শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   দিনমজুরকে জবাই করে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি
  •   নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ
  •   বাবা মায়ের উপর ছেলেদের নৃশংসতা ।। বৃদ্ধ বাবার থানায় অভিযোগ
  •   ফিরে এলেন আগের খতিব, নামাজের আগে নাটকীয়তা বায়তুল মোকাররমে

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

জান্নাত বোরকা বাজার

আয়েশা সিদ্দিকা
জান্নাত বোরকা বাজার

(গত সংখ্যার পর)

একদিন পড়ানোর মাঝখানে সবার জন্মতারিখ নিয়ে গল্প হচ্ছিল। তখন সবার জন্মদিন সম্পর্কেই সবাই জেনেছে। এক শনিবার টিচার নিজেই বলেছিলো রবিবার পড়াতে চায়। অথচ রবিবার পড়ানোর দিন ছিল না। রবিবার আবিদার জন্মদিন ছিল। সে বলেই ফেলেছে কাল আবিদার জন্মদিন সেজন্য এখানে কেক কাটা হবে। আবিদা সাথে সাথে না করে দিয়েছে। আর টিচার বলে,

আবিদার ট্রিট দিতে খরচ হবে সেজন্য হয়ত রাজি হচ্ছে না।

না স্যার, রবিবার আমার বাংলা প্রাইভেট আছে।

তখন হাসির ছলে ব্যাপারটা স্যার উড়িয়ে দিলেও খুব অপমানবোধ হয়েছিল তার। রাতে আবিদাকে মেসেজ দিয়ে বললো ‘আমি একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি তোমাকে নিয়ে, সরি’। আবিদা কোনো রেসপন্স করেনি। একজন শিক্ষকের এরূপ আচরণ আবিদার ভালো লাগেনি। আবিদার কলেজ বাসা থেকে উত্তর দিকে, প্রায় ছয় কিলোমিটার। আইসিটি পড়ার জায়গা, বাসা থেকে দক্ষিণ দিকে চার কিলোমিটার। সমস্যা হলেও প্রাইভেটটা চালিয়ে যায় আবিদা। কিছুদিন যেতেই টিচারের আচরণে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। আবিদাকে অনেক মেসেজ পাঠাতো। টিচার, সম্মান প্রদর্শনের জায়গা থেকে আবিদাও তাকে রিপ্লাই করে যতোটুকু প্রয়োজন। মাসখানেক না যেতেই টিচার আবিদাকে জানালো সে আবিদাকে পছন্দ করে। তাকে অনেক মেয়েরাই প্রোপোজ করেছে, তার কাউকে ভালো লাগেনি। আবিদাকে ভালো লেগেছে। আবিদা তখন ইরফানের কথা ভাবছিলো, সেজন্যই হয়ত ইরফান ব্যাচেলর টিচারদের কাছে পড়তে বারণ করত। আবিদা টিচারকে সব বলে দিয়েছে, যে সে ইরফানকে ভালোবাসে। আর তাদের সম্পর্ক ভেঙে গেছে দুই মাস আগে। এটাও জানিয়ে দিয়েছে, আবিদা তার থেকে এইরূপ আচরণ আশা করেনি। আইসিটি টিচার আবিদার কাছে ইরফানের ফেসবুক নামটা জানতে চেয়েছিলো। আবিদা তাকে নামটা দিয়েছেও। এরপর থেকে আবিদা আর আইসিটি প্রাইভেটে যায়নি। টিচারকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিয়েছে। আবিদাকে তার বান্ধবী রুমি জিজ্ঞেস করেছিলো, পড়বে না কেনো, স্যার আবিদার কথা জিজ্ঞেস করে, এটাও বলেছে। আবিদা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়েছে,

-দূরে হয়ে যায় রে, আমাদের কলেজের সায়েন্সের একটা ভালো টিচারের খোঁজ পেয়েছি। ওখানেই পড়বো বলে ঠিক করেছি। স্যারকে বলে দিস, আমি আর যাব না।

আবিদা বেতনটা রুমির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। সে আইসিটি টিচার ছিল অন্য কলেজের। তার একদিন পরে আবিদা মেসেঞ্জারে লক্ষ্য করে ইরফানকে অ্যাক্টিভ দেখাচ্ছে। তার মানে কী! ইরফান আবিদাকে ব্লক থেকে খুলে দিয়েছে। কেন খুলে দিলো! আইসিটি টিচার ইরফানকে কিছু বলেনি তো! হয়ত সেটাই হয়েছে। দুইদিন এইভাবে কেটে গেলো, ব্লক খুলেও ইরফান আবিদাকে কোনো মেসেজ পাঠায়নি। আবিদাও পাঠায়নি। কিন্তু আবিদার ইচ্ছে হচ্ছিল পাঠাতে। আবিদা কোনো ভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলো না। তাই আবিদা একরকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই ইরফানকে মেসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দিয়েছে। এখন আর ইরফানকে অ্যাক্টিভ দেখাচ্ছে না, আর মেসেজ পাঠানোর কথাও মাথায় আসছে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে অচেনা নম্বর থেকে আবিদার ফোনে কল আসে। আবিদা নিঃসন্দেহে ধরেই নেয় ইরফানের কল। এইভাবে চিন্তা করে আবিদা আনন্দ পায়। হয়ত ইরফানের কল না, কিন্তু ইরফান কল করেছে এই বিষয়টা ভাবতেই আবিদার ভালো লাগে। কল দিয়ে কিছু না বলেই আবার কেটে দেয়। এভাবে চলতে চলতে অনেক দিন কেটে যায়। এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও আবিদা এখনো ভাবে, আমি কী করেছি! ইরফান কথাটা কেনো শেষ করলো না সেদিন। এই একটা কথা আবিদাকে নিঃশেষ করে দেয় প্রতিনিয়ত। কত রাত আবিদা অপেক্ষা করে করে কাটিয়ে দিয়েছে। ইরফান আর কখনো কল দেয়নি নিজের নম্বর থেকে। আবিদার যখন খুব ইচ্ছে করতো ইরফানের কণ্ঠ শুনতে, সারারাত অপেক্ষা করে বসে থাকতো। কখন সকাল হবে। সকাল হলেই কলেজে গিয়ে কোনো বান্ধবীর ফোন নিয়ে ইরফানকে ফোন দিয়ে তার কণ্ঠস্বর শুনতো। একটা নম্বর দিয়ে একবারের বেশি ফোন দেয়নি। দিন পার হওয়ার সাথে সাথে আবিদার আবেগগুলো কমে আসছে। কিন্তু ইরফান মন থেকে কোথাও যায়নি। তাই ইরফানের সবকিছু নিয়ে আবিদা অনেক পজিজিভ। আবিদার কখনো মনে হয় জান্নাত নামটা একান্তই আমার। এটা কাউকে দিব না আমি। আবার কখনো মনে হয় ইরফান নেই, এই নামটার ব্যবহার ও নেই। নামটা বরং এই বাচ্চাটাকে দিই। আমাদের ভালোবাসা নামের মাধ্যমে এই বাচ্চার মধ্যে বেঁচে থাকবে। এতো ভাবনাচিন্তা করে সন্ধ্যার পরে আবিদা জিল্লুর রহমানকে একটা কাগজে জান্নাতুল ফেরদৌস, আর ডাকনাম জান্নাত লিখে দিলো।

-ভাই এই একটা নামই দিলি?

-হুম, এটাই হুজুরকে দিও।

-একটা নাম দিলে হুজুর পছন্দ কইরা ঠিক কইরা দিবো কে¤েœ? এটা যদি হুজুরের ভালা না লাগে?

-এই নাম হুজুরের ভালা না লাগলে সে হুজুরই না। যেই হুজুরেরেই ডাকো না কেনো, এই নাম পছন্দ করবো।

-আচ্ছা ভাই।

-তোমার কী পছন্দ হয় নাই?

-হ হইছে তো, জামাল জান্নাত। বাপের নামের লগে মিল আছে।

-হুম, মিলাইয়াই ঠিক করলাম।

পরের দিন বাচ্চার নাম রাখার অনুষ্ঠানে জান্নাত নামটি রাখা হলো। আবিদার কেনো জানি অনেক আনন্দ লাগছিলো সেদিন। হতে পারে নিজের দেয়া নাম ঠিক হয়েছে সেজন্য, নাহলে হতে পারে জান্নাত নামের মাধ্যমে আবিদা তাদের ভালোবাসাকে দীর্ঘ সময় বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এজন্য। তার বছর খানেক পরে আবিদার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ইউনিভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর ইরফানের সাথে একদিন কথা হয়েছিলো। একটা বিয়ের প্রোগ্রামে দুই পরিবারেরই দাওয়াত ছিল। আবিদা ইরফানকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু পারেনি। ইরফানকে দেখার পরে আবিদার পুরোনো দিনের সব কথা মনে পড়ে গেলো। মনের মধ্যে ঝড় উঠেছিল আবার নতুন করে। মন খুব করে চাচ্ছিলো সেই প্রশ্ন টার উত্তর জানতে। কেনো ইরফান বলেছিলো!

‘তুমি যা করেছো তা ঠিক করোনি’।

সেদিন প্রোগ্রাম থেকে ফিরে আবিদা আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। আবিদা নিজেই ইরফানের সাথে ফোনে কথা বলেছে যেচে। তারপর যা জানতে পারলো তা আবিদার মনে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছে। দুটো পরিবার একে অপরের পরিচিত। কোনো কোনো ভাবে আত্মীয় ও হয়। আবিদার বাবা ইরফানের বাবা কে নালিশ করেছিলো,

‘আপনার ছেলের জন্য আমার মেয়ের পড়াশোনায় ডিস্টার্ব হইতেছে, সামনের বছর মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা, তারপর ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা। এই সময় মেয়ের পড়াশোনা অনেক জরুরি। আর আমি আবিদা রে জিজ্ঞেস করছি আপনার ছেলের ব্যাপারে, ও বলছে কোনো সম্পর্ক নাই ইরফান ভাইয়ের সাথে। উনিই আমাকে মেসেজ দেয়, ফোন দেয়। তাই বলতেছি আপনার ছেলে যেন আমার মেয়ে কে আর কখনো ফোন না দেয়।’ আবিদা ইরফানকে কিছু ব্যাখ্যা করেনি যে সে তার বাবাকে এসব কিছুই বলেনি। আবিদা তার বাবার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করেছে। সন্তানের ভালোর জন্য বাবা মা এটুকু করাটা অস্বাভাবিক না। আসলে আবিদার ইরফানের প্রতি আবারও একটা অভিমান তৈরি হয়েছে। যে ছেলে বাবার দুটো কথা শুনে আবিদাকে ভুল বুঝলো, একটা বার আবিদাকে জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন মনে করলো না। সে ছেলেকে আবিদা আর চায় না। এই বিষয়টা তখনি সমাধান হয়ে যেত, আর সম্পর্কটাও বেঁচে থাকতো। যদি ইরফান ব্যাপারটা আবিদার সাথে আলোচনা করে মিটিয়ে নিত। আবিদা নিজেকে ইরফানের জায়গায় বসিয়েও চিন্তা করেছে, সে ইরফানের জায়গায় থাকলে অবশ্যই যে যাই বলুক আগে দুজনে আলোচনা করত। কিন্তু ইরফান তা করেনি। আবিদার ইরফানকে বলার অনেক কথা জমে ছিল। যোগাযোগ না থাকলে সম্পর্কগুলো কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কথার স্তূপ মনে জমা হয়ে থাকলেই হয়ত মানুষ বোবা হয়ে যায়। বুঝতে পারে না কোনটা রেখে কোনটা বলবো। আবিদার কথার স্তূপ থেকে বের করে জান্নাতের কথা ইরফানকে বলতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু ইরফানের ব্যাখ্যা শুনে আবিদা কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখায়নি।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়