মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বন্ধুর পথের বন্ধু
অনলাইন ডেস্ক

রাত গাঢ় হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইলেকট্রিক ট্রেনের গতি বাড়ছে। আমি শুয়ে আছি কামরার তৃতীয় এবং সবচেয়ে ওপর সারির গাঢ় নীলরঙা বিছানার ওপর। নিঃসংকোচে গা এলিয়ে দেওয়ার মতো আয়েশি বিছানা নয়। হাসপাতাল-ক্লিনিকের শক্ত তক্তপোশের মতো ঝুলন্ত খাট। একটু এদিক-ওদিক হলে ধপাস করে মেঝেতে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ধবধবে সাদা কম্বল জড়িয়ে হাত দু-এক দূরবর্তী শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ভুরভুরে ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টারত আমি যেন কনকনে শীতের রাতে হিমেল হাওয়ার চক্করে পড়েছি! দেশ-পরিজন ফেলে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অচেনা পরিমণ্ডলে চোখের পাতারাও বিদ্রোহ করছে। কিছুতেই তন্দ্রা দেবী এসে মিলছে না। সাক্ষাৎ দূরত্বে ভারত মহাসাগরের তর্জন-গর্জন আর ট্রেনের ঝক-ঝকাণ্ডঝক শব্দের ঐকতান আমাকে আপ্লুত করছে না, বরং বিরহী সুর হয়ে কানে বাজছে।

মধ্যরাতে অকস্মাৎ ট্রেনের সব বাতি জ্বলে ওঠে। গভীর বা আধো ঘুমে আচ্ছাদিত প্রতিটি অবয়বে বিরক্তি স্পষ্ট। একটু পর ভেসে আসে ঘোষণা, দুই ঘণ্টা বাদে ট্রেন চেন্নাই পৌঁছাবে। সেখান থেকে চারটার ট্রেন ধরে আমাদের গন্তব্যে যেতে হবে। বালিশের পরিবর্তে মাথার তলে ফেলে রাখা কাপড়ের ব্যাগটা তুলে নিতান্তই অনীহার সঙ্গে নিচে নামাই। দুই দিনের টানা ভ্রমণে ক্লান্তি জেঁকে বসেছে। পা ফেলতেও ইতস্তত লাগছে। হাতে-মুখে পানি দিয়ে একটু সতেজ হওয়া দরকার। এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না! কিন্তু এমন নিশুতি রাতে চা পাওয়া যাবে কি? ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকি। গত কয়েক দিনে চেহারায় রুক্ষভাব চলে এসেছে। ভেলোরে পৌঁছে একটা দীর্ঘ গোসল দিতে হবে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চায়ের খোঁজে ক্যানটিনের দিকে পা বাড়াই। তিনটা কামরা পার হয়েও ক্যানটিনের খোঁজ মিলছে না। কাউকে জিজ্ঞেস করা বোকামি হবে। বিশাখাপত্তমের পর যারা উঠেছে, তাদের অধিকাংশ অবাঙালি। এদের মধ্যে বাংলা-ইরেজি না জানা গোঁফওয়ালা তামিলের সংখ্যা বেশি। বাঁ দিকের একটা দরজা বন্ধ দেখে ওটা খুলতে যাব এমন সময় কে যেন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরল। ‘কী করছ তুমি! এটা তো ইলেকট্রিক রুম, ভুল করেও ঢুকবে না।’ বয়সে আমার সমান অথবা কিছু বড় হবে, কিন্তু তার কথায় বা চেহারায় পশ্চিমবঙ্গীয় ছাপ একেবারেই নেই। কী দায় পড়েছে আগ বাড়িয়ে আমাকে এভাবে সাবধান করার! সামনে তাকাতেই দরজার ওপর সাঁটা সতর্কবাণী চোখে পড়ে। ফিরে আসে সংবিৎ। নিশ্চিত বিপদ জেনেই সে এগিয়ে এসেছে। বিভুঁইয়ে অপরিচিত কারও কাছ থেকে এমন সাহায্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।ণ্ট‘তোমার মতো আমারও ঘুম আসছে না। অসুবিধা না থাকলে চলো দুজন গল্প করে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দিই।’ ওর কথার সাধারণ্যে, আচরণের স্বাভাবিকতায় অভিভূত না হয়ে পারি না। প্রাথমিক পরিচয়েই আমার বন্ধু হয়ে যায় অনিরুদ্ধ। আলাপচারিতায় জানলাম, কলকাতা থেকে ইন্টার্নশিপের কাজে বেঙ্গালুরু যাচ্ছে। ছয় মাস ওখানে থাকবে।

স্বল্পসময়ের মধ্যে খুব আপন হয়ে উঠেছিলাম দুজন। স্বভাষী বন্ধু পেয়ে খুলে দিয়েছিলাম গল্পের ঝাঁপি। অনিরুদ্ধও যথেষ্ট গুছিয়ে, মিষ্টি করে বাংলা বলে। প্রতিবেশী দুই দেশের তুলনামূলক রাজনীতি, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, শিক্ষা- এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে ট্রেন চেন্নাই পৌঁছায়। স্টেশনে নেমে আমরা চা খাই। ছিমছাম প্ল্যাটফর্মের কংক্রিট বেঞ্চে বসে বেঙ্গালুরুগামী ট্রেনের প্রতীক্ষারত দুজন মুগ্ধ দৃষ্টিতে দূর আকাশের তারা দেখছিলাম। কী আশ্চর্য! আমাকে মোহমুগ্ধ করে অনিরুদ্ধ পর্যায়ক্রমে সব তারার নাম বলে চলে। আর আমি দেখি, আমার ভিনদেশি বন্ধুর বিশাল হৃদয়ের মতো বিস্মৃত আসমানের তারাগুলো আমাদের বন্ধুত্বের স্মারক হয়ে কেমন জ্বলজ্বল করছে!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়