বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

নিয়মিত অনুশীলন চলছে সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমীর

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥
নিয়মিত অনুশীলন চলছে সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমীর

দেশের চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও নিয়মিত অনুশীলন চলছে সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমীর প্রশিক্ষণার্থীদের। একাডেমীর কর্মকর্তা ও ফুটবল কোচরা মনে করেন, এখানে যারা বিভিন্ন বয়সী ছেলে ও প্রমীলা ফুটবলার অনুশীলন করতে আসেন তারা যেনো বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে না গিয়ে মাঠে এসে অনুশীলনসহ নিয়মিত পড়াশোনা করেন, সেজন্যেই একাডেমীর পক্ষ থেকে মাঠে অনুশীলন চলছে। অনুশীলনে আসা একাডেমীর বিভিন্ন বয়সী ফুটবলারদের অভিভাবকরা মনে করছেন, আমাদের সন্তানরা বাসা ও খেলার মাঠ ছাড়া যেনো এ সময়ে অন্য কোথায় না যেতে পারে সেজন্যে আমরা নিজেরা দুপুরের পর থেকে তাদের সাথে মাঠে চলে আসি। এই একাডেমীতে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া ছাত্রসহ সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হবে এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। খেলার মাঠে কোচ ও কর্মকর্তাদের যে রকম শৃঙ্খলা থাকার দরকার, ঠিক তেমন নিয়মকানুন মেনেই কর্মকর্তা ও অনুশীলনকারীরা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরজমিনে শনিবার বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের একপাশে একাডেমীর প্রায় অর্ধশতাধিক ফুটবলার ও প্রমীলা ফুটবলার অনুশীলনে ব্যস্ত। তাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, বাফুফের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক ও আমিন মোল্লা।

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ফুটবলের অনুশীলন চলাকালে এ প্রতিবেদকের সাথে খেলা ও অনুশীলন নিয়ে আলাপ করেন অনুশীলনকারী খেলোয়াড়সহ কোচগণ। তাদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, প্রমীলা ফুটবলার আফরোজা বসবাস করেন চাঁদপুর শহরেই। গোলকিপার হিসেবে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরে। একাডেমীর ও জেলার প্রমীলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন বেশ ক’টি ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলাসহ ফুটবল লীগ। বঙ্গমাতা ফুটবলেও বেশ ক’বছর খেলেছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো গত ক’দিন তো দেশের পরিস্থিতি তেমন ভালো ছিলো না। আপনি কি মাঠে এসেছিলেন ফুটবল অনুশীলন করার জন্যে? তিনি বলেন, আমাদের একাডেমীর সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। গত সপ্তাহে শনিবার ও রোববার শুধু আমাদের একাডমী বন্ধ ছিলো। এছাড়া আমরা খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যে নিয়মিত একাডেমীতে এসেছি এবং অল্প পরিসরে হলেও আমরা অনুশীলন করে আবার বাসায় চলে গেছি।

প্রমীলা ফুটবলার স্বস্তিকা ঘোষ বসবাস করেন চাঁদপুর শহরের ট্রাকরোডস্থ বটতলা এলাকায়। পড়াশোনা করেন মাতৃপীঠ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে। বাসা থেকে স্কুল ও স্টেডিয়াম অনেকটা কাছাকাছি হওয়ার কারণে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে অবসর সময়ে নির্ধারিত সময়েই ছুটে আসেন একাডেমীতে ফুটবল অনুশীলন করার জন্যে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় গত ক’দিন তো মোবাইলের নেট ছিলো না কিংবা ইন্টারনেট ছিলো না। কেমন চলছে? সে জানায়, আমাদের নির্ধারিত যে সময় ছিলো, ওই সময়টাতে আমাদেরকে মাঠে আসতে হবেই। ওই সময়ে যদি কোনো খেলোয়াড়ের শরীর অসুস্থ থাকে তাহলে সে ছাড়া সবাই মাঠে চলে আসতে হবে। এখানে আমরা শুধু গত সপ্তাহের শনি ও রোববার ছাড়া প্রতিদিনই মাঠে এসেছি এবং আমরা সবাই একত্রেই অনুশীলনে যোগ দিয়েছি।

ফুটবলার রবিন থাকেন চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী এলাকাতে। পড়াশোনা করেন ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে। সে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানায়, যখন স্কুল ও মাদ্রাসাসহ অনেক কিছু বন্ধ, আমরা সেই সময়ে মাত্র ২ দিন ছাড়া নিয়মিত মাঠে এসেছি অনুশীলন করার জন্যে। আমাদের স্যারেরা অনুশীলন শেষে বড়োভাইদের (একাডেমীর ছাত্র) মাধ্যমে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।

একাডেমীতে নিয়মিত ফুটবল অনুশীলনে আসা ফুটবলার জুনায়েদ ও আব্দুল্লাহ আল মাগবিরের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তারা জানায়, আমরা প্রতিদিন স্কুল ছুটি হলে মাঠে চলে আসি। আমাদের সাথে কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণী ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রসহ মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আপু ও বড় ভাইরা অনুশীলন করেন। শুধু জেলা সদর নয়, উপজেলার অনেকেই আসেন আমাদের এই একাডেমীতে। আমরা নিয়মিত অনুশীলনে আসি খেলা শেখার জন্যে। দেশের সকল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও আমরা কোচদের বলে আমাদের অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে আমরা যে নিয়মিত অনুশীলন করি, এর পাশাপাশি জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে যদি বিভিন্ন বয়সী ফুটবলারদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো তাহলে এ জেলা থেকে অনেক ফুটবলারই সৃষ্টি হতো এবং চাঁদপুর শহরে ফুটবল প্রেমীদের সংখ্যা বেড়ে যেতো।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি সাবেক ফুটবলার। মাঠকে এবং খেলোয়াড়দেরকেই আমি ভালোবাসি। বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, তা থেকে খেলোয়াড়দেরকে দূরে রাখার জন্যেই আমরা নিয়মিত মাঠে অনুশীলন রেখেছি। এ সমস্ত খেলোয়াড় যাতে করে রাজনীতি ও আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে পারে সেজন্যে তাদেরকে নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়েছি। আর অনুশীলন চলাকালে তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্যে মাঠের বাইরে অভিভাবকরা উপস্থিত থাকেন।

ফুটবল কোচ ও সাবেক গোলকিপার আমিন মোল্লার সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতির মাঝে যেনো এ সমস্ত ফুটবলার বিভিন্ন স্থানে চলে না যায় সেজন্যে তাদেরকে নিয়ে নিয়মিত প্র্যাকটিসের আয়োজন করেছি। আমরাও মাঠে এসেছি এবং ফুটবলে অনুশীলনকারী ফুটবলার ও প্রমীলা ফুটবলারগণ মাঠে এসে নিয়মিত অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন। তারা যেনো ভালো ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্যে সকলের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়