই। তাঁদের এমন আবদার-অধিকারে তখন আমার কাছে মনে হয় আমি যেনো তাঁদের পরিবারেরই একজন। তাঁরাও হয়তো আমার প্রতি সে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়েই আমাকে স্মরণ করে থাকেন। এজন্যে নিজেকে ধন্য মনে করি।

যাই হোক পাঠক, বলছিলাম আমার লেখার অনুপ্রেরণা এবং শেখার গুরু হচ্ছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। এই কথা বলার অর্থ হলো, আমার জীবনে প্রথম লেখালেখি শুরু হয় চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে। আজ থেকে প্রায় ৮/৯ বছর পূর্বে যখন চাঁদপুর কণ্ঠে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মযজ্ঞ শুরু করি, তখন সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে অনেক শব্দ এবং সংবাদের ধরণ ও উপস্থাপন বিষয়ে আমার তেমন একটা অভিজ্ঞতা ছিলো না। দিনের বেলায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ শেষে রাতে যখন প্রুফ রিডার হিসেবে সংবাদ পড়ার জন্যে মির্জা জাকির ভাইয়ের টেবিলের সামনে বসতাম, তখন প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও একটা সময় এই সংবাদ পড়া থেকেই ধীরে ধীরে সংবাদ লেখাটা শিখতে শুরু করলাম। আমি চাঁদপুর কণ্ঠে তিন বছর স্টাফ রিপোর্টার ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই তিনটি বছরে কখনো মির্জা জাকির ভাই, কখনো আহসান ভাই, কখনো বা শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাতের সাথে প্রুফ পড়েছি। যখন বা যেদিন এই প্রিয় মানুষ কাজী শাহাদাতের সাথে সংবাদ পড়তাম, তখন লক্ষ্য করেছি তিনি একেকটি সংবাদের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে কতবার যে প্রুফ দেখতেন! এমনও স্মৃতি মনে পড়ে, একদিন একটি লেখা সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু করে প্রুফ দেখতে দেখতে রাত দুটা বেজেছিলো। সেদিন অনেকটা বিরক্ত হয়ে মন খারাপ করলেও একটা বিষয় অনুভব করলাম যে, তিনিই সত্যিকারের সম্পাদকের যোগ্যতা রাখেন। এছাড়া যখন তিনি আমার লেখা কোনো সংবাদ এডিট করতেন তখন তিনি খুব সুন্দর মতো আমাকে বুঝিয়ে বলতেন যে, তোমার শব্দ এটি নয়, এটি এই শব্দ হবে। যেমন আমি কোনো একটি সংবাদে লিখেছিলাম সিএনজি দুর্ঘটনা। তিনি সেটা বুঝিয়ে বলেছিলেন, সিএনজি নয়। এটি হবে ‘সিএনজি অটোরিকশা’। কারণ সিএনজি হচ্ছে গ্যাস। আর অটোরিকশাটি গ্যাস চালিত। তাই শব্দটি হবে ‘সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনা’।

এ রকম অনেক শব্দ তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। এছাড়া কোনো কোনো সংবাদে যদি বাড়তি শব্দ ব্যবহার করতাম, সেটাও তিনি কেটে দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে বলতেন, এটি তোমার বাড়তি শব্দ। একই কথা দুবার দুভাবে লিখেছো। তোমার এই অংশ একটু কেটে দিলাম। এভাবেই একের পর এক তিনি আমাকে সংবাদ লেখার জন্যে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। এর বাইরেও সংবাদ প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাতের মাঝে অনেক নৈতিকতা খুঁজে পেয়েছি। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, একদিন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ঔষধের অনিয়ম নিয়ে একটি সংবাদ লিখেছিলাম। ওই সংবাদটি ছিলো তাঁরই কোনো এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। রাতে যখন প্রুফ দেখার জন্যে ওই সংবাদটি তাঁর হাতে গেলো, তখন তিনি আমাকে তাঁর কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, তুমি যার বিরুদ্ধে লিখেছো, সে কিন্তু আমার খুব কাছের একজন স্বজন হয়। তোমার সংবাদ বন্ধ হবে না। এটি প্রকাশ হবে। তাই তোমাকে জানিয়ে শুধুমাত্র একটি নাম কেটে দিলাম। অথচ ইচ্ছে করলে তিনি পুরো সংবাদটিই গায়েব করে দিতে পারতেন। আমি তাঁর পত্রিকার একজন স্টাফ রিপোর্টার মাত্র। এতে আমার কাছে অনুমতি নেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। এই যে তিনি আমাকে জানিয়ে যে কাজটুকু করেছেন, এটাই হচ্ছে নীতি-নৈতিকতা। সেদিন থেকে এই প্রিয় গুণী মানুষটির প্রতি আমার আরো অনেক বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়। এমনিভাবে চাঁদপুর কণ্ঠ এবং রোটারিয়ান কাজী শাহাদাতের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। তাইতো বলছি, সাংবাদিকতায় কিছু শেখার গুরু বা ওস্তাদ হচ্ছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

এই চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রয়েছে নানান অভিজ্ঞতা। চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদানের কয়েক মাস পর স্টাফ রিপোর্টারের পাশাপাশি আমাকে সংস্কৃতি অঙ্গনের দায়িত্ব দেয়া হলো। একদিন প্রধান সম্পাদক সাহেব আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, তোমাকে সংস্কৃতি অঙ্গনের দায়িত্ব দিতে চাই। তুমি কি পাতাটি ঠিক মতো চালাতে পারবে? তখন নিজের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে বললাম, জ্বি পারবো। তারপর থেকে একটানা তিনটি বছর বেশ ভালোভাবেই পাতাটি চালিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমার কাজে তিনিও সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনটি বছরে সংস্কৃতি অঙ্গনে চাঁদপুরের অনেক সংস্কৃতি কর্মীদের নিয়ে লিখেছি। তারপর একসময় নিজের অভিমানেই চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে অব্যাহতি নেই। অব্যাহতি নেয়ার প্রায় ৮/৯ বছর পার হয়ে গেলো। তবুও যেনো মনে হয় আমি এখনো কণ্ঠ পরিবারেই রয়েছি। খুব মিস করি পত্রিকার ‘সংস্কৃতি অঙ্গন’ পাতাটিকে। কারণ আমি পাতাটির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে খুব অল্প সময়ে ওই পাতাটি অনেক জনপ্রিয় করে তুলেছিলাম। আমি কণ্ঠ থেকে বিদায় নেয়ার পর সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যে কেনো জানি খুব মায়া হতো, এখনো মায়া হয়। যখন মাঝে মধ্যে সংস্কৃতি অঙ্গন চোখে পড়ে, তখন মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায়।

এবার আসি শিরোনামটির প্রথম কথায়। আমার সাহিত্য চর্চায় লেখালেখির ক্ষেত্রেও চাঁদপুর কণ্ঠের অনেক বেশি অবদান রয়েছে। বলতে গেলে পুরোটাই। কারণ চাঁদপুর কণ্ঠে লিখেই আমি ধীরে ধীরে চাঁদপুরের সাহিত্য অঙ্গনে ‘কবির হোসেন মিজি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছি।

চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি আমার প্রথম ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ‘পাঠক ফোরামে’র কারণে। ২০০০ সালের কয়েক বছর আগের কথা। আমি নিজের ভালো লাগা থেকে টুকটাক কবিতা লিখতাম ঠিকই, কিন্তু তা পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার স্বপ্ন ছিলো আকাশ ছোঁয়ার মতো। মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে চাঁদপুর কণ্ঠের নিয়মিত আয়োজন ‘পাঠক ফোরাম’ পাতাটি যখন চোখে পড়তো, তখন থেকে এই পাতায় লেখালেখি করার স্বপ্ন চোখে বাসা বাঁধি। প্রতি শনিবার নিয়মিত চোখ রাখতাম পাঠক ফোরাম বিভাগে। চাঁদপুর কণ্ঠের তৃতীয় পৃষ্ঠা জুড়ে বিভিন্ন লেখকের গল্প, কবিতা দেখে মুগ্ধ হতাম ভীষণ। সেই সাথে আমার লেখা গল্প-কবিতা প্রকাশ হওয়ার স্বপ্নটাও দারুণভাবে আচ্ছন্ন করতো। এই স্বপ্নটা আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ জোগাতে থাকে। আসলে আমি মনে করি, যে কোনো মানুষ কোনো বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখে লেগে থাকলে তা একদিন না একদিন কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হয়। যেমনিভাবে আমার লেখালেখির স্বপ্নটাও পূরণ হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে।

২০০১ সালে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরাম বিভাগে ‘নববর্ষের শুভেচ্ছা’ নামক আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে পাঠকফোরাম বিভাগে আজও চলছে নিয়মিত লেখালেখি। এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সুবাদে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার অর্জন করেছি। একই সাথে পাঠকফোরাম বিভাগটি থেকে লেখক স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছি লেখক সম্মাননাও। সেই ২০০০ সালে লেখালেখিতে আমাকে ক’জনই বা চিনতো। যদিও চাঁদপুরের অন্যান্য পত্রিকা, সাহিত্য ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে লিখতাম। মূলত চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরামের কারণেই চাঁদপুরের সাহিত্য অঙ্গনে ধীরে ধীরে আমাকে ‘কবির হোসেন মিজি’ নামে চেনা শুরু হয়। আমার সাহিত্য চর্চা এবং সাংবাদিকতা এই দুটি মিলেই আমি বলবো, আমার লেখার অনুপ্রেরণা এবং শেখার গুরু দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

যেমনিভাবে আলো ছড়ায় চাঁদ ও সূর্য, বয়ে যায় নদী, তেমনিভাবে বস্তনিষ্ঠ ও জনকল্যাণমূলক খবরের আলো ছড়িয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ প্রবহমান স্রোতের মতো এগিয়ে যাক আরো বহুদূর--এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক : গীতিকার ও লেখক; সাবেক স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়