প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শতবছর পার করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গণি মডেল হাই স্কুল । শনিবার ( ১৬ এপ্রিল ) চাঁদপুর স্টেডিয়ামে দাপটের সাথে খেলে স্কুলটি এ সাফল্য অর্জন করে। জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে স্কুলটি বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে যদি দলের খেলোয়াড়রা ভালো খেলা উপহার দিতে পারেন এবং গ্রুপ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পায় তাহলে জাতীয় পর্যায়ের খেলার সুযোগ পাবেন।
এ চ্যাম্পিয়ন দলটি পবিত্র রমজান মাসের মধ্যে প্রথম রাউন্ডে ৩টি স্কুলের সাথে এবং ফাইনালে একটি ম্যাচ সহ ৪টি ম্যাচ খেলে। এ ম্যাচগুলোতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষককে দলের সাথে তেমন দেখা যায়নি। ক্রীড়া শিক্ষক বাদল ফাইনালের আগে দলের খেলোয়াড়দের খোঁজখবর ঠিকমতো নেননি বলেও দলের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। ফাইনাল খেলায় দিনের শেষ সময়ে তাকে স্টেডিয়ামের গ্যালারির এক কোণে বসে থাকতে দেখা গেলেও খেলা চলাকালীন খেলোয়াড়দের খোঁজ-খবর নিতে দেখা যায়নি। খেলা শেষ হওয়ার পর খেলোয়াড়দের গ্রুপ ছবি তোলার সময় দেখা গেছে যে, তিনি এগিয়ে এসেছেন সে ছবিতে থাকার জন্যে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় চাঁদপুর জেলা শহরের ৪টি স্কুল নিয়ে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেয়া দলগুলো ছিলো-- পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা (এমএইচ) উচ্চ বিদ্যালয়, আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ, বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ ও গণি মডেল হাই স্কুল।
জানা গেছে, ভালো মানের ক্রিকেটার ও ভালো স্কুলকে প্রাধান্য দিতেই এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে আয়োজকরা। এ টুর্নামেন্টে পাল্টে ফেলা হয়েছে আগের লোগো। বেড়েছে অংশগ্রহণকারী স্কুলের সংখ্যা। ২০২০ সালে করোনার জন্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এ টুর্নামেন্ট।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ৯ এপ্রিল থেকে এ টুর্নামেন্টের খেলাগুলো শুরু হয়। ৫০ ওভারের এ ম্যাচগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা সাদা ড্রেসে খেলেছেন।
এ টুর্নামেন্টে এবার সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার খুদে ক্রিকেটার অংশ নিচ্ছেন। অংশ নিয়েছে চাঁদপুর জেলার ৪টি স্কুল সহ সারাদেশের ৩৪৮টি স্কুল। এখান থেকে ক্রিকেটারগণ প্রথমে জেলা, পরবর্তীতে বিভাগীয় এবং এরপরে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবে।
এই টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো স্কুলের ৫ জন ক্রিকেটার অংশ নেয়া দলগুলোর হয়ে খেলতে পারবে। সে অনুযায়ী জেলা পর্যায়ের খেলাগুলোতে তাদের খেলতে দেখা গেছে। এই টুর্নামেন্টে যে সমস্ত ক্রিকেটার ভালো করবেন তাদেরকে পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ করে দিবেন আয়োজকরা। এ টুর্নামেন্টে চাঁদপুর জেলার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন গণি স্কুল দলটি ১০ এপ্রিল তাদের প্রথম ম্যাচটিতে অংশ নেয় পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা (এমএইচ) উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে এবং ২১৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে। গণি স্কুল প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান করে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে মুশফিক হাসান আয়না ৫৪, মাহমুদুল হাসান ও শফিকুল ৩১ রান করেন। এমএইচ হাই স্কুলের পক্ষে বল হাতে সাফি ১০ ওভারে ২ মেডেন সহ ২৯ রানের বিনিময়ে ৪ টি উইকেট নেন। এমএইচ হাই স্কুল ২৫৭ রানের জয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে। তারা ১৪ ওভার ৪ বলে ৩৯ রানেই সবাই আউট হয়ে যান। গণি স্কুলের পক্ষে বল হাতে সালমান জাহান ৩ ওভার ৪ বলে ২০ রানে ৫ টি ও শান্ত ৭ ওভারে ২ মেডেন সহ ১১ রানে ৪ টি উইকেট নেন।
সোমবার ( ১১ এপ্রিল ) গণি মডেল হাই স্কুলের প্রতিপক্ষ ছিলো বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ। টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় গণি স্কুল। তারা ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৮ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে সালমান জাহান ৯০ বলে ৬৬ রান এবং মুশফিক হাসান ৭০ বলে ৪২ ও মোঃ শান্ত ৪২ বলে ৪৫ রান করেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাত্র ২৩.২ ওভার ব্যাট করে ৮৫ রান করে অল আউট হয়ে যায়। গণি স্কুলের পক্ষে বল হাতে সালমান জাহান ৮ ওভার ৩ বলে ২৮ রানে ৫টি উইকেট লাভ করেন। গণি স্কুল ১৬৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ১৪ এপ্রিল গণি স্কুল এবং আল-আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ পরস্পরের মুখোমুখি হয়। টসে জিতে গণি স্কুল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৪৮ ওভার ১বলে ১৮৫ রান করে সবাই আউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে সালমান জাহান ৬১ বলে ৩৬ এবং সিয়াম ৪২ বলে ২৯ রান করেন। আল আমিন একাডেমীর পক্ষে বল হাতে আল আমিন ১৫ রানে ৩ এবং ইলিয়াস ৩৩ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন। আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ ১৮৬ রানের জয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে। তারা ৪৯ ওভার ২ বলে ১৪৫ রানে সবাই আউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে ইনজামাম ২১ এবং তানভীর ২০ রান করেন। বল হাতে গণি স্কুলের সালমান জাহান ৩৪ রানে ৪ এবং ইশহাত ২৩ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন। গণি স্কুল ৪০ রানে জয়লাভ করে।
শনিবার ( ১৬ এপ্রিল ) ফাইনাল খেলায় গণি স্কুল টসে জয়লাভ করে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪৯ ওভার ১ বলে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান করে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে মুশফিক হাসান অপরাজিত ৯৫ ও মাহমুদুল ৪৭ রান করেন। বল হাতে আল আমিন একাডেমির ইলিয়াস ২৯ রানে ৩টি ও আলী ৩১ রানে ৩টি উইকেট লাভ করেন।
আল আমিন একাডেমি ২২৮ রানের জয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে। তারা ৪৩ ওভারে ১৩৪ রানের বিনিময়ে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ফেলে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে ইনজামাম ৭২ বলে ৪২ এবং তানভীর ৩০ বলে ১৭ রান করেন। গণি স্কুলের পক্ষে বল হাতে মাহমুদুল হাসান ২২ রানে ৪টি ও ইশহাত ২৩ রানে ২টি উইকেট লাভ করেন। গণি স্কুল ৯৩ রানে জয়লাভ করে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা আব্বাসউদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা খেলাধুলার ব্যাপারে ছাত্রদের অনেক উৎসাহ দিয়ে থাকি। বিভাগীয় পর্যায়ে যাতে আমরা ভালো করতে পারি এ জন্যে সকলের দোয়া চাই।
দলের প্রধান কোচ পলাশ কুমার সোম এ প্রতিবেদককে বলেন, সহযোগিতা পেলে দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে আরো ভালো কিছু করা যাবে। দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ই নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলনের সাথে জড়িত রয়েছে। এরা যদি এদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে আশা করি চাঁদপুরের জন্যে ভালো কিছু করতে পারবো।
প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী খেলোয়াড়রা হলন--গণি মডেল হাই স্কুল : সালমান জাহান, আয়ান হোসেন, আরমান, নোমান, সিয়াম, আপন, সীমান্ত, ইয়াসিন, রবীন, মিনহাজ, অমর, নিলয়, সফিক, হামিদুর, সঞ্জিত ও শিহাব। কোচণ্ডপলাশ কুমার সোম। সহকারী কোচ-হাছান।