মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ৩৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জের আঞ্চলিক ক্রীড়াঙ্গনে আলো ছড়াচ্ছেন মুসা কালিমুল্লাহ

শামীম হাসান ॥
ফরিদগঞ্জের আঞ্চলিক ক্রীড়াঙ্গনে আলো ছড়াচ্ছেন মুসা কালিমুল্লাহ

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং রূপসা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রুস্তমপুর গ্রামের কিশোর মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বাবার মৃত্যুর পর গৃদকালিন্দিয়া বাজারে বাবার হাতে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করতে গিয়ে খেলাধুলায় খানিকটা ভাটা পড়ে।

তবুও শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও খেলাধুলার সাথেই আছেন তিনি। ফুটবলে ফরোয়ার্ড পজিশনে আর ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেন তিনি। তবে ক্রিকেটে বল হাতেই বেশি সফলতা পেয়েছেন । দুই বোন, এক ভাই ও মা সহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এখন তিনিই। যে কারণে খেলাধুলার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। ব্যবসায়িক কাজের ফাঁকে যখনই সুযোগ মিলে তখনই ছুটে যান খেলার মাঠে। ছোট বেলা থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটে সমান পারদর্শী। যতোই সময় গিয়েছে, নিজেকে আরো শক্তিশালী ও দলের দায়িত্বশীল খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বারংবার। প্রতিবার ছাড়িয়ে গেছেন নিজের পূর্বের অর্জনগুলোকে। শুধুমাত্র উপজেলার গণ্ডির মধ্যেই নয়, প্রতিভাবান এই তুখোড় খেলোয়াড় উপজেলা ও জেলার গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য জেলায় নিজের ক্রীড়া নৈপুণ্যের আলো ছড়িয়েছেন। খেলেছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় তারকা খেলোয়াড়দের সাথে। চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠের এই সংখ্যায় থাকছে ফরিদগঞ্জের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় মোঃ মুসা কালিমুল্লাহর ক্রীড়াঙ্গনের পথচলা ও তার ভাবনার কথাগুলো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কেমন আছেন?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং সকলের দোয়ায় ভালোই আছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কার হাত ধরে কিংবা কার অনুপ্রেরণায় ক্রীড়াঙ্গনে আসা হয়েছিলো?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণীতে থাকাকালীন এলাকার বড়োভাইদের সাথে খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলায় আসার ক্ষেত্রে কোনো একক ব্যক্তি কিংবা কারো অনুপ্রেরণা নয়, বরং নিজের প্রচেষ্টাতেই ক্রীড়াঙ্গনে এতোটা পথ হেঁটেছি এবং এখনো হাঁটছি। ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করতাম ভালো কিছু করার জন্যে। আর আমার এই চেষ্টায়ই আল্লাহর রহমতে আজকের এই অবস্থায় পৌঁছতে পেরেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : উপজেলার বাইরে কোন্ কোন্ জায়গায় খেলতে গিয়েছেন ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : উপজেলার বাইরেই মূলত আমার ক্রিকেট বেশি খেলা হয়েছে। দেশের ভোলা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এসব জেলার বিভিন্ন ছোট-বড়ো টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ হয়েছে। আর নিজ উপজেলার বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত উল্লেখযোগ্য টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে রূপসা গোল্ডকাপ, গৃদকালিন্দিয়া চেয়ারম্যান কাপ, পাইকপাড়া গোল্ডকাপসহ বেশ ক'টি টুর্নামেন্টে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখার সুযোগ হয়েছে। জেলার বাইরে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলায় বাংলাদেশের টপ ৩টা ক্রিকেট টুর্নামেন্টের একটিতে, নারায়ণগঞ্জে লাখ টাকার টুর্নামেন্ট ও ভোলা জেলায় একটি বড়ো টুর্নামেন্ট সহ আরো অনেক টুর্নামেন্ট খেলা হয়েছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ফুটবল নাকি ক্রিকেট কোনটিতে নিজেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : ফুটবল এবং ক্রিকেট দুটি খেলাকেই সমানভাবে উপভোগ করি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রীড়াঙ্গনে আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : ক্রীড়াঙ্গনে আমার সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি হলো মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা। আর শিরোপাকেন্দ্রিক বলতে গেলে দেশের কয়েকটি নামকরা টুর্নামেন্টে দলগত চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং ব্যক্তিগতভাবেও কয়েকটা টুর্নামেন্টে ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা নিয়ে কোনো মজার স্মৃতি আছে কিনা ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : মজার স্মৃতি তো অনেকই আছে। তবে তার মধ্যে একটি হলো, আমার খেলাধুলার শুরুর দিকে একটা টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলাম। তখন সেই টুর্নামেন্টের সেরা একটা টিমের বিপক্ষে আমাদের খেলা ছিলো। ওই টিমে ছিলো দেশের নামকরা কয়েকজন টেপটেনিস তারকা খেলোয়াড়। আমাদের টিমটি ছিলো স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে সম্পূর্ণ লোকাল টিম। ওই ম্যাচে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের দেখে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অনেকটা তুচ্ছ সুরে মজা করছিলো। ম্যাচ শুরু হলে আমরা তাদেরকে মাত্র ৬৭ রানে অলআউট করে দেই এবং পরে ব্যাটিং করতে গিয়ে আমরা সহজেই ম্যাচটি জিতে যাই। ওই ম্যাচে আমি বল হাতে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করি এবং ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হই। এরপরে ভিন্ন ম্যাচে আমি আরো অনেক ভালো পারফরম্যান্স করেছি। কিন্তু ওই ম্যাচটা আমার লাইফের সেরা ম্যাচ হয়ে থাকবে আমৃত্যু। এখন পর্যন্ত এটি ছিলো আমার খেলাধুলার জীবনে মনে রাখার মতো সবচাইতে মজার কোনো ঘটনা।

ক্রীড়াকণ্ঠ : দেশের আলোচিত কোনো তারকা খেলোয়াড়ের সাথে কি খেলার সুযোগ হয়েছিলো ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : টেপ টেনিসে তারকাখ্যাত অলরাউন্ডার নাজমুল, জ্যাক আরিফ, শুক্কুর, ইমরান, জহির, সাকলাইন, কমল ভাই, চাঁদপুরের সাজিদ ভাই, পারভেজ ভাই সহ দেশের আরো অনেক নাম করা প্লেয়ারদের সাথে খেলার সুযোগ হয়েছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : আব্বু যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন খেলাধুলা নিয়ে অনেক বড়ো স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু এখন আর তেমন স্বপ্ন দেখি না। তবে সুযোগ পেলেই খেলার মাঠে ছুটে যাই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ফুটবলে প্রিয় খেলোয়াড় কে এবং কেন ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : ফুটবলে আমার প্রিয় খেলোয়াড় মেসি। ওর খেলায় আলাদা একটা আর্ট আছে, মেসি একজন নিখুঁত ফুটবলার। ফুটবল খেলা বোঝার পর থেকেই আমি মেসি এবং আর্জেন্টিনার ফ্যান।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটে আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে এবং কেন ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : ক্রিকেটে আমার প্রিয় খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ওর ম্যাচ ফিনিশিং আর ম্যাচ জেতার যে ক্ষুধা এসব আমার বেশ ভালো লাগে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : দলীয় সমর্থনের ঊর্ধ্বে কোন্ ফুটবলার এবং কোন্ ক্রিকেটারের খেলা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : দলীয় সমর্থনের বাইরে ফুটবলে আমি নেইমারের খেলাটা বেশি উপভোগ করি। ক্রিকেটে কোহলি, বাবর আজম, বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ, তৌহিদ হৃদয়--এদের খেলা বেশ উপভোগ করি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ফরিদগঞ্জ উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের জন্যে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনগুলোর ক্রীড়া সংগঠকদের কোন্ কোন্ বিষয়ে কাজ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : ক্রীড়া সংগঠকদের উচিত নিজ এলাকা কিংবা নিজ ক্লাবগুলোতে বেশি বেশি খেলাধুলার আয়োজন করা। খেলাধুলা আয়োজনের মধ্য দিয়েই খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহিত করতে হবে। বর্তমানে ক্রমাগতভাবে আমাদের মাঝ থেকে খেলাধুলা উঠে যাচ্ছে বললেই চলে। যার কারণে অনেকেই বাজে আড্ডা কিংবা বিপথে চলে যাচ্ছে। খেলাধুলার আয়োজন কমে যাওয়ার কারণেই তারা মোবাইল কিংবা বাজে নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে। একটা সময় ছিলো যখন আমাদের পুরো ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ক্রিকেটে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি টুর্নামেন্টের আয়োজন হতো। সেখানে এখন ৩ থেকে ৪টা টুর্নামেন্ট হচ্ছে, তাও আবার নিয়মিত নয়। ফুটবলেও অনেক টুর্নামেন্ট হতো, কিন্তু সেটাও এখন আর হচ্ছে না। প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে এবং শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্যে বেশি বেশি খেলাধুলা ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করা দরকার।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ইন্টারনেটের এই যুগে শিশু-কিশোর খেলোয়াড়দের মাঠমুখী করে খেলায় ফেরাতে আপনার পক্ষ থেকে আহ্বান কী থাকবে ?

মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ : সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, সবাই মোবাইল ছেড়ে মাঠে ফিরে আসুন, একটা প্রজন্মকে বাঁচান। বেশি বেশি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হোক। তবেই শিশু-কিশোররা হয়তো ইন্টারনেটের আসক্তি ছেড়ে মাঠের খেলায় ফিরবে।

সেই সাথে ফরিদগঞ্জ এ. আর. হাই স্কুল মাঠ, গৃদকালিন্দিয়া, রূপসা, পাইকপাড়া, নয়ারহাট, প্রত্যাশী, গল্লাক সহ উপজেলার উল্লেখযোগ্য মাঠগুলো সংস্কার করে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। আর যেসব এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করার মাঠ নেই, সেসব জায়গায় মাঠ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। এভাবে যদি সারাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সংস্কার করা হয়, তবেই আমি আশা করি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে একদিন সারাবিশ্বের আরো বেশি নজর কেড়ে নিতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়