বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

নতুন জুতা

নাজিফা তাজনুর

বাড়ি ফেরার পর খালি হাতের দিকে তাকিয়ে পাঁচ বছরের নাতিটা ছলছল চোখে বলে উঠেছিল, ‘আমার জুতা আনো নাই, দাদু?’

বুকটা মুচড়ে উঠেছিল বৃদ্ধ ছমির মিয়ার। দরজায় দাঁড়িয়ে জোর করে হেসে বলেন, ‘পাগলা, তোর জন্মদিনের তো আরও এক দিন বাকি। দ্যাখ না কী হয়!’

কিন্তু কিছু যে হওয়ার নেই, সেটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কে জানে? এক মাস আগে থেকে ছেলেটা বলে রেখেছে, এই জন্মদিনে আর কিছু না হোক, তার নতুন জুতা চাই। রংচঙে লাইটওয়ালা জুতা। ঠিক পাশের বস্তির পিকলুর মতো।

নাতিটা আবদার বড় একটা করে না। এ বয়সেই দারিদ্র্যের লড়াই দেখে দেখে তাকে বয়সের চেয়ে অনেকখানি বড় হয়ে যেতে হয়েছে। অনাথ ছেলেটার চোখে চোখ রেখে তিনি বলেন, ‘দেখিস, এনে দেব।’

বড় রাস্তার পাশেই বিশাল জুতার দোকান। সেদিনই একটা দড়ি নিয়ে নাতির পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত মেপে গিঁট দিয়ে নিয়েছিলেন। মাপ নেওয়ার দড়িটা শতছিন্ন পাঞ্জাবির পকেটে নিয়ে খানিকক্ষণ ইতস্তত করে শেষমেশ ঢুকে পড়েছিলেন দোকানটায়। তাঁর খালি পা আর ছেঁড়া লুঙ্গি দেখে ওদের নাক সিঁটকে ওঠা তাঁর নজর এড়ায়নি। এর মধ্যেই খুঁজতে খুঁজতে জুতাটা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রংচঙে লাইটওয়ালা জুতা। সেলসম্যানকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলেন, ওই এক জোড়া জুতার দাম হাজার টাকার কাছাকাছি। শোনার পর বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এসেছিল তাঁর। দিনমজুরির টাকায় যেখানে মাস চলে না, সেখানে এই জুতা কেনা তাঁর স্বপ্নেরও অসাধ্য। একটামাত্র নাতি, তার একটা আবদার তিনি রাখতে পারলেন না!

নির্মাণাধীন বিল্ডিংটায় দড়ি ধরে বাঁশের ভারা বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে এ কথাটাই মাথায় ঘুরতে লাগল তাঁর। আজকাল এসব কাজে গায়ে জোর পান না তেমন। বয়স হয়েছে বলে মজুরির পরিমাণটাও কমে এসেছে। আজকের দিন শেষ হলেই হলো, কালকে নাতির জন্মদিন। বাড়ি ফিরে ছেলেটাকে কী জবাব দেবেন তিনি?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই পৃথিবীটা ঠাঁই করে টলে উঠল। দুপাশ দিয়ে উঠে যাওয়া দড়ি দুটো ধরতে গিয়েও ধরতে পারলেন না। হঠাৎ দেখলেন তিনি ভয়ানক বেগে নিচে পড়ছেন। তারপর অন্ধকার।

জ্ঞান ফিরতেই দেখলেন তাঁকে ঘিরে একরাশ জটলা। ম্যানেজার সাহেব হাতে একটা এক হাজার টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বললেন, ‘ধরো। কাল থেকে আর আসতে হবে না। তোমার মতো বুড়াকে কাজ দেওয়াটাই আমার ভুল হইছে।’

প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে ঘাড় কাত করে হাতের নোটটার দিকে তাকালেন তিনি। চোখে একটুখানি ঝিলিক খেলে গেল। ঘাড়ে-হাতে-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ালেন। টলতে টলতে এগিয়ে গেলেন জুতার দোকানের রাস্তাটার দিকে। তাঁর মুঠোয় ধরা কড়কড়ে হাজার টাকার নোট। মুখে রাজ্যজয়ের হাসি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়