প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সোনালি ঈদ আনন্দ

পরিবর্তিত পৃথিবীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে আমি মনে করছি সোনালি সেইদিনের কথা। সমসাময়িক মুসলিম ঐতিহ্য আমার নয়নের সম্মুখে আনন্দের দোল দেয়। সংস্কৃতির রূপ বদলায়। বদলে যায় প্রকৃতি। শুধু মন বদলায় না, মনের মণিকোঠায় কতো কিছু স্মৃতি রোমন্থন হয়ে থাকে। প্রযুক্তির দাপটে সোনালি অতীতের ঈদ আনন্দ হারালেও আমার চোখে আমার তারুণ্যের ঈদ আনন্দ কেবলই শোভন, কেবলই সুন্দর, কেবলই শ্বাশত। তাই হারানো দিনের ঈদ স্মৃতি মনে এনে সুখি হই। যারা ছিলো প্রিয়জন, রক্তে মিশানো, যারা কাছে নেই তাদের মুখগুলো অনুভব করি নিবিড় অনুভূতি ও পরম ভালোবাসায়। যাদের মুখগুলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও দেখা যায় না। সেই সকল মুখগুলোই ছিলো আপন। যারা ছিলো খেলার সাথী, পড়ার সঙ্গী।
আমার শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের ঈদ আনন্দ ছিলো অন্যরকম। শৈশব-কৈশোরের ঈদের আনন্দ ছিলো চাঁদ দেখা, নতুন জামা ও নেলপলিশ কেনা। ম্যাচের কাঠি দিয়ে বোম বানানো। খুব সকালে উঠে কসকো সাবান দিয়ে গোসল করা। ঈদের চাঁদ দেখলে শুরু হতো ছোট ছোট দায়িত্ব পালন। ফুফু বাড়ি, খালা বাড়ি ঈদসামগ্রী প্রেরণ করা তাতো একপ্রকার আনন্দ ছিলো। আবার কখনো কখনো ঈদে কোনো আনন্দই হতো না। কেনো না দারিদ্র্য ছিলো আমাদের সঙ্গী।
আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে আমার তারুণ্যের ঈদ আনন্দ। কেননা তখন আমার চোখে কেবলই রঙিন স্বপ্ন। তখনকার সমাজব্যবস্থা ছিলো মার্জিত ও পরিশীলিত। সামাজিক নিয়মণ্ডকানুন, পারিবারিক শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব ছিলো বেশ। শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্যে সেই নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আমাদের বন্ধুবান্ধব, বান্ধবীদের মধ্যে একপ্রকার সুন্দর ও নিবিড় বন্ধন গড়ে উঠেছিলো। যে ভালোবাসার অনুভূতি ছিলো মধুরও স্বচ্ছ কাচের মতন। তখনকার দিনে ঈদকার্ড ছিলো। আমরা ঈদকার্ড আদান-প্রদান করতাম। দুশো/পাঁচশ’ টাকা জমিয়ে কার্ড কিনতাম।
বন্ধুবান্ধব ও বান্ধবীদের ঈদকার্ড দিতাম। বড়দেরও কার্ড দিতাম। ঈদকার্ড ছিলো ভালোবাসার সুনিবিড় বন্ধন প্রকাশের উপলক্ষ ও অনুষঙ্গ। তখন প্রেমিক-প্রেমিকারা দামিদামি ঈদকার্ড বিনিময়ে করতো। আমিও আমার প্রিয়জনকে ঈদকার্ড দিয়েছি। ঈদকার্ডে লেখা থাকতো নানা ধরনের অনুভূতি। কখনো কখনো গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে ঈদকার্ডের ভাঁজে গুঁজে দিতাম। সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে অনেকেই সরাসরি ঈদকার্ড দিতো না। কেউ না কেউ একজন পিয়নের কাজ করতো। বিশ রোজা হলেই ঈদকার্ড দেয়ার হিড়িক পড়তো। বড় ক্লাসের ভাইয়া ও আপুদের কাছ থেকে অনেক ঈদকার্ড পেয়েছি তখন। ডাকযোগেও ঈদকার্ড পেয়েছি। আমার ছোট্ট খালামণি প্রতি বছর ঈদকার্ড ও চিঠি পাঠাতেন। ঈদকার্ডে লেখা থাকতো নানা ধরনের হৃদয়নিংড়ানো ছন্দ, যা কার্ড প্রাপককে আন্দোলিত করতো। কখনো প্রিয়তমা অভিমান করে লিখতো ‘ফুলতোলা রুমালের ছোট্ট কোণায় লিখবো না কোনদিন ভুলো না আমায়’/প্রিয়জনকে দাওয়াত দিয়ে আরো কত কী লেখা হতো। কেউ কেউ নিজ হাতে কার্ড বানিয়ে পাঠিয়ে দিতো।
আমরা ক’জন ছিলাম- নদী, ফাতিমা, মেহেরুন, শওকত হোসেন, রাসেল, নাজমা, সোনিয়াসহ অন্যরা। আহা আরো কতো স্মৃতি! একেকজন একেকজনের বাড়িতে না গেলে সে কি কান্না, সে কি অভিমান! সে কি যায় ভোলা! এমন সোনালি স্মৃতি, এমন মধুর দিন কী করে বলো হারাবো!