প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
প্রথম প্রেমের মৃত্যু

৬ জুন, ১৯৯৮। মানব জমিন পত্রিকায় আসুন বন্ধুত্ব করি বিভাগে চিঠি দিলাম। ২১ জুন একটি মেয়ের চিঠি পেলাম। বন্ধুর স্টুডিওতে গিয়ে পড়লাম। কেমন জানি অনুভূতি লাগছে। কারণ এটাই কোন মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম চিঠি।
লেখা ছিল, হে প্রিয়, আমি ইশরাত ঢাকা থেকে। পত্রিকায় তোমার ছবি দেখে চিঠি দিলাম। তোমার বন্ধু হতে চাই। বন্ধুত্ব করতে চাইলে চিঠি দিও।
চিঠিটা কয়েকবার পড়েছি তারপরও বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে।
চিঠির জবাব দিলাম। সেও দিল। এভাবে প্রায় দেড়শ চিঠি আদান প্রদান হলো। ঈদ শুভেচ্ছা, ভিউকার্ড, ছবি, বই উপহার দেয়া-নেয়া হলো। তারপর বন্ধুত্ব থেকে শুরু হলো প্রেম। এরপর দেখা করার ইচ্ছা হলো। দেখা করার জন্য তার এলাকায় চাকরি নিলাম। মাঝে মাঝে তার বাসার আশপাশে ঘোরাঘুরি করি, তাকে দেখার জন্যে।
একদিন দালানের ছাদে একটি মেয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। দূর থেকে ভাবছি এটাই ইশরাত হবে। তার দিকে তাকাই আবার লুকাই। কয়েকদিন এই লুকোচুরি চলছিল। পরে চিঠিতে লিখলাম, তোমার বাসার পাশে নারকেল ও মেহেদি গাছ আছে।
তুমি জানলে কী করে? এসেছিলে নাকি? দেখা করলে না কেন?
পরের চিঠিগুলো এরকম, আরে তোমার ভাই শ্যামলতো এলাকার মাস্তান সোহেলের লোক। তাই ভয়ে দেখা করিনি।
ও, আচ্ছা।
ইশরাত তুমিতো ভালো গান জানো। একদিন মন ভরে শোনাইয়।
একবার গান শুরু করব, তখন বলতে পারবা না বন্ধ করো।
মানে কী? আমি কিছু বুঝতে পাড়ছি না।
আহারে! কচি খোকা কিছু বুঝে না। বিয়ের পর সংসার হলে বাজার করতে হবে, শপিং করতে হবে, সন্তানকে স্কুলে আনা-নেয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া আরো কত কী? তখন তো বলবা এইবার গান বন্ধ করো।
হা হা হা। বাহ! তুমি এতো কিছু জানো? তোমার মতো মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। পাবো কিনা জানি না, তবে যতটুকু সম্পর্ক হয়েছে তাতে বুঝলাম তোমাকে পেলে জীবন ধন্য হবে।
ছি! এমন করে বলো না। আমিতো তোমার হতে চাই।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। বাবা-মায়ের অনুরোধে ব্যবসায়ী ছেলেকে বিয়ে করে ইশরাত। আমার প্রথম প্রেমের মৃত্যু হয় সেদিনই। আজও ইশরাত আছে আমিও আছি। কিন্তু কেউ কারো নেই।