প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় সাবেক সাঁতারু আলম খান মঞ্জু
সাঁতারু তৈরি করতে হলে অরুণ নন্দী সুইমিংপুলটি বাঁচাতে হবে
চাঁদপুর সদর উপজেলার টেকনিক্যাল স্কুল (ফিশারী গেইট) এলাকার স্থানীয় স্কুল ও পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে ছোটকাল থেকেই সাঁতার, ফুটবল, ভলিবল ও ক্রিকেট নিয়মিত খেলতেন। প্রাইমারী জীবন থেকে শুরু করে কলেজ জীবন পর্যন্ত সাঁতারের বিভিন্ন স্টাইলের প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত, দলভিত্তিকের প্রথম পুরস্কার সহ ভলিবল এবং ক্রিকেটে নিজ এলাকার হাইস্কুল থেকে নিজ জেলা, জেলা থেকে বিভাগীয় এবং বিভাগীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়েও খেলেছেন। বর্তমানে নিজ জন্মস্থান টেকনিক্যাল খান বাড়ি ও এলাকার মানুষজনদের বিভিন্ন সহযোগিতা সহ বিপদ-আপদেও পাশে থাকছেন। একজন আইনজীবী হিসেবেও চাঁদপুরে সুনামের সাথে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন।
তিনি হলেন চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (জয়েন্ট সেক্রেটারী) অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু। তার বাবার নাম মরহুম আব্দুস ছাত্তার খান ও মায়ের নাম নূরজাহান বেগম। ৬ ভাই, ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। আলম খান মঞ্জুর স্ত্রী আয়েশা বেগম গৃহিণী। তার ২ ছেলে, ১ মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে আব্দুল্লাহ ও মেয়ে মারিয়াম হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তিনি শহরের ষোলঘর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি গভঃ টেকনিক্যাল হাইস্কুলে। এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। তিনি এলএলবি (অনার্স) ও মাস্টার্স করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০৯ সালে এলএলবি পাস করে ২০১১ সালের ৩ মার্চ চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি চাঁদপুর লিটল স্টার ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারী, চাঁদপুর যুব আলোড়ন সংঘের সভাপতি, ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নিটল মটরস (টাটা), আরবি এগ্রো লিমিটেড, চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আইন উপদেষ্টা সহ চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের সিভিল কমিশনার (প্যানেল-১)-এর দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্রীড়াকণ্ঠের এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন সাঁতার সহ বিভিন্ন খেলাধুলার বিষয়। পাঠকদের সুবিধার জন্য তার বক্তব্যগুলো হুবহ তুলে ধরা হলো:-
ক্রীড়াকণ্ঠ : আচ্ছালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : ওয়ালাইকুম আচ্ছালাম। জ্বি, আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি খেলাধুলার সাথে কবে থেকে জড়িয়ে পড়েন?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমি ষোলঘর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন সময় খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমি দৌঁড়, সাঁতার, রিলে রেইস সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। আমি বেশ ক’টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থানের পুরস্কার পাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : প্রাইমারি স্কুলে পড়াবস্থায় বিভাগীয় পযার্য়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় স্কুলের হয়ে কুমিল্লায় বিভাগীয় আন্তঃজেলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। সেই প্রতিযোগিতায় আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং দলগতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : টেকনিক্যাল হাইস্কুলে পড়াবস্থায় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াবস্থায় আন্তঃজেলা স্কুল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। আমি মুক্ত সাঁতার, বুক সাঁতার, চিৎ সাঁতার, প্রজাপতি, ফ্রি স্টাইলে অংশ নিয়ে গ্রুপে, ব্যক্তিগত ও এককে প্রথম স্থান সহ চ্যাম্পিয়ন হই। আমি বেশিরভাগ সময়ই খেলাধুলায় টেকনিক্যাল স্কুলের পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। হাইস্কুলে পড়াবস্থায় চাঁদপুর টেকনিক্যাল হাইস্কুলের হয়ে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেই। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাঁতারে ব্যক্তিগতভাবে সিলভার পদক লাভ করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়া অবস্থায়?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমি কলেজের হয়ে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে সাঁতারে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। আমি কলেজে পড়াবস্থায় নিয়মিত শেরে বাংলা হোস্টেলের পুকুরে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নিতাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি অন্যান্য খেলাধুলায়?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমি হাইস্কুলের পক্ষ হয়ে আন্তঃস্কুল ফুটবল, ভলিবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। স্কুল ক্রিকেটে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নেই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরে সাঁতারু তৈরি করার জন্যে কী উদ্যোগ নেয়া দরকার?
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : আমাদের চাঁদপুরের গর্ব ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা অরুন নন্দী, সাবেক সাঁতারু আঃ মালেক, বাদশা, সানাউল্লাহ খান সহ অনেক সাঁতারুই। তাদের সাঁতারের কারণেই আমাদের চাঁদপুর জেলাকে দেশ-বিদেশের মানুষ জেনেছে। চাঁদপুর জেলা হচ্ছে নদীমাতৃক এলাকা। আমাদের চাঁদপুর জেলার কৃতী সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত অরুণ নন্দী তাঁর জীবদ্দশায় চাঁদপুরের উদীয়মান সাঁতারু ও সাঁতার না জানাদেরকে সাঁতার শেখানোর জন্যে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে গিয়ে চাঁদপুরে একটি সুইমিং পুল বানিয়েছেন। তাঁর নামেই সে সুইমিংপুলটির নামকরণ করা হয়েছিলো। কিন্তু প্রয়াত বিশ্বখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার নামে করা এ সুইমিং পুলটির এখন করুণ হাল। বাংলাদেশে সাঁতার বলতে বোঝাতো চাঁদপুরকে। আর চাঁদপুরের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে এবং সাঁতারু তৈরি করতে হলে অরুণ নন্দী সুইমিংপুলটি বাঁচাতে হবে। যারা পুরানো সাঁতারু তাদেরকে নিয়ে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কমিটি গঠন করে সাঁতারের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা মনে করি, আমি সহ যারাই পুরানো সাঁতারু আছি, আমাদেরকে যদি চাঁদপুরের সাঁতারের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে ডাকা হয়, আমরা সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : উদীয়মান সাঁতারু ও অন্য খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : উদীয়মান সাঁতারুদের মনে রাখতে হবে, সাঁতার এ দেশের জনপ্রিয় একটি খেলা। এ খেলার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড়ের পুরো শরীর চর্চা হয়ে যায়। সাঁতার সহ অন্যান্য খেলাধুলার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। খেলোয়াড়দের লক্ষ্য থাকতে হবে আমাকে ভালো কিছু করতে হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখায়ও চ্যালেঞ্জিং মনে রাখতে হবে। সকলকেই ভালো স্বপ্ন নিয়ে এগুতে হবে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুশীলন সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অ্যাডঃ আলম খান মঞ্জু : জ্বি আপনাকে ও আপনার পত্রিকার সকলের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। সাথে সাথে আমার সকল শ্রদ্ধাভাজন ও শুভাকাক্সক্ষীর প্রতি রইলো ইংরেজি নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা।