প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগের সেমি-ফাইনালের খেলা শেষ হয়েছে। গত শনিবার ও রোববার লীগের দুটি সেমি-ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ বছর পর শুরু হওয়া এ লীগের ফাইনালে উঠেছে টিম ডাকাতিয়া ও শেখ কামাল স্পোর্টস্ একাডেমী রেড (সিনিয়র) দল। লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমান। লীগে অংশ নেয় জেলার ২টি একাডেমীর দলসহ শাহরাস্তি উপজেলার ১টি দল।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় লীগের উদ্বোধন করা হয় ২৫ নভেম্বর সকালে। লীগের খেলাগুলো পরিচালনা করা হয় ২০ ওভারে। দ্রুত খেলাগুলো পরিচালনার জন্যে প্রথম রাউন্ডের খেলায় আয়োজকরা একই দিনে ২টি করে খেলা চালিয়েছেন। এতে করে ক্রিকেটার সৃষ্টি না হলেও আয়োজকরা নাম মাত্র যে লীগ আয়োজন করেছে, সেটা হয়তো তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে। লীগের বেশ ক’টি দলে দেখা গেছে এ জেলার সন্তান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার বাইরে রয়েছেন, তাদেরকে দিয়েও জেলার খেলোয়াড় হিসেবে খেলিয়েছে কিছু দল। লীগের ফিকশ্চার অনুযায়ী আজ ৫ ডিসেম্বর লীগের ফাইনাল হওয়ার কথা ছিলো।
২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগের ফাইনালে ওঠা টিম ডাকাতিয়া প্রথম রাউন্ডের ৩টি ম্যাচসহ সেমি-ফাইনালে জয়লাভ করে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। টিম ডাকাতিয়া শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমীর সাথে ১০১ রানে জয় লাভ করে। দলটি ২য় খেলায় মাতৃছায়া চাঁদপুর ক্রিকেটার্সের সাথে ৭ উইকেটে এবং প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে শেখ কামাল স্পোর্টস্ একাডেমী গ্রীনের সাথে ৩ উইকেটে জয়লাভ করে সেমি-ফাইনালে উঠে। শনিবার দুপুরে সেমি-ফাইনালে চাঁদপুর ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের সাথে ৯ উইকেটে জয় পেয়ে ফাইনালে উঠে।
অপরদিকে শেখ কামাল স্পোর্টস্ একাডেমী রেড দলটি প্রথম খেলায় অঙ্গীকার ক্রীড়া চক্রের সাথে ১৩৪ রানে, ২য় খেলায় চাঁদপুর ক্রিকেট কোচিং সেন্টার জুনিয়রের সাথে ১০৯ রানে এবং প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমী ব্লুজের সাথে ৪০ রানে জয়ী হয়ে সেমি-ফাইনালে খেলার যোগত্য অর্জন করে। লীগের ২য় সেমি-ফাইনালে ৩ ডিসেম্বর শেখ কামাল স্পোর্টস্ একাডেমী গ্রীন (জুনিয়র) দলকে ১৫ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে দলটি।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন ক্রিকেটারের সাথে আলাপকালে জানা যায় যে, এবারের লীগে ফাইনালে ওঠা দুটি দলই জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলতে পারবে। এছাড়া দল দুটি পরবর্তীতে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্যে আবেদন করতে পারবে। যদিও অনেক বছর পর শুরু হওয়া এ লীগটি হয়েছে মূলত জেলা শহরের দুটি একাডেমীকে ঘিরে। তবে জেলার সাধারণ ক্রিকেটাররা জানান যে, সমস্ত ক্রিকেটার অনেক দলের হয়ে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেন। তাদের দাবি, লীগ কমিটির টেকনিকাল উপ-কমিটি অনেকটা দলীয় হওয়ার কারণে সাধারণ মানের অনেক ক্রিকেটার ভয়ে কিছু বলতে পারেন নি। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের কারণে এ জেলার অনেক উদীয়মান ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পায়নি।
ফাইনাল নিয়ে ক্রিকেট কোচ এইচএম বাবুর সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, ভালো দুটি দলই ফাইনালে উঠেছে। ফাইনালে যে দল ভালো খেলতে পারবে, সেই দলই এবারের লীগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। দলগুলোর অনেক ক্রিকেটারই এবার লীগ হওয়ার কারণে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। নিয়মিত ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলে এভাবে অনেক ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাবে এবং ক্রিকেটার সৃষ্টি হবে।
জেলা ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ ও ক্রিকেটার ফজলে রাব্বির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ফাইনালে ওঠা দুটি দলই প্রথম রাউন্ডে ভালো খেলা উপহার দিয়েছে। দুটি দলের বেশ ক'জন ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা এবারের লীগে কোনো কোনো ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন; কিছু ব্যাটসম্যান দ্রুত হাফসেঞ্চুরীও করেছেন। সাদা বলে রঙ্গিন ড্রেসে ক্রিকেটারগণ মাঠে খেলতে নেমেছিলেন। যে ক’দিন খেলা হয়েছে, প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী ক্রিকেটার সহ ক্রীড়া সংগঠকরা মাঠে উপস্থিত ছিলেন। নিয়মিত খেলাধুলা মাঠে গড়ালে আমরাও মাঠে খেলতে পারবো।
স্টেডিয়ামে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগের খেলা দেখতে আসা বেশ ক'জন ক্রীড়ামোদী দর্শক এ প্রতিবেদককে বলেন, এবারের লীগটি নিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আয়োজক হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি। যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে লীগের ব্যয়ের বিষয়ে অনেকটা এড়াতে কোনো ক্রীড়া সংগঠকের দ্বারস্থ হয়েছে। আর লীগটিতে যে ৮টি দল রাখা হয়েছে, তার মধ্যে জেলা শহরের দুটি একাডেমীর সরাসরি ৪টি দল সহ আরো ৩টি দল ছিলো তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় যদি নিয়মিত ক্রিকেট লীগ চালু করা হতো, তাহলে ক্রিকেট লীগগুলো অনেকটা সিন্ডিকেট মুক্ত থাকতো। ১৪টি ম্যাচে যেই সমস্ত ক্রিকেটার অংশ নিয়েছেন, তাদের নাম অনুযায়ী একাডেমিগুলোতে খোঁজ করলে অনেক ক্রিকেটারকে পাওয়া যাবে না।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ফুটবল ও ক্রিকেট সহ বিভিন্ন ইভেন্টের টুর্নামেন্ট কিংবা লীগ চালু করা হয় মাঝে মাঝে। এমনও দেখা যায়, ফুটবলের সিজনে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের সিজনে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে যখনই বৃষ্টির সময় শুরু হয়, তখনই দেখা যায় ক্রিকেট লীগের খেলার সময়সূচি তৈরি করছে তারা। প্রতিটি জেলায় এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বাৎসরিক খেলাধুলার সূচি আগে প্রকাশ করা হলেও অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হয় চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। একবার যদি খেলাধুলার আয়োজন করা হয়, তাহলে সেটা কি ওই বছরেই শেষ হবে নাকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে দলগুলোর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের--তার উত্তর জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে চাইলেও পাওয়া যায় না। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে অংশ নেয়া দলগুলোকে প্রতিবাদও করতে দেখা যায় না। এই রকম ভাবে যদি আগামীতে খেলাধুলা পরিচালনা করা হয়, তাহলে নামেই লীগ ও টুর্নামেন্ট হবে, কিন্তু কোনো খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে না। হয়তো এতে করে বেশ ক'জনের পকেট ভারী হলেও ইলিশ নগরীর এ জেলাতে ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরির অভাবটি থেকেই যাবে।
ফাইনাল নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, জাহিদুল ইসলাম রোমানের সাথে আলাপ করে ফাইনালের তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।