প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যে চিঠি খামে ভরা হয় না

প্রিয় অনিমেষ,
কেমন আছো জিজ্ঞাস করবো না। তুমি কেমন আছো এই মুহূর্তে তা হয়তো সবচেয়ে ভালো আর বেশিটা আমিই জানি। এই বাক্যটা পড়ে হাসছো?
হ্যাঁ একটু হাসি তো পাবেই। ভালো থাকার চাবি যার হাতে তার কথা শুনে হাসার কিচ্ছু নেই। শুধু যে আমার হাতে সে চাবি তা নয়, তেমন একটা চাবি তোমার কাছেও আছে যা আমাকে ভালো রাখে।
অনিমেষ, জীবনের এমন এক সীমানায় দাঁড়িয়ে আজ আমরা দুজন যার হিসাব মিলে না। দুই+দুই=চার হয়, দুই*দুই=চার হয়। কিন্তু আমাদের জীবনে যোগ বা গুণ কিছুই মিলে না। দেখতে সমান্তরাল রেললাইন মনে হলেও বাস্তবতা বাংলা বাঁশের মতো গিঁটে গিঁটে বাঁধা।
আজ সন্ধ্যার পর যখন ঢাকার রাজপথ দিয়ে বাসে আসছি, জানালার পাশেই বসেছি। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে তার পথ ধরে আর আমার স্বপ্নেরা নীড় খুঁজে চলছে গন্তব্যহীনভাবে। বড্ড ইচ্ছে করেছিলো যদি পাশের সিটে তুমি থাকতে হয়তো কিছু সময়ের জন্যে আমার স্বপ্নের যাত্রাটা ভিন্ন হতো। হয়তো এই গানটি দুজনে শুনতাম একই ইয়ারফোনের দুইটি দুজনের কানে দিয়ে-
আমার ভেতরে আছো তুমি, আর তোমার ভেতরে আমি চলো না দুজন কিছু না ভেবে, অজানার পথে নামি
আমার ভেতরে আছো তুমি, আর তোমার ভেতরে আমি ও চলো না দুজন কিছু না ভেবে, অজানার পথে নামি
চলো হাতটা ধরি, আর না ছাড়ি ও চলো হাতটা ধরি, আর না ছাড়ি ও ভাবলেই ভাবুক সবাই বাড়াবাড়ি ও ভাবলেই ভাবুক সবাই বাড়াবাড়ি, বাড়াবাড়ি দুঃখের ভেতরে তুমি সুখী, আর সুখের ভেতরে দুঃখী। দু চোখ বুঁজে চলো না এবার, নিয়ে ফেলি ঝুঁকি।
দুঃখের ভেতরে তুমি সুখী, আর সুখের ভেতরে দুঃখী। চোখ দুটো বুঁজে চলো না এবার, নিয়ে ফেলি ঝুঁকি।
চলো হাতটা ধরি, আর না ছাড়ি চলো হাতটা ধরি, আর না ছাড়ি ও ভাবলেই ভাবুক সবাই বাড়াবাড়ি ও ভাবলেই ভাবুক সবাই বাড়াবাড়ি, বাড়াবাড়ি
এএ. লালা রা-লালা লা
লা লা লা লালা লা লা লালা...
অনিমেষ, যখন আমি এমন যাত্রায় বের হই নিজের পছন্দের গানগুলো শুনতে থাকি। গানের সাথে নিজের স্বপ্নগুলোকে সাজিয়ে নিই। কেনো জানি সেই স্বপ্নের পুরোটা জুড়ে তুমি থাকো না। বারবার স্বপ্নের মাঝে হোঁচট খাই। এটা কিসের ধাক্কা তা কি তুমি বুঝতে পারো?
হয়তো বলবে বাস্তবতা। হয়তো বলবে আমার স্বপ্নের মাঝে দুঃস্বপ্নের বসবাস। যাই বলো না কেনো, আমি পুরো স্বপ্নজুড়ে শুধু তোমাকেই রাখতে চাই।
অনিমেষ, একটা সময় ছিলো শুধু একজন মানুষ খুঁজেছি, পেয়েছিও। এই পাওয়াটার সার্থকতা শুধুই পাওয়া হয়ে লিপিবদ্ধ হলো আমার জীবনখাতায়। বাকিটা তুলে দিয়েছি শূন্য আকাশে। হয়তো কোনদিন সুতাবিহীন লাটাই হয়ে জায়গা করে নিবে তার নিজের ঠিকানায়।
মানুষ পেলেও মন পাওয়ার নেশায় ছুটে চলা এই আমার। কিন্তু...
অনিমেষ, আজ মন পেয়েও আমি শান্ত নই, আমি উম্মাদের মতো মানুষটার পিছু ছুটছি। সত্যি দীর্ঘদিন একটা মন পাওয়া নেশায় ছুটে ছুটে ক্লান্ত আমি। আজ একটা মন পেয়েছি, ঠিক যেমনটি চেয়েছিলাম। বলতে আর বাঁধে না যে,
মন পাওয়া যায় তবু মানুষ পাওয়া যায় না।
প্রিয় অনিমেষ, দখিনা জানালা দিয়ে তোমার ঘরে অনেক হিমেল বাতাস প্রবেশ করে, তবুও আমার প্রবেশাধিকার বন্ধ। তোমার বিছানায় লুটিয়ে পড়ে জোছনা, কিন্তু আমার হাত পৌঁছায় না তার ধারে কাছেও। পশ্চিম পাশের রুমে যখন তুমি সাওয়ার নেও কৃত্রিম ঝর্ণার পানিগুলোতে রোদের ঝিলিককে মুক্তো মনে হয়। কতবার চেয়েছি অমন মুক্তো হতে, ওই যে বাস্তবতার দেয়াল...
আজ স্বপ্নেরা শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে কক্সবাজারের সমুদ্রের ¯্রােতের সাথে। কখনও খালি পায়ের চিকচিকে বালিতে আবার কখনও ঝাঊবনে জোছনার আলো মেখে তুমি আমি হাত ধরে। আচ্ছা অনিমেষ, তুমি কি মধ্যরাতে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাগরের ঢেউ গুণবে?
একটা সময় গুণতে গুণতে রাতের অন্ধকার সরিয়ে আলোকে বরণ করবো আমরা ভালোবাসা দিয়ে।
মনে আছে অনিমেষ, তোমায় বলেছিলাম আমাকে একটা পুতুল কিনে দিতে। তুমি বললে তুমি ও একটা পুতুল, তবে কাঠের নয় রক্তমাংসের। আমি তোমার কাছে মাটির পুতুল চেয়েছি, বলেছো বৈশাখী মেলা থেকে কিনে দিবে। আমিও অপেক্ষায়,
অনিমেষ,
আমি আছি
যতদিন বাঁচি,
আমি স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি।
তুমি না হয় আমার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়েই থেকো। আজ এখানেই রাখি, বাকিটা তোমার কাছে অস্পর্শ থাকুক।
ইতি
তোমার স্বপ্নের ঠিকানা।