বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় ওসির অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ
  •   ভারত-মিয়ানমার থেকে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল কিনবে সরকার
  •   মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ ও কীটনাশক পাওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  •   মশার উপদ্রবে চাঁদপুর পৌরবাসী ॥ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
  •   শাহরাস্তিতে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মতলবের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সাফল্যগাথা

রেদওয়ান আহমেদ জাকির ॥
মতলবের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সাফল্যগাথা

আল-আমিন ক্রীড়া চক্র একটি অরাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সংগঠন। খেলাধুলা, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐক্য হলো এ সংগঠনের আদর্শ ও উদ্দেশ্য।

প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট : মতলব হাইস্কুলের বারান্দার পাশে আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত লোকজনের ছেলেরা ফুটবল খেলতো। পাশেই জাম্বুরা ও কাগজ পেঁচিয়ে হতদরিদ্র ও অবহেলিতরা ফুটবল খেলতো। প্রায় সময় ফুটবল নিয়ে দুদলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হতো। এতে স্থানীয় ক্রীড়ানুরাগী মোহাম্মদ আলী খোকনের খুব খারাপ লাগতো। পরে তিনি তাদেরকে ডাক দিয়ে একত্র করে কচি-কাঁচার মেলা থেকে একটি ফুটবল নিয়ে দেন খেলার জন্যে। এটা দিয়ে তারা ফুটবল খেলতো। সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা এ খেলাধুলা দেখে মোহাম্মদ আলী খোকনকে একটি আবেদন করতে বলেন। ওই সময় মোহাম্মদ আলী খোকন, মোঃ গোলাম রাব্বানী বুলু, মোঃ আক্তার হোসেন খান মোহন, শ্রী বিমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, গোলাম সারওয়ার কাদরী, মোঃ মনিরুজ্জামান খান টিপু ও মোঃ আনিছুর রহমান তপুসহ ৭জন মিলে সকলের সম্মতিক্রমে আল-আমিন ক্রীড়া চক্র নাম দিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।

আল-আমিন ক্রীড়া চক্র ১৯৭৯ সালে মতলব জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের ছোট মাঠে আত্মপ্রকাশ করে শিশুদের ক্লাব হিসেবে। প্রায় ৪ বছর স্কুলের সামনেই ক্লাবটির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মোহাম্মদ আলী খোকন, আখতার হোসেন মহন, মনিরুজ্জামান খান টিপু, গোলাম সারোয়ার কাদরী, আনিসুর রহমান তপু ও বিমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য আল আমিন ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন শিশুদের ফুটবল প্রশিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮২ সালে ঢাকার বাইরে প্রথম ফ্ল্যাড লাইট ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সকলের মন আকৃষ্ট করেন। ওই সময় প্রধান অতিথি হয়ে আসেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মেজর জেনারেল শামসুল হক। (বিটিভিতে ওই খেলার অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়)

মতলবে শিশুদের ফুটবল ক্লাব হিসেবে আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে ক্লাবকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে সকলের জন্যে ক্লাবের দ্বার উন্মুক্ত করা হয় এবং পূর্বের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তখন আহ্বায়ক হিসেবে মনিরুজ্জামান খান টিপু দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া সভাপতি হন, আর সাধারণ সম্পাদক হন মনিরুজ্জামান খান টিপু। ওই সময় চাঁদপুরের মধ্যে একটি সফল ক্লাব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে আল-আমিন ক্রীড়া চক্র।

১৯৮৩ সালর আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের দ্বৈত সংগঠন সংস্কার নাট্যগোষ্ঠীর নাটক 'দেবী সুলতানা' ও 'মা মাটি মানুষ' মঞ্চস্থ করে আপামর জনসাধারণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা লাভ করে। ১৯৮৫ সালে আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের মোঃ নুরুজ্জামান পিন্টু সৌভাগ্যবান খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)তে খেলার সুযোগ পান। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে ১৯৮৩ সালে দেলোয়ার হোসেন সাঁতারে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। জাতীয় পর্যায়ে ১৯৮৪ সালে বেবী ১০০ মিটার দৌড়ে গৌরবের সাথে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে মনিরুজ্জামান খান টিপু ক্লাবের সকলের মতামত নিয়ে এস.এম. সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল করে নিজে অব্যাহতি নেন।

১৯৮৫ সালে মতলবের বিভিন্ন এলাকায় আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের শাখা গঠিত হয়। শাখাগুলো ছিলো : দশপাড়া, নবকলস, উদ্দমদী, ভাঙ্গারপাড়, গাজীপুর এবং লক্ষ্মীপুর। ১৯৮৭ সালে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের তৃতীয় সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং এস. এম. সেলিম পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। গোলাম সারোয়ার কাদরী (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য), যিনি আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের নামটি উত্থাপন করেছিলেন এবং এখনো ওই নামেই চলছে। শুধু তাই নয়, ক্লাবের প্রথম মনোগ্রাম তাঁরই হাতে আঁকা। ২০০০ সালে মনিরুজ্জামান খান টিপুর প্রস্তাবে মূল মনোগ্রামের মাঝে সকলের মতামত নিয়ে জন্ম সনটি বসিয়ে দেন। ২০১৪ সালে সকলের মতামত নিয়ে আবারও মূল মনোগ্রামের কিছু পরিবর্তন আনেন মনিরুজ্জামান খান টিপু। মনোগ্রামে যোগ করেন মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর।

জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলে মোহামেডান, আবাহনী, ফকিরাপুল, আদমজী, বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব ও অগ্রণী ব্যাংক ক্লাবে আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়গণ নিয়মিত খেলে আসছিলো। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আবু সুফিয়ান, সুরুজ, আজাদ, মেজবাহ উদ্দিন মেজু, লিটন, সাগর, প্রিয়তোষসহ আরো অনেকে ঢাকার মাঠে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগে নৈপুণ্যের সাথে ফুটবল খেলে আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের নাম উজ্জ্বল করেন।

জেলা পর্যায়ে ব্যাডমিন্টনে আল- আমিন ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়গণ বহুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ১৯৯০ সালের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাপ চ্যাম্পিয়ন হন আনিসুর রহমান সুরুজ ও আক্তারুজ্জামান খান অপু। ব্যাডমিন্টনে আশির দশক থেকে নব্বইর দশক পর্যন্ত ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়গণ হলেন : মোঃ আলী খোকন, আনিসুর রহমান তপু, অঞ্জন রহমান অন্জু, মনিরুজ্জামান খান টিপু, আনিসুর রহমান সুরুজ,আক্তারুজ্জামান খান অপু ও মোজাহিদুল ইসলাম কিরণ।

আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের দাবা খেলোয়াড়েরা হলেন : মোহাম্মদ আলী খোকন ও দেওয়ান রেজাউল করিম। তাঁরা জেলা পর্যায়ে প্রতিভাবান দাবাড়ু হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।

মহসীন রেজা একজন সফল ক্রীড়া সম্পাদক। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আল-আমিন ক্রীড়া চক্র ফুটবল অঙ্গনে অনেক অবদান রেখেছে। এভাবে আল-আমিন ক্রীড়া চক্র ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আপামর জনসাধারণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা লাভ করে।

২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর এস. এম. সেলিমকে সভাপতি ও ফারুক আহমেদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের ২১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। মোঃ শিহাব উদ্দিন পাটওয়ারী আহ্বায়ক ও মোজাম্মেল হক খোকনকে সদস্য সচিব করে একটি শক্তিশালী যাকাত কমিটিও গঠন করা হয়, যেটি কাজ করছে সক্রিয়ভাবে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন আল-আমিন ক্রীড়া চক্র করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের কাজ করার জন্যে মতলব দক্ষিণ উপজেলার শামসুল হক মডেল মাদরাসায় স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যবহারের জন্যে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করে। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শহীদুল্লাহ মজুমদারের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ, ফ্লোর ওয়াশ, স্যানিটাইজার) হস্তান্তর করেন সংগঠনের সভাপতি এস এম সেলিম।

এ সময় মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ সিফাত উল্লাহ মজুমদার, আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি দেওয়ান সুরুজ, শফিকুল ইসলাম সাগর, গোলাম মোস্তফা কাদরী, শোয়েব সরকার, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন মিলন, প্রাক্তন সফল ক্রীড়া সম্পাদক মহসীন রেজা, সহ-সভাপতি শিহাব পাটোয়ারী, মনির হোসেন বেপারী, অর্থ সম্পাদক সোহাগ পাঠান, ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম কাদের মুকুল, প্রচার সম্পাদক রেদওয়ান আহমেদ জাকির, সদস্য মোহাম্মদ হোসেন, ইকবাল হোসেন, আক্তার হোসেন, প্রণয় সাহা, আক্তার হোসেন লিটন, মোঃ হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আল আমিন ক্রীড়া চক্র ২০২১ সালে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন আহমেদ স্মৃতি কেরাম প্রতিযোগিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া নাছির উদ্দিন স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ প্রতিযোগিতা, মোঃ বিল্লাল হোসেন সরকার স্মৃতি দাবা প্রতিযোগিতা নামে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। ওই বছরই আনন্দ ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে যাকাত প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতি বছর ইফতার সামগ্রী বিতরণও করে আসছে।

আল আমিন ক্রীড়া চক্রের ৩৫ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে ২০১৪ সালে ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক মরহুম ফ্লাঃ লেঃ এবি সিদ্দিক, শিক্ষানুরাগী ও রয়মনেন নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সমাজসেবক মরহুম এম. এ. করিম (কন্ট্রাক্টর), শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সালামত উল্যাহ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন প্রধান, শিশু সংগঠক মোঃ মাকসুদুল হক বাবলু, চিকিৎসাবিদ ড. এমদাদুল হক, নিভৃতচারী পৃষ্ঠপোষক নজুফা খাতুন, ক্রীড়া সংগঠক মরহুম বিল্লাল হোসেন, মরহুম নাছির উদ্দিন, মোঃ মনিরুজ্জামান খান টিপু, মহসিন রেজা, সঙ্গীত শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। একই সময়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

চলতি ২০২৪ সালে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সমাজসেবায় সারোয়ার হোসেন রোমান, ব্যাংকার আবুল বাশার, ক্রীড়ায় মোঃ আবু সালেহ, পৃষ্ঠপোষকতায় মোঃ মনিরুজ্জামান খান টিপু, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, লন্ডন শাখা আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবু, সঙ্গীত শিল্পী আতিক বাবুকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

আগামীতে আল-আমিন ক্রীড়া চক্র যাতে আরো নূতন নূতন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে সেজন্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যবৃন্দ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়