প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় ক্রিকেটার ফজলে রাব্বি
জেলায় ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু করতে হবে
স্কুল ক্রিকেট খেলার মাধ্যমেই তার যাত্রা হয়েছিলো চাঁদপুর স্টেডিয়ামে। স্কুল ক্রিকেট খেলা দিয়ে যে তার ক্রিকেটে যাত্রা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই এখনও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা এবং বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের খেলায় ভালো পারফরমেন্স করার কারণে বিভাগীয় পর্যায়ে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ বয়সভিত্তিক বিভাগীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। জেলার ক্রিকেট কোচ শামিম ফারুকীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলনও করেছেন বেশ কিছুদিন। বর্তমানে চাঁদপুর শেখ কামাল একাডেমীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে খেলাধুলার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন। তিনি হলেন ক্রিকেটার মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি। তার বাবার নাম মরহুম ছিদ্দিকুর রহমান (চাঁদপুর শহরে ছিদ্দিক বেকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন)। তার মায়ের নাম তাসলিমা বেগম। ২ ভাইয়ের মধ্যে দুজনই ক্রিকেট খেলার সাথে জড়িত রয়েছেন। আর ২ বোন গৃহিণী। তাদের বসবাস চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোড এলাকায়। তিনি চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। সেখানে তিনি বতর্মানে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি ডান হাতে ব্যাটিংসহ অফ স্পিন বোলিং করে থাকেন। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি পরিচিত ক্রীড়াঙ্গনে। ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু থেকে বতর্মান সময় পর্যন্ত। পাঠকদের সুবিধার জন্যে তার কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো।
|আরো খবর
ক্রীড়াকণ্ঠ : আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
ফজলে রাব্বি : জি¦ ওয়ালাইকুম আস্সালাম। বিজয়ের মাসে সকলকে বিজয়ের শুভেচ্ছাসহ নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেট খেলা শুরু হয় কবে থেকে?
ফজলে রাব্বি : আমার বাসার কিছু সামনেই চাঁদপুর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অনুশীলন চলতো। তখন আমি স্কুল শেষ করে চলে আসতাম পৌরপার্ক মাঠে। ওই সময়ে দেখতাম মোশারফ বাবু, রিপন কর্মকার, মিশু ও সবুজসহ অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার অনুশীলন করছেন পৌরপার্ক মাঠে। তখন থেকেই আমার ক্রিকেট খেলা শুরু হয়।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হয় কবে থেকে?
ফজলে রাব্বি : আমি আল-আমিন একাডেমীতে দশম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আমি তখন চাঁদপুর স্টেডিয়ামে রঘুনাথপুর হাই স্কুলের পক্ষ থেকে ক্রিকেট খেলতে নামি ক্রিকেট বল দিয়ে। অবশ্য ওই বছর স্কুল ক্রিকেটে আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয় এবং সেজন্যে পরবর্তীতে বিভাগীয় পর্যায়ে স্কুল ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একামেডীতে ভর্তি এবং খেলেছেন কি?
ফজলে রাব্বি : আমি স্কুল ক্রিকেট খেলার পরই ক্রিকেট কোচ শামিম ফারুকীর মাধ্যমে একাডেমীতে ভর্তি হই। কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই আমি একাডেমীতে ভর্তি হই এবং অনেক দিন ধরেই অনুশীলন করি। আমি এ একাডেমীর হয়েই চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রথম ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগ খেলি। আমাদের দলটি রানার্সআপ হওয়ার কারণে আমরা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলার সুযোগ পাই। এরপর আমি এই একাডেমী থেকেই ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীর হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা কিংবা প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন?
ফজলে রাব্বি : আমি ২০১১ ও ২০১২ সালে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব ১৪ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। সেই টুর্নামেন্টে ভালো করার কারণে বিভাগীয় বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব ১৪ দলের ক্যাম্পিংয়ে ডাক পাই। সেখানে প্রথমে ৩ দিন এবং পরে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ের খেলার সুযোগ পাই। কিন্তু আমার জন্মদাতা বাবা মারা যাওয়ার কারণে আমি ওই বছর আর খেলতে পারিনি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে চাঁদপুর জেলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে লক্ষ্মীপুর খেলতে যাই। সেখানেও ভালো পারফরমেন্সের কারণে বিভাগীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলে প্রশিক্ষণের জন্য ডাক পাই। সেখানে ক’দিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনুশীলন করার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের হয়ে শরিয়তপুরে খেলার জন্য সুযোগ পেলেও খেলতে পারিনি। ওই বছর আমার এসএসসি পরীক্ষা ছিলো। এরপর ২০১৪ ও ১৫ সালে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব ১৮ জেলা দলের হয়ে লক্ষ্মীপুর খেলতে যাই। সেখান থেকে বিভাগীয় পর্যায়ের ১৮ দলের প্রশিক্ষণ শেষে খেলার সুযোগ পেলেও খেলা হয়নি এইচএসসি পরীক্ষার কারণে। অবশ্য ২০১৭ ও ১৮ সালের দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ১৮ দলের হয়ে রংপুর ও যশোরে খেলতে যাই। যখন আমি রংপুরে বিভাগীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে খেলতে যাই, খেলার আগের দিন রাতে কাকতলীয়ভাবে আপনার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাত ও আপনার সাথে কিন্তু (রাত্রিযাপন করার) হোটেলে দেখা হয়। ওই সময়ে আপনাদেরকে কাছে পেয়ে ছবিও তুলেছিলাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট (মূল) দলে সুযোগ মিলে কবে?
ফজলে রাব্বি : আমি ২০১৯ সাল থেকে চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে খেলে যাচ্ছি। আগামীতে শরীর সুস্থ থাকলে এবং খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে জেলা দলে নিয়মিত খেলে যেতে চাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকায় কোন্ ক্লাবে কি খেলছেন বা খেলছেন?
ফজলে রাব্বি : আমি প্রথমে ঢাকায় ২০১৩ সালে কোয়ালিফাই লীগে আজিম ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করি। এর পরের বছর একই লীগে শান্তিনগর ক্লাবের হয়ে খেলি এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৬ সাল থেকে করোনার আগ পর্যন্ত ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে গাজী টায়ার্সের হয়ে খেলে যাচ্ছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরে কোন্ কোন্ ক্লাবে খেলেছেন বা খেলছেন, অর্জন কী?
ফজলে রাব্বি : আমি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট লীগ ও টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, চাঁদপুর ক্রিকেট কোচিং সেন্টার ও উদয়ন ক্লাবে খেলেছি। এবার চলতি বছর টি-২০ ও প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে খেলবো ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। আমি খেলা অবস্থায় টি-২০তে চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির দল চ্যাম্পিয়ন এবং প্রথম বিভাগে মোহামেডান, চাঁদপুর ক্রিকেট কোচিং সেন্টার ও উদয়নে খেলা অবস্থায় চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরে ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে ক্রিকেট খেলা কখন কখন চালানো উচিত?
ফজলে রাব্বি : আমি আমার চিন্তা থেকে বলতে পারি যে, এ জেলা এখন হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট দলের ২ জন ক্রিকেটারের জেলা। এ জেলাতে ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে নিয়মিত নিজেদের ব্যবস্থাপনায় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু করতে হবে। নিয়মিত স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও ক্রিকেট লীগ হলে জেলার বিভিন্ন স্থানের ক্রিকেটাররা খেলতে পারবে এবং খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে। জেলা সদরে বেশ ক’জন সাবেক ক্রিকেটার রয়েছেন। এ সমস্ত ক্রিকেটারকে নিয়ে উপজেলাভিত্তিক ক্রিকেট খেলোয়াড় বাছাই করে সেখানে অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলায়ও অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার কর্মসূচি রাখে এবং নিয়মিত যদি খেলধুলার আয়োজন করে তাহলে জেলা থেকে ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফজলে রাব্বি : জি¦ আপনাকেও ধন্যবাদ।