প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর জেলায় সাঁতারের পর বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের প্রাধান্য ছিলো সারা বাংলাদেশে সবচে’ বেশি। আর সেই চাঁদপুরের উদীয়মান বাস্কেটবল খেলোয়াড় খুঁজতে হলে যেতে হবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ক্লাবগুলোতে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত যে ক’টি ক্লাব রয়েছে সেই ক্লাবগুলোর মধ্যে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট ছাড়া তেমন কোনো খেলা চোখে পড়ে না। এই ক্লাবগুলোতে বাস্কেটবল খেলোয়াড় খুঁজতে হলে অনেকটা টর্চলাইট নিয়ে খুঁজলেও ঠিকমতো পাওয়া যাবে না। আর জেলা শহরের যে ক’জন বর্তমান সময়ের বাস্কেটবল খেলোয়াড় রয়েছেন তারাও জেলা ক্রীড়া সংস্থার তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এ সমস্ত বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের দাবি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে যদি প্রতি বছর বাস্কেটবলের ক’টি টুর্নামেন্ট হতো তাহলেও জেলা পর্যায়ের উদীয়মান বাস্কেটবল খেলোয়াড় সৃষ্টি হতো। যারা অনুশীলন করছেন তাদের অভিযোগ, আমরা আমাদের অনুশীলনের জেলা ক্রীড়া সংস্থার তেমন কোনো সহযোগিতা পাই না।
বাস্কেটবল অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। গোলাকৃতি, কমলা রঙের বল দিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ উভয় প্রকার মাঠেই এই খেলা হয়ে থাকে। দলগত ক্রীড়া হিসেবে বাস্কেটবলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোর্টে উল্লম্বভাবে স্থাপিত একটি বাস্কেট বা ঝুড়িতে বল নিক্ষেপের মাধ্যমে পয়েন্ট সংগ্রহ করা। নির্দিষ্ট নিয়মকানুন অনুসরণ করে সর্বাধিক পয়েন্ট সংগ্রহকারী দল খেলায় বিজয়ী ঘোষিত হয়। সাধারণত ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করা হয়। কিন্তু খেলার সময় ৫ জন খেলোয়াড় কোর্টে ও ভেতর খেলতে পারে।
চাঁদপুর জেলা শহরে দুটি বাস্কেটবলের মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে যেই বাস্কেটবল মাঠটি রয়েছে সেটি অনেক পুরাতন মাঠ হিসেবে পরিচিত। এই মাঠটিতে আগে বিকেলে কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা নিয়মিত বাস্কেটবল খেলতো। কিন্তু গত ক’বছর ধরে সেই মাঠটি যেন পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে রয়েছে। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে অরুণ নন্দী সুইমিং পুলের পাশে একটি বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণ করা হয়। চাঁদপুর জেলার সাবেক বেশ ক’জন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক এ প্রতিবেদককে জানান, এ বাস্কেটবল মাঠটি নির্মাণের পর উদ্বোধনের সময় একজন সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের নামে এ মাঠটির নামকরণ করা হয়েছিলো।
চাঁদপুরের সাবেক খেলোয়াড় এবং আউটার স্টেডিয়ামে নিয়মিত আসা যাওয়া করেন এমন ক্রীড়ামোদী কয়েকজন জানান, ৩ থেকে ৪ বছর আগে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারির উপস্থিতিতেই একদিন দুপুরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসে এবং আলিকো ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত দিলীপ সরকার বাস্কেটবল মাঠের পাশের সেই ক্রীড়াবিদের নামফলকটি নিজেই উঠিয়ে আনেন। এরপর গত ক’বছরেও সেই ফলকটি আর কারো চোখে পড়েনি।
চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে গেলে দেখা যাবে যে, জেলা শহরের বিভিন্ন কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা নিজেদের উদ্যোগে বাস্কেটবল মাঠে মাঝে মাঝে অনুশীলন করে। তবে বৃষ্টি হলে তারা আর অনুশীলন করে না। বাস্কেটবল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনুশীলন করছেন শাহেদ, সোহান, সিহাব, সিয়াম, সিয়াম (২), সিয়াম (৩), কাউছার, আয়ান, সাদমান ও সাজিদ। তখন উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র বাস্কেটবল খেলোয়াড় ও কোচ ঐশী, রনি ও জাহিদ। তারা একটি বাস্কেটবল দিয়ে আরো ক’জন উদীয়মান বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলন করে যাচ্ছেন।
বর্তমান সময়ের বেশ ক’জন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সাথে এ প্রতিবেদক আলাপ করলে তারা বলেন, আমরা নিয়মিত মাঠে আসি বাস্কেটবল খেলতে। এর কারণ হচ্ছে আমরা চেষ্টা করি আমাদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্যে। আমরা চাই জেলাতে নিয়মিতভাবে বাস্কেটবলের প্রশিক্ষণসহ নিয়মিত জেলা ও উপজেলার বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে বাস্কেটবল লীগ ও টুর্নামেন্ট চালু রাখা হোক। খেলাধুলা মাঠে থাকলে এই সময়ে যারাই বাস্কেটবল খেলতে বা খেলা শিখতে আগ্রহী তারা আর খারাপ পথে পা বাড়াবে না। বর্তমানে শারীরিক গঠনের দিক থেকে বেশ ক’জন উদীয়মান বাস্কেটবল খেলোয়াড় দেখা যায়। এই সমস্ত বাস্কেটবল খেলোয়াড়কে নিয়ে যদি জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এ জেলা থেকে আশির দশকের ন্যায় অনেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে। যারা বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশনসহ দেশের যে কোনো স্থানে ভালোমানের বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে দর্শকদের মন জয় করতে পারবে।
চাঁদপুরের বাস্কেটবল মাঠে উপস্থিত বেশ ক’জন খেলোয়াড় জানান, জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃপক্ষ যখন তাদের কোনো খেলার সময় আসে তখন মাঝে মাঝে অল্প ক’দিনের জন্যে বাস্কেটবল খেলার আয়োজন করে। ৬ মাস পর পর যদি বাস্কেটবল খেলার আয়োজন করে তাহলে কি আর খেলোয়াড়দের মাঝে খেলা শেখার কোনো আগ্রহ থাকে? আমাদের এ বাস্কেটবল মাঠে অনুশীলনের জন্যে অনেক বল প্রয়োজন। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে সেই পরিমাণ বাস্কেটবল চাইলেও পাওয়া যায় না।