প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আমি যাযাবর যতোই হই নিগৃহীত
তোমাদের দ্বারে, যতোই হই উপেক্ষিত
ভালোবাসা মাপতে পারবে না তোমরা!
কোনোদিনও, কোনোখানে;
আমার নিরেট ভালোবাসা কমবে না
কোনোদিনও, কস্মিনকালেও;
আমি আজীবন অবহেলিত এক মানব ভ্রুণ,
পৃথিবীর কোনোখানে যার কোনো দাম নেই
যে পৃথিবীর কাউকে কিছু দিতে পারে না,
খুশি করতে পারে না এমনকি পিপীলিকাকেও!
যার ছায়াতে আছে শঙ্খচূড়ের বিষ,
নিঃশ্বাসে বাতাস ভারি হয়
নদীর জল শুকিয়ে কাঠ হয়
বন উজাড় হয়ে ছেয়ে যায় শিয়ালকাঁটায়,
চোখের জলে পোড়ে লজ্জাবতী!
আমি এক মানব ভ্রুণ।
আমি বেওয়ারিশ, যতোই হই অনাদৃত,
যতোই হই দৃষ্টিহীন
ভালোবাসা দেখবে না কোনোদিনও তোমরা,
দেখবে না আমার এ প্রেম অনাদিকালেও;
খুঁজে পাবে না কোনোখানে
কোনো জনজীবনে আমাকে
লোকালয়ে কিংবা যান্ত্রিক শহরে
ধুঁকে ধুঁকে মরছে যে মানুষ
প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণে
আমি তাদেরই প্রতিনিধি,
ক্ষত-বিক্ষত অবয়ব ইথারে ইথারে;
ভেসে বেড়ায় যাদের ঘর্মাক্ত দেহ এখানে-ওখানে,
যাদের ছোঁয়াতে ফুল শুকিয়ে মাটি হয়
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে
কিংবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত মফিজ সেজে;
বসে থাকে যে ঋজু হয়ে
আমি তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করি।
আমি এক উপেক্ষিত মানব ভ্রুণ;
যার নাম নেই, ঠিকানা নেই, চিহ্ন নেই,
তোমাদের এ মহাফেজখানায়।
.
আজ আর মনে পড়ে না
তোমাকে ভালোবাসি এ কথাটি বলতে গিয়ে
কতবার যে কড়া নেড়েছি তোমার দ্বারে;
কতবার যে তোমার চোখের কাজলে
চোখ রেখেছি,
তা আজ আর মনে পড়ে না।
শীতের সকালে কাক-ডাকা ভোরে
পাটেশ্বর দিঘির জলে
হিরন্ময় জ্যোতি তুমি ছড়িয়েছিলে ;
দাঁড়িয়েছিলে, মেঘ আর বৃষ্টির মোহনীয় আবেশে;
তোমার ঢেউখেলানো আঙুলের ভাঁজে,
আমি কতবার যে খুঁজেছি
বৃষ্টির রিনিঝিনি ছন্দ,
পাতার মরমর শব্দে, আকাশ আর মাটির মোহনীয় দিগন্তরেখায়;
আমি কতবার যে এঁকেছি জোছনার রঙে-
তোমার শুভ্র অবয়ব,
তা আজ আর মনে পড়ে না।
গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে
ধানের শিষে দোল খাওয়া দুপুরে;
রাতচরার পালকের শব্দে
আমি কতবার যে শুনেছি তোমার হৃদয়ের শিষ,
কণ্ঠনালীতে অর্হনিশি তোমার নাম কতবার যে, আমি জপেছি;
মক্তবের তছবি পড়া অবুঝ শিশুর মতো;
তা আজ আর মনে নেই।
তোমাকে ভালোবাসি এ কথাটি বলতে গিয়ে
আমি কতবার যে আড়ালে কেঁদেছি,
চোখের জলে, বঙ্গোপসাগর ধারণ করেছি
তা আজ আর মনে নেই;
মনে নেই।
কিচ্ছু মনে নেই।