শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০

একটা গল্প নিয়ে এসো

আয়েশা সিদ্দিকা
একটা গল্প নিয়ে এসো

রাত তিনটা নাগাদ ফোনটাকে অত্যাচার করে কখন জানি নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে অবনি। শেষ সময় দেখেছে দুটা একান্ন মিনিটে। পরদিন রাতের বাসে ট্যুর। এ অবস্থায় কী আর শান্তিতে ঘুম আসে। কাজ কিছুটা গুছানো হলেও উত্তেজনার কমতি নেই। কারণ ট্যুর মানেই কত ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। আড়াই ঘণ্টা পরে সারে পাঁচটার দিকে অবনীর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবনি দেখতে পায় পাঁচটা ছত্রিশ বাজে। অবনি ঘুম প্রিয় হলেও আজ অল্প সময়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া নিয়ে তার বিশেষ কোনো আক্ষেপ নেই। এর দুটা কারণ। প্রথমত রাতে যত দেরি করেই ঘুমাক না কেন সে ভোরে উঠে অভ্যস্ত। দ্বিতীয়ত, আজকে ট্যুর। সে চিন্তায়ই হয়ত তার ঘুম ভেঙে গেছে। কত কাজ বাকি, এত বেলা করে ঘুমানো পাপ হবে। ঘুম ভাঙার পরে এক মিনিটে অবনি সারাদিনের পুরো শিডিউল ভেবে ফেলেছে। সকালে সারাদিনের রান্না, তারপর লিখতে বসতে হবে। অনেক কথা জমে আছে অবনির মনে, যাহা লেখায় রূপ দেয়া জরুরি। তাই এটা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর দুপুরের দিকে টুকিটাকি কেনাকাটা। আবার বিকালে পাঁচটা থেকে স্টুডেন্ট-এর বাসায় পড়াতে যেতে হবে। পড়ানো শেষ করে এসে রেস্ট নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রেডি হয়ে বের হতে হবে। রাত সাড়ে আটটার মধ্যে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে। এর মধ্যের একটা কাজ ও মিস করা যাবে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ সেরে চুলায় ভাত চেপে দিয়ে অবনি তরকারি কাটাকুটি করতে বসে যায়। এত তাড়াতাড়ি সবজি কাটার চেষ্টা করছে যে হাত কেটে যাওয়ার উপক্রম। আবার মনের মধ্যে চলছে তাড়াতাড়ির চক্করে হাত কাটা যাবে না। এই একটুখানি হাত কাটার জন্য ট্যুরে গিয়ে শান্তি পাওয়া যাবে না তাহলে। এই ভেবে গতি কমিয়ে দেয়। মনে আবার এটাও চলছে যে সারে ছটার পরে আর চুলায় গ্যাসের ফ্লো থাকবে না। তাড়াতাড়ি রান্নাটা সারতে পারলে বাঁচা যায়। তাই হলো। চুলায় তরকারি বসাতে যাবে তখনি আগুন নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। চুলায় আগুনের এই ফ্লো-তেই ঘণ্টাখানিক লাগিয়ে অবনি ধৈয্য সহকারে রান্নাটা সেরে ফেললো। এরপর লিখতে বসবে এমন সময় তার চোখে পরে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা বইটা। ইন্টারেস্টিং একটা অংশ পড়তে গিয়ে গতকাল একটা উটকা কাজ এসে পড়ায় ইন্টারেস্টিং পর্বের মাঝখান থেকে রেখে দিতে বাধ্য হতে হয়। অবনি ভাবছে আজকে সেই পর্ব টা শেষ করা যাক। ফুলজান আর তমিজের না হওয়া সম্পর্ক। প্রেম হওয়ার আগের মুহূর্তগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং। পুরুষ মানুষ তার ছোটবড় সব সফলতা তার প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে উপভোগ করতে পারলে সবথেকে বেশি খুশি হয়। তমিজের চাষ করা ফসল ঘরে তোলার আনন্দ যেন মলীন ফুলজানের অনুপস্থিতিতে। ব্যাপারটা বেশ মজা লেগেছে অবনির। শেষ না হওয়া পর্বটি শেষ করে অবনি লিখতে বসে যায়। কারণ আজকে লেখাটা জরুরি। মনে জমে থাকা কথাগুলো নতুন কোনো অপ্রয়োজনীয় ভাবনা আসলে উড়ে অপ্রয়োজনীয় ভাবনার ধুলো জমে মলীন যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । সেটা হতে দেয়া যাবে না। অবনীর একটা মাত্র স্টুডেন্ট। সে এ বছর ক্লাস এইটে পড়ে। চব্বিশ সাল আসার পর থেকেই মেয়েটির প্রতি দায়িত্ব পালন হচ্ছে না ঠিকভাবে। মানে আগে শুধু স্টুডেন্ট ফাঁকি বাজ ছিলো, এখন টিচার ও কিছুটা ফাঁকিবাজি করছে। অবনির মনের অপর প্রান্ত তাকে প্রোটেক্ট করার উদ্দেশ্যে ধমকের সুরে বলছে “তুই কী ফাঁকিবাজি করছিস নাকি ব্যস্ত থাকিস?’ হ্যাঁ তাইতো! টুকটাক ব্যস্ত ও থাকে অবনি। তবুও আরেকটু সচেতন হওয়া জরুরি। নিজের অপরাধী মুখ টা আয়নায় দেখা লজ্জার ই বটে। গত সপ্তাহে মিড এক্সামের অজুহাতে মাত্র দুইদিন পড়িয়েছে। এই সপ্তাহে আবার ট্যুর। তবুও বলেছে রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ এ চারদিন টানা পড়িয়ে, বুধবার রাতে ট্যুরে যাবে। সেইমতো কাজ। গতকাল মঙ্গলবার ছিলো। খাওয়াদাওয়া করে বিকেলের দিকে অবনি একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। সন্ধ্যায় পড়াতে যাবে। টেবিলে থাকা ফোনের ভাইব্রেশনে অবনির তন্দ্রা কেটে যায়, কেউ তাকে ফোন দিয়েছে হয়ত। ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে সে দেখতে পেলো, স্ট্রেঞ্জার কলিং ইউ। সে অবনির সিনিয়র। তার ছোটো এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিচয়, অবনি তাকে মোটিভেটর হিসেবেই জানে। সে অবনি কে যত মোটিভেশন দিয়েছে তা যদি সে লিখতো, তাহলে মোটামুটি রকমের একটা মোটিভেশনাল বই হয়ে যেত। অবনি সে ভদ্রলোকটির প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। অবনির জীবনের চরম দূর্যগের সময় লোকটা যদি তাকে সাপোর্ট না দিতো তাহলে হয়তো অবনি ঘুরে দাঁড়াতেই পারতো না। তাই অবনি তাকে মন থেকে অনেক শ্রদ্ধা করে। তার আরেকটা পরিচিতি, অবনীর লেখালেখি নিয়ে অবনির থেকেও বেশি চিন্তা এবং আগ্রহ তার। সে নিয়ম করে দিন কয়েক পরপর অবনিকে জিজ্ঞেস করে লেখালেখি চলছে নাকি। সে ও একজন লেখক। সে অবনীকে বই পড়তে বলে। তার বলা সব কথা অবনীর ভালো ও লাগে। সে মেনে চলতেও চেষ্টা করে। যদিও সে ভদ্রলোক কে অবনি চেনে না ভালো ভাবে। তাইতো স্ট্রেঞ্জার বলে তাকে। স্ট্রেঞ্জার বলার কারণ তার জীবনের বৈচিত্র্য। কখনো অবনীর তাকে অনেক পরিচিত মনে হয় কখনো আবার একদম অপরিচিত মনে হয়। সবমিলিয়ে বিচিত্র ধরনের একজন মানুষ। সে অবনির কাছে নিজেকে সাধারণ দাবি করলেও অবনির মনে হয় তাকে সাধারণ বলে বিবেচনা করলে সাধারণ শব্দটা কে অপমান করা হবে। তার সাধারণ কথা, চলাফেরা সবকিছুর মধ্যেই অবনি অসাধারণ কোনো রহস্যের আভাস পায়। অবনি কখনো সে রহস্যের সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করে না। এই রহস্যময়তাই হয়ত অপরিচিতর প্রতি অবনীর আগ্রহকে অব্যাহত রেখেছে। এই আগ্রহ টা কে অবনি নষ্ট করতে চায়না। এই রহস্যময়তাকে সে উপভোগ করে। স্ট্রেঞ্জার পুরান ঢাকায় থাকেনা। অবনি পুরান ঢাকায় থাকে। সে অবনীকে ফোন দিয়েছিলো এটা জানাতে যে সে পুরাণ ঢাকায় পড়াতে এসেছে। অবনীকে দেখা করার কথা কিন্তু সে বলেনি। কিন্তু অবনি চেয়েছিলো ট্যুরে যাওয়ার আগে একবার তার সাথে দেখা করতে। কী জন্য তা সে নিজেও জানে না। অবনি চুপচাপ শোনে তার কথা। সে জিজ্ঞেস করছে,

“পড়ানো কয়টা থেকে”?

অবনি উত্তর দিলো, “মাগরিবের পরে থেকে”।

স্ট্রেঞ্জার তাকে বললো “আমি এদিকে পড়াতে এসেছি”।

অবনি অপেক্ষা করেছে সে দেখা করার কথা বলবে হয়ত। কিন্তু সে কিছুই বলেনি। তাই অবনি ভেবেছে সে নিজেই বলবে আজকে তাকে, পড়ানো শেষ করে ফেরার সময় যেন দেখা করে তারপর ফিরে। অবনির ভালোই লাগে তার সাথে বসে চিনি ছাড়া চা খেতে খেতে গল্প করতে। তবে তখন অবনি আর নিজে থেকে দেখা করার কথা বলে না। ফোন রেখে দেয়। কারণ দেখা করার কথা বলার আগে অবনীর নিজের পড়ানোর সময়টা ফিক্স করতে হবে স্টুডেন্ট-এর সাথে কথা বলে। এই ভেবে সে তখনি স্টুডেন্ট এর বাসায় ফোন করে। কিন্তু সে স্টুডেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যার্থ হয়। তার আধঘণ্টা পরে স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে ফোন আসে। তার এক্সাম দেয়ার কথা। প্রিপারেশন কমপ্লিট হয়নি তাই স্টুডেন্ট সারে ছটা থেকে পড়তে চায় বলে জানায়। ব্যাপারটা অবনীর ভালো লাগে না। সে জানায় তার একটা কাজ আছে তাই সে আরোও আগে পড়াতে চায়। কী যে কাজ অবনি নিজেও তা জানে না। হয়ত অবনি স্ট্রেঞ্জারের সাথে দেখা করবে বলে ভাবছে। কিন্তু কীভাবে করবে তা ও জানে না। স্টুডেন্ট জানায়, “আপু তুমি এখন বের হলেও তো আসতে আসতে ছটা বাজবে”। অবনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই তো। আপাতত আর কিছু না ভেবেই অবনি স্টুডেন্টকে জানায় আজকে সে ছটা থেকেই পড়াবে। এই বলে ফোন রেখে সে রেডি হতে শুরু করে। হিজাবে পিন লাগাতে লাগাতে সে ভাবে, এখন বের হলে হয়ত স্ট্রেঞ্জার এর সাথে পথে দেখা হয়ে যেতেও পারে। এতক্ষণে তো তার পড়ানো শেষ হওয়ার কথা। এই ভেবে ফোনটা সাইলেন্ট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে সে বের হয়। ইসলামপুরের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে পুলিশ ফাড়ি ক্রস করে আরেকটু সামনে গেলেই অবনির কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যায় স্ট্রেঞ্জার-এর সাথে। যা অবনি ভেবে এসেছিল। ভেবে আসলেও ভাবনামত দেখা হয়ে যেতে পারে তা প্রত্যাশা করেনি অবনি। দেখা হওয়াতে অবনীর ভালোই লাগছিলো। একটু মায়া ও হচ্ছিলো। তার অসুস্থ চেহারার দিকে তাকিয়ে। অসুস্থ শরীর নিয়ে বেচারা এতদূর এসেছে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়