প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর ॥ ৪র্থ পর্ব)
প্রায় দুধের শিশু, সেদিনও চিঁকুতকুত খেলেছে-সেই আতুরিকে বিদায় দিয়ে ঘুঘুপাখির মতো যে বিলাপটি শুরু করেছিলেন অযুফা বিবি, তা এখন কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। সময় ভালো না, তথাপি বিবাহের তো একটা ঝক্কি থাকেই। তাতে তার শরীরটাও কেমন ভেঙ্গে আসছে। ‘আল্লা রে, তুমি রহম করো’-এই স্বগত বাক্যের ভেতর পাশের বাড়ির আক্কাসের বউটার কথা মনে পড়ায় ব্যথাতুর হয়ে ওঠেন তিনি। আলী আক্কাসরে সেদিন আয়াতুল্লার দল মেলেটারি দিয়া মাইরা ফালাইছে। আহহা রে কাঁচা হলুদের মতো নয়া বউটার নাকফুল খুলে নেয়ার কালে ফেরেশতারাও কেঁদেছিলো-বিধবার নাকফুল পরা নিষেধ। যুদ্ধ শুরুর কয়দিন আগেই, যেদিন শেখ সাব ঢাকায় ‘বাসন’ দিছেন, সেদিনই আক্কাসের বউটা পালকিতে কইরা এসেছিলো। সে কথা মনে কইরা আতুরির জন্যে অজানা আশঙ্কায় মায়ের বুকটা ভেঙে যায়, পশুপাখির আগে মা টের পায় বিপদ-আতুরির পালকি কি নদী পার অইছে? খবর নেয়ারও কোনও উপায় নাই। মাইয়ারে বিদায় দিয়া কাঁচি হাতে আতুরির বাপ গেছে জমিতে। মুগ ডাইলগুলো তুলে আনতে। কখন আবার আকাশ ভাইঙ্গা মেঘ নামে।
হেমার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে রফিকও এখন, তার লাল মোজা কিছুক্ষণের খুলে সকলের সঙ্গে সমতা নির্মাণ করার প্রয়োজন অনুভব করে, বটগাছের তলে মাটিতেই বসে পড়ে। খেয়া নৌকায় চড়ার আগে পুনরায় মোজা জোড়া পরে নেবে-এ কথা ভাবতে ভুলে নাই রফিক।
পালকিতে নয়া বউয়ের মা, রফিকের শ্বাশুড়ি, মাটির ‘খোবায়’ কি কি পিঠা দিয়েছেন। রফিকের বন্ধু মোজাম্মেল সেই নকশাকরা খোবা হাত বাড়িয়ে পালকির ভেতর থেকে নিয়ে এসে বলে, ‘নেন ত খান। অবস্থা বেগতিক। হেমা আইজ আর আসবো না।’
প্রবল আগ্রহে মোজাম্মেল পিঠা খায়, অন্যরা কিছুটা অন্যমনস্কতায়, কিন্তু পেটের টানে দু-একটা পিঠা হাত বাড়িয়ে তুলে নেয়। পুতলিকে দিয়ে নতুন বউটাকেও দুটি পিঠা দেয় মুজা পাগলা। তবে বউ ঘোমটার ভেতর থেকে না-সূচক মাথা দুলিয়েছে। নতুন বউয়ের এভাবে কিছু খেতে ‘শরম’ থাকাই নিয়ম।
অভিসম্পাতকারীদের সঙ্গে অন্তরের গূঢ় যাদুমায়া স্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষিতে। অবশেষে হেমাঙ্গ মাঝি, যেন তার পা চলে না-এমনভাবে খুঁড়িয়ে, নদীর ওপারের বাঁশঝাড়টির আড়াল থেকে উঁকি দেয়। তবে সেখানে জীবন ছিলো না।
এতোক্ষণ আসমানের নিঃসঙ্গ সূর্যটি ঘড়া ঘড়া তাপ বিকিরণ করে এখন ক্লান্তিবসত থমথমে। বটতলার পালকি ও পালকিটি ঘিরে অসহায় ক’জন যাত্রী তাদের পুলসিরাতের পারানি-হেমাকে, নদীটির ওপারে, বৈঠাটি তুলতে দেখে, ‘শুকুর আলহামদুল্লিাহ’ বলার পর, কর্তব্যবোধে ভারী হয়ে ওঠা শুক্কুর তার ভাইকে ডাক দেয় ‘ও রপিক, তরাতরি আয় , হেমা আইসা পড়ছে। ও রণজিৎ ও অহিদুল্লাহ, পালকি তোল তোরা।’
কচুরির বরজ ঠেলে ঠেলে, যেনো সমস্ত জগতের সঙ্গে এক যুদ্ধ-হেমা এপারে এসে তার বহুযুগের খেয়ানৌকাটি ঠেক দেয়ার পর রফিকের বন্ধু মুজা পাগলা বলে, ‘কি ও হেমা কাগা, আপনেরে কি মেলিটারি ধরছিলো না আয়াতুল্লা রাজাকারে জল্লাদখানায় লইয়া গেছিলো?’
এ কথায় যদিও রূঢ় বাস্তবতা প্রকাশিত হয়েছিলো, তবু মনুষ্যস্বভাবে কেউ কেউ তাদের অমার্জিত ঠোঁট ব্যাদান করে একটুখানি না হেসে পারেনি। বিবাহের ঠাট্টা-তামাশা এতোক্ষণে, নদীর তীরে, হেমা মাঝির কাক্সিক্ষত আগমন প্রহরে সার্থক হয়ে উঠলো। কিন্তু বটগাছটির পাতার আড়ালে আশ্রয় নেয়া পক্ষীকুল মানুষের হাসির কারণ বুঝে নাই। ফলে তারা হাস্যরসের কারণ অনুসন্ধানে একটু উড়াল মেরে পুনরায় বৃক্ষে ফিরে এসেছিলো।
আতুরি ততোক্ষণে পুতলিকে জাগিয়ে দিয়ে, তার ‘সন্নে’র নাকফুলটিতে আরেকবার আঙ্গুলের গুঁতো দিয়ে, চকিতে একটু না ভেবে পারেনি, ‘ওই বাড়িতে’ গিয়ে কতখানি লম্বা করে ঘোমটাটি টেনে দিয়ে লজ্জায় ধূলায় মিশে যাওয়া লক্ষ্মী বউ হয়ে বসতে হবে। এ কথা তার সখি-চাচি-ভাবি সকলেই নিজ নিজ গুরুত্ব প্রকাশের প্রয়োজনে বলে দিয়েছিলো। তাছাড়া সে দেখেছে, অন্ধকার ঘরে নতুন বউ বসে থাকার রীতি।
পালকিটি নৌকায় তোলার পর, এতোক্ষণে, সকলের ভেতর এক ধরনের স্থিরতা প্রকাশিত হয়। সেখানে চঞ্চলতা এসে বিষণ্নতার ছায়া দূর করে। সকলে মনোযোগ দিয়ে হেমাঙ্গ মাঝিকেই দেখে।
হেমার চোখের দৃষ্টি এমন ছিলো না। হলদে হয়ে আসা চোখ দুটি ভুতুমের মতো স্থির, কর্কশতায় রুক্ষ্ণ, খিটখিটে শুষ্ক। নদীর ভেজা স্বভাবের সঙ্গে যাত্রীগণ হেমাঙ্গ মাঝির বর্তমান বিশুষ্ক চৈত্রদগ্ধ রূপ কল্পনা করে নাই। তার নেংটি ধূতির গিরো ঢিলা। পেটে ভাত পড়েছে কি পড়ে নাই-ঠাওর করা কষ্টকর। বিবাহের যাত্রীগণ হেমা মাঝিকে দেখে ক্ষণিকের চঞ্চলতা ভুলে এখন, খুবই মুষড়ে পড়ে। মুখে কথাও খুঁজে পায় না, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে নিরব। নদী পার হওয়াই একমাত্র বিবেচ্য।
বাঁশের লগি ও শ্যাওলা ধরা পিচ্ছিল বৈঠায় জমাটবাঁধা কচুরির দ্বীপ ঠেলে ঠেলে হেমার খেয়ানৌকাটি ত্রস্ত গতিতে চলতে শুরু করলে পালকিসহ তার দুলুনিতে স্থিতিশীলতা আসার অপেক্ষায় কারো মুখেই তেমন কোনও কথা সরে নাই। সকলেরই মৌলিক উদ্দেশ্য এখন যথাসম্ভব দ্রুত নদীটির এই ‘পুলসিরাত’ পার হয়ে ওয়াপদার রাস্তার ওপাশে, চরবাগাদির কোণাকুণি আইল ধরে এগিয়ে যাওয়া। পথ তো এখনও কম বাকি নাই। সঙ্গে আছে পালকির চেয়েও এক ভয়াবহ কঠিন বোঝা-পুতলি। সে না পারছে হাঁটতে, না পারছে পালকিতে চড়তে, এমনকি কেউ যে তাকে কোলে নেবে-সেই পরিস্থিতিও এখন দূরাশা। পুতলি তার কোলে ওঠার বয়সটা পার করে এসেছে আগেই। শরীর ভারী। সুতরাং এই ‘আজদাহা পুতুল’ কারোরই বিশেষ আগ্রহের বস্তু নয়। সকলে বরং বিরক্ত, অনুতপ্ত তাকে সঙ্গে আনার জন্য। আনাড়ি কাঁনলে বাড়িতেই কাঁনতো-এখন তারে নিয়া আরেক ঝামেলা।
বাক্যহীন গুমট ভাব-এ গলা ধরে আসে রণজিৎ বাছাড়ির। দীর্ঘ সময় কথাহীন থাকা তার স্বভাবজাত নয়। নিজের উপস্থিতি প্রমাণের আকুলতায় উঁচু ক’খানা ময়লা দাঁত বার করে গালের চাপার উত্থান-পতনে বলে, ‘ও হেমা, তোরে আবার কোন ব্যাধের ব্যারামে পাইছিলো রে! তোর তুলসী দাসী কালার মা’য় বুঝি দিনদুপইরা খিড়কি আটকাইয়া তোরে কেঁচকি দিয়া ধরছিলো? হা হা হা। এ্যাতো দেরি করলি ক্যান?’
অন্যরা চুপ, মুজা পাগলা আচমকা তার স্বভাবসুলভ খসখসে খিকখিক হাসিটি না হেসে পারে না। সে রণজিৎ-এর কথাটি প্রলম্বিত করার অনুপ্রেরণা বোধ করে-‘না ও রণজিৎ, হেমা কাকারে জোঁকে ধরছিলো মনে অয়, চিনা জোঁকে!’
এই কথায় সকলেই মুখ চেপে হাসি গোপন করার চেষ্টায় সচেষ্ট। তবে, শুক্কুর গাছি ধমকে ওঠে, ‘থামবি তোরা হ্যাঁয়? আজাইরা কতা বাদ দে ত। আল্লা আল্লা কর।’
শুক্কুরের ধমকে মুজাম্মেল একটুখানি থতমত। সে ভেবেছিলো ঠাট্টা-তামাশা বিবাহের আবশ্যিক একটা কর্তব্য। তাছাড়া হেমাঙ্গ মাঝিকে তার দীর্ঘ সময় পর, অহেতুক দিশাহারা-এই আগমনের একটা সমুচিত জবাবও তো দেয়া দরকার। ‘শুক্কুর ভাই এট্টু বেশি বেশি।’
হেমা গোঁয়ারের মতো ঘাড় ত্যাড়া করে নাওটিকে কচুরির জমাট আজাব থেকে বার করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। তারপর অকস্মাৎ নিরবতা ভেঙ্গে বলে ওঠে, ‘আন্নেরা হুনছেননি, ইচলির আয়াতুল্লা নাকি রাজাকার অইছে? ঘাসিপুরের হরিরে তো গুল্লি করছে পাইক্যারা, কল্লাডাও কাইট্টা ফালাইছে। কি দোষটা করছিলো হরি, কন তমাইনষে কয় আয়াতুল্লা নাকি হরিধনের বাড়িডা দেখাইয়া দিছে। ও ভাই ও, পরানডা হাতে নিয়া নাওডা বাই। অহন হাত-পাও-রথ আর চলে না, ভাইঙ্গা আসে। হায় হায় আমার জীবনডা রে! যুদ্ধ কতদিন চলবো?’
অকস্মাৎ হরিধনের মৃত্যুর খবর শুনে যাত্রীগণ হেমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় নাই। তার কণ্ঠের কম্পনে অজানা গন্তব্যের আঁন্ধারটি অনুভব করে। তারা ভাবে, দ্যাশটা কি স্বাধীন অইবো? তারা কেউ কেউ শুনেছে, শেখ সাব আর জীবিত নাই।
পাইক্যা অর্থাৎ পাকিস্তানি মিলিটারি যে এইদিকে ঢুকে পড়েছে-এতোটা জানা ছিলো না নয়া জামাই রফিক মিয়া বা তার সঙ্গে থাকা যাত্রীদের কারোরই। তাহারা বিবাহের জায়-জোগাড় করতে ব্যস্ত ছিলো। তবে সকল কর্তব্যের প্রয়োজনীয়তার অবসরে তারা যে চিন্তান্বিত ছিলো না এমন নয়, কখন পাকিস্তানিরা হানা দেবে তার সঠিক সময়টা অনুমান করে নাই। অনুমান করার জো নাই-এরা কখন কার বাড়ি আগুন দেয়, কখন কারে গুল্লি কইরা জান বার কইরা দেয়-তার ত কোনও ঠিক-ঠিকানা নাই। এমন গজব তো আগে কেউই দেখে নাই।
হরিধন ঘাসিপুরের অবস্থাপন্ন কৃষক। প্রচুর চাষের জমিজমা তাঁর। সেসব ছাইড়া দিয়া হরি যেন ইণ্ডিয়া চইলা যায়-এ রকম কান কথা যুদ্ধের বহু আগে থেকেই প্রচলিত। তবে ছোটোখাটো গোলগাল গোবেচারা হরিধন ভেবেছিলো জন্মভূমিতে প্রাণ গেলে সেও স্বর্গ প্রাপ্তির সমতুল্য। শোনা গিয়েছিলো খালেক মেম্বরের ভাই ছত্তর মিজি, মদ-খাওয়া লালচক্ষু তবিউল্লাহ-এই দলটিই হরিকে বহুবার হুমকি দিয়েছে, আর হরিধনের বাড়িটিও ঘাসিপুরের শেষপ্রান্তে-একলা, নিঃসঙ্গ। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতি খুনিদের পক্ষে। লক্ষ্য-হরির ধানী জমি। বিশাল সব ধান ক্ষেত একমাত্র হরিধনের ছাড়া আর কারো নাই। খুনিরা যুদ্ধের এই ‘ক্ষু’ টাকেই ব্যবহার করেছে চতুরতা আর দক্ষতার সঙ্গে। হরিধনকে কারা মেরেছে-এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রটাতে দক্ষ লোকের অভাব হয় না। রাজাকার-পাকিস্তানি নাকি ছত্তর-তবি গং তাকে খুন করেছে-এ নিয়ে ‘কুত্তা-বিলাই’ পক্ষপাতিত্ব রচিত হয়।
হেমার মুখ থেকে হরিধনকে কিভাবে গুলি করার পর, গলা কেটে মেরে ফেলা হয়েছে, রক্তের ঢল নেমেছে ঘরের মেঝেতে-সেই বর্ণনা নিজেদের ভেতর আত্মস্থ করা মানুষের পক্ষে অসম্ভভ। এক্ষণে যাত্রীগণের ভেতর জীবনের লক্ষুসমূহ বিভ্রান্তিতে বিচলিত। তারা হরির সম্পর্কে জানে, নিরুপদ্রব ভালো লোক ছিলো হরিধন। আহা রে! মানুষ কি কইরা মানুষের গলা কাটে-একথা কল্পনা করে কেউ কেউ অন্তরে ডুকরে উঠেছিলো।
মনের ভেঙ্গে-পড়া শক্তিতে হেমাঙ্গের লগি যেন নদীটির তল খুঁজে পায় না। কচুরির অচলায়াতন নড়তেও চায় না। তাই হেমা মাঝি তার উদাম লিকলিকে ঠ্যাং দিয়ে, হাঁটু দু’টি ভেঙ্গে ক্রমাগত নৌকার পাটাতনে দুলুনি দেয়। এতে কিছুটা অগ্রগতি হয়। তবে পালকির ভেতর আতুরি নামের বধূটি আতঙ্কে প্রায় অজ্ঞান। হেমার মুখে হরিধনের গলাকাটা লাশের বর্ণনা সে শুনেছে। ‘রাজাকার’ কি-বুঝে নাই। সে তার বোন পুতলিকে ডেকে বলে, ‘ও পুতুল তুই আমার কাছে আয় ।’
দুই বোন পরস্পকে ধরে রেখে নৌকাটির দুলুনিতে জীবন-মরণের বিভ্রান্ত-ধোঁয়াশা অনুভূতিতে পালকির ভেতর চোখ বুঁজে আছে।
এতক্ষণে হেমা মাঝি কিছুটা সফলতা পায়। লগি-বৈঠার যুদ্ধে কচুরির দলাটা ভাঙ্গে। সেখানে, পাতালের অন্ধকার থেকে ভূরভূরিয়ে বুদ্বুদ উঠে আসলে একটা অসহ্য দুর্গন্ধে যাত্রীরা নাকে কাপড় দেয়। নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে ক্ষুকাল তাহারা চোখ বার করে বুঝার চেষ্টা করে-লাশটি কার? এসময় মাথার উপর যে নিরাকার নীল আসমান, সেখানে কয়েকখ- মেঘ আর কয়েকটি শকুন সন্তুষ্টচিত্তে বার কয়েক ঘুরপাক খেয়েছিলো। বুদ্বুদের ভেতর থেকে ভুস করে ভেসে ওঠা গলিত লাশটি হরিধনের নয়। কারণ তাকে তো আজকেই বিহানের আগে গলা কাটা হয়েছে, ফুলে ওঠা লাশটির কোমরে শাড়ির জরি ঝিকমিকিয়ে উঠেছে। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা