প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
একটি আষাঢ় মাসের গল্প
অনেক দিন পর সকালে ঘুম ভাঙল অ্যালার্মের শব্দে। এমনিতে প্রতিদিন অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভাঙে গরমে আর ঘামে। কারণ আমাদের এখানে প্রতিদিন সকালে কারেন্ট চলে যায়। সে কারেন্ট কবে আসে আমি বলতে পারি না। কেননা আমি তখন অফিসে থাকি। অবাক করা ব্যাপার হলো, আজ কারেন্ট আছে। ভনভন করে ফ্যান ঘুরছে। ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে ঢুকে দেখি অবাক কাণ্ড।
কল দিয়ে পানি পড়ছে। আমাদের বাড়িওয়ালা এক বেলা পানি দেয়। সেটিও রাতে। দিনে কখন কল দিয়ে পানি পড়েছে, সে দৃশ্য ভুলে গেছি।
স্মৃতি হাতড়ে দেখি ‘হড়ঃ ভড়ঁহফ’ রেজাল্ট আসছে। গুনগুন গান করতে করতে গোসল সেরে ফেললাম। কী চমৎকার একটা দিন। নাশতা সেরে অফিসে রওনা দিলাম। গলির মোড়ে আসতে আপনাতেই নাকে হাত চলে গেল। এই মোড়ে যে ডাস্টবিনটা থাকে, সেটি বছরের সব সময় পূর্ণ থাকে। ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে ডাস্টবিন’।
আজকে অবাক হওয়ার দিন চলছে। মোড়ে এসে দেখি, ডাস্টবিন শান্তশিষ্ট। কোনো ময়লা পড়েনি, গন্ধও। কী বার আজকে? প্রশ্ন জাগল মনে। কোনো বিশেষ দিন নাকি? বাসের জন্য অপেক্ষা করতেই দেখি একটা খালি বাস চলে এসেছে। উঠতে যেতেই হেল্পার হাত নেড়ে মানা করে দিল।
‘কী ব্যাপার?’ আমি অবাক।
‘দেখেন না সিট খালি নাই?’
‘আরে আমি দাঁড়িয়ে যাব।’
‘দাঁড়াই মানুষ নেওন যাইব না। ওস্তাদ টান দেন।’ ফস করে বাস চলে গেল। কাণ্ডটা কী হলো? দাঁড়িয়ে মানুষ নেবে না মানে? এরপর আরেকটা বাস এলো। উঠতে যেতেই হেল্পার মানা করে দিল।
‘সিট নাই।’
ভেতরে উঁকি মেরে দেখলাম সবাই বসে আছে। একটা লোকও দাঁড়িয়ে নেই। কোন দেশে আছি আমি? সিএনজি নিয়েই যেতে হবে, অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর দিনটি আর সুন্দর থাকল না। ২০০ টাকার নিচে যাবে বলে মনে হয় না।
‘মামা যাবেন?’ সিএনজি একটা আসতেই গলায় মধু ঢেলে দিলাম।
‘কই?’
‘ফার্মগেট।’
‘ওঠেন।’
‘কত?’
‘মিটারে যা ওঠে।’ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। সিএনজি ধরে নিজেকে সামলালাম।
‘আচ্ছা চলেন।’ সিএনজিতে বসেই ফেসবুকে ঢুকলাম। যেকোনো খবর নিউজ চ্যানেলে আসার আগে ফেসবুকে চলে আসে। দেশে কি কোনো নতুন আইন হয়েছে। হলোটা কী আজকে?
অফিসে আসতেই সিএনজি থেকে নেমে পড়লাম। ভাড়া এসেছে ৭৯ টাকা। টাকা দিয়ে অফিসে উঠে পড়লাম।
সিটে বসেই অফিসের ছেলেটাকে বললাম, ‘ছটকু এক কাপ চা।’
‘কপি না চা?’
অফিসে নতুন ফটোকপির মেশিন আসছে, সেটা নিয়ে ছটকুর দারুণ আগ্রহ।
‘আরে ব্যাটা আগে চা আন।’
সে কাপ দিতেই, চুমুক দিয়ে দেখলাম কফি।
‘আরে কফি কোথা থেকে?’ অবাক আমি।
‘আপনারে না কইলাম কপি না চা?’
‘অফিসে কফির মেশিন এসেছে শহীদ সাহেব।’ পাশ থেকে পরিমল বাবু বললেন। ‘বস বলেছেন অফিসে চাঙ্গা থাকার জন্য কফির দরকার আছে।’
আমার কাপ থেকে কফি ছলকে পড়ে শার্ট দাগ হয়ে গেল। অফিস থেকে যাওয়ার সময়ও বাস পেলাম না। সব সিট বুকড, দাঁড়িয়ে কেউ যাবে না। আবার সিএনজি, আবার মিটারে।
বাসায় এসে জামাকাপড় পাল্টে তব্দা খেয়ে বসে থাকলাম। কী অদ্ভুত একটা দিন। দরজায় নক করতেই দেখি বাড়িওয়ালা। মনে মনে ভাবলাম, দিনটা নষ্ট হতে চলল বোধ হয়।
‘চাচা আপনি?’
‘নাও, ছাদের চাবি। বিকেলে ছাদেটাদে যাবা।’
‘না, মানে আপনি তো ভাড়া দেওয়ার সময় বলেছিলেন ছাদে যাওয়া নিষেধ।’
‘আর তোমরা না গেলে কে যাবে? ছাদে আমার মেয়ে নীলিমাও যায়। ওর সঙ্গে গল্পগুজব করবে।’ তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখলাম, অনিন্দ্য সুন্দর একটা উদ্বিগ্ন মুখ।
‘কে আপনি? আমি কোথায়?’
‘আমি নীলিমা। আপনি আমাদের বাসায়। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। এখন কি একটু ভালো লাগছে?’
আমি আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। এই জীবনে মনে হয় আমার আর জ্ঞান ফিরবে না।