প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
কবিতার মূলভাব, উদ্দেশ্য, প্রয়োজন! এসবের সুস্পষ্ট ধারণা আমার নেই। মূলত আমি কবিতা লিখি শখের বসে। কবিতার পঙক্তি, শব্দগুচ্ছ সবই সাবলীল রাখার চেষ্টা করি। ‘মানুষ যা কথায় প্রকাশ করতে পারে না, তা প্রকাশ করে গানে, আর গানেও যার প্রকাশ সম্ভব নয়, তা প্রকাশ করে কবিতায়’। বার্নাড শ-এর এই কথা আমার কবিতা লেখার উদ্দেশ্যের সাথে চমকপ্রদভাবে জড়িত! আমিও ঠিক তাই করি, মানুষের কাছে প্রকাশ করতে না পারা অনুভূতিসমূহের সংমিশ্রণকে আমার কবিতার প্রধান উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করি। ফলে সবসময় নিজর ভেতরে বিনয় মজুমদারের প্রতিচ্ছবি অনুভব করি যেখানে- কবিতা লিখতে গিয়ে মনে হয়, আমি কবিতা লিখতে জানি না।
সুহৃদ শিল্পী
লেখা কোনো সহজ বিষয় নয়
লিখতে সাধনা করতে হয়, শব্দের সাধনা।
আমি কখন কি বলি, মনে রাখার প্রয়োজন নেই
এই চলমান বিশ্বে আমাকে অচল ভাবো কেনো?
বোঝ না- 'সুহৃদ শিল্পীর শিল্প ছাড়া বাকিসব
কঠিন, পাপিষ্ঠ, শুষ্ক! সহজে সহজাত করা ভুল,
হৃদয়ে ধারণা করা ভার! তোমাকে বলি না আর,
শুনি না কোনো কথা।
তোমার অভিযোগহীন অভিমানের কারণ,
পুরোনো ছবির প্রতি একদৃষ্টে তাকানো-
আর, হঠাৎ হঠাৎ শূন্যতা অনুভব করার
কোনো মানে হয় না।
'সুহৃদ শিল্পী' যাকে ভাবো-
সে এখন সমুদ্রের মতো গভীর,
পাহাড়ের মতো অটল, পাথুরে হৃদয়
ধারণে সক্ষম, ভালোবাসা গ্রহণে ব্যর্থ...
প্রতিস্থাপন
বিগত শতাব্দীতে পথ হারা কিশোর!
জবজবে তেল মাখা চুলে,
মধ্যাহ্নের ঘুম রেখে চলে যায় কোথা থেকে কোথা,
চলে যায় মা ও মাটির পার্থক্যের খোঁজে!
ভীষণ দুরন্ত স্বভাব
দৃষ্টিসীমায় এঁটে রাখার সাধ্য কার?
কে আছে থামাবে তাকে-
ভুলিয়ে দিবে তার মেঠো পথ স্মৃতি, তালপুকুর, বাঁশবন, অশ্বত্থের ভয়!
সোনালী ধানের সখা !
দুপুরের উত্তাপ গায়ে মাখা কিশোর,
কেউ নেই নতুন, কেউ নেই কাছে
হিংসা, লোভ, প্রাচুর্যের মোহ; সবকিছু তার কাছে
অচেনা অদ্ভুত!
তার কথা মাথায় এলে
নিজেকে খুব অসহায় মনে করি,
ইচ্ছে হয় কোনো মতে তার স্থানে
নিজেকে বদলে ফেলি!
ভীত মানুষ
ভীষণ আক্ষেপ!
সামান্য চিঠির শূন্যতায়,
কিছু সময়জ্ঞান হারানো মুহূর্ত?
হায়!
কি দুর্ভাগ্য আমার,
প্রিয় মুখ গুলো এতো অদ্ভুত, এতো পাণ্ডুর!
একগুচ্ছ প্লাস্টিক ফুলের বিপরীত
মানুষ খোঁজে পঁচা পদ্ম, ভেজা কদম।
বাস্তব রূপ শীগ্রই প্রাণ হারায়, হে ইশ্বর!
এই সত্য তাদের কে বোঝাবে?
শূন্য বিলবোর্ড, শূন্য হস্ত,
মলিন মুখের পরে মিথ্যে হাসির ছাঁচ!
এতো অমায়িক রিক্ত বাস্তবতা ছেড়ে
মানুষ কেনো মিথ্যে অভিনয়ের আকাঙ্খা করে?
হায় ইশ্বর! আমার বোধহয় না -
মানুষ বাস্তবতা গ্রহণে কেনো এতো পিছ-পা?
উপত্যকা ছেড়ে যেও না
সবুজ ঘাসের বুকে আঁচল ছড়িয়ে-
এভাবে বসে থাকো কেন?
পাখিরা অবাক হয় না?
পাখিরা বোধহয়
বাসা-টাসা ফেলে তোমার দিকে
তাকিয়ে থাকে; আত্মণ্ডঅনুভব!
হে বিনয়ী, অভয়া, অমৃতা!
আমাকে কাছে নিলেই পারো।
গুনে রাখবো প্রতি জোড়া চোখ,
ভিন্ন অস্তিত্বে থাকা অবাক বিস্ময়!
সবকিছু ফেলে রেখে এভাবে বিষন্ন হও কেন?
কিসের এত ভয়, সবই তো কল্পনা।
আমি কাছে থাকি অথবা দূরে তবু
উপত্যকা ছেড়ে, তুমি যেও না..
লোভী ইচ্ছে
মাঝেমাঝে আমাদের কথাগুলো শেষ হয়,
চাপা শ্বাস আর গভীর আক্ষেপে।
নদীর রেখা ধরে বয়ে যায় নিরব স্রোত,
না চাইতেই ভীষণ ভালোবাসি।
অথচ, কি বেঁচে থাকার মিনতি কি করুণ!
মালতী ফুলের কাছে কিছু নেই
কিছু নেই।
বেঁচে থাকা পণ, পথের প্রয়োগে নিঃস্ব
হয় , নিঃস্ব! তবুও বাঁধা দিলে তারে-
হৃদয় ভেঙে কেমন খানখান হয়!
চোখের কাছে যাঁর প্রতিচ্ছবি চাই
সে কি জানে না; কিছু ইচ্ছে, কিছু ক্ষোভ!
মৃত্যুর দিকে এগোতে এগোতে তার
চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার লোভ?