মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

শেষ বেঞ্চের ছাত্র
অনলাইন ডেস্ক

জীবনপাঠে এক স্মৃতি জাগানিয়া সময় স্কুলজীবন। হৃদয়ের ক্যানভাসে জলছবি হয়ে ভেসে উঠে সেসব রঙিনময় দিন। আহা! ছুটির ঘণ্টা যেন কানে এখনও বাজে, মনের রেডিওতে বাড়ি ফেরার আনন্দে মেতে ওঠে। আমার স্কুলের নাম ছিল পূর্বদেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। বাড়ির পাশেই ছিল স্কুল। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন ছিল টিনের ঘর, মাটির মেঝে, কাঠের বানানো চেয়ার-টেবিল আর বেঞ্চ। স্কুলে পোশাক ছিল না সবার। ক্লাসরুমে ছিল না কোনো ফ্যান। গরমের কোনো কোনোদিন খোলা মাঠে, ঘাসের ওপর বসে ক্লাস করতে হতো। বাইরের শব্দে ক্লাসে বিঘ্ন ঘটত। স্কুলের মধ্যে ছিল বড় পুকুর, তার পাশে বড় বাঁশঝাড়। স্কুলের সামনে দিয়ে চলে গেছে বিশ্বরোড। ক্লাস শুরুর আগে চলত শরীরচর্চা। সারি সারি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম।

তারপর শরীরচর্চা শিক্ষক আমীর স্যার ডাকতেন। শুরু করতেন নিয়মিত কোরআন পাঠ, গীতা পাঠ, শপথ পাঠ ও সমস্বরে জাতীয় সংগীত। ভয়ে ভয়ে থাকতাম। নিজেকে লজ্জাবতী গাছের মতো গুটিয়ে রাখতাম। আমাকে যেন না ডাকে। আমাকে যেন স্যার না দেখতে পান। কখনও কখনও স্যার লাইনের পেছনে এসে ডাকতেন। আমার কথা বলার ভেতর একটা জড়তা ছিল। সবার সামনে কথা বলতে পারতাম না। এককভাবে শপথ পাঠ করানো খুব কঠিন কাজ মনে করতাম। তারপর শুরু হতো ক্লাস। আমি বরাবরের মতোই শেষ বেঞ্চে বসা। পড়া মুখস্থ না হলে লজ্জায় চোখণ্ডমুখ লাল হয়ে যেত।

কোনো কোনোদিন অনেকের পড়া হতো না। তারপর স্যারের সঙ্গে যুক্তি করে সবাই গল্প-গুজবে মেতে থাকতাম। অপেক্ষার প্রহর পার করতাম, কখন সময় শেষ হবে। কখন দপ্তরি মতিন ভাই ঘণ্টা বাজিয়ে দেবেন। স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার চলত বিচিত্রা অনুষ্ঠান। ছোট ছোট চিরকুটে নাম লেখা হতো। সেখানে যে গান গাইত তার নাম লিখে ব্র্যাকেটে গান। যে কবিতা আবৃত্তি করত তার নাম লিখে ব্র্যাকেটে কবিতা। কোনো কোনোদিন অন্য কারও নাম লিখে ব্র্যাকেটে গান বা কবিতা লিখে দিতাম। বেশিরভাগ এ কাজটি করতাম কোনো মেয়ের সঙ্গে। কেউ কেউ চুরি করে আমার নামও লিখে দিত।

বাইরে একটু দাঁড়িয়ে থাকলে হেড স্যারের কথা শুনলেই ভয়ে রুমে চলে যেতাম। সব সময় ক্লাস করতে ভালো লাগত না। বার্ষিক পরীক্ষার আগের রাতে শফি স্যার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতেন। কে পড়াশোনা করে আর কে ঘুমিয়ে গেছে, তা নোট করতেন। সেই ভয়ে বেশ রাত জেগে পড়তাম। ফলাফলের দিন সেসব হিসাব বলতেন স্যার। আমার কাছে দুটো সময় খুব আনন্দদায়ক মনে হতো। নতুন বই নেওয়ার আনন্দ আর মার্চ মাসে চলত বার্ষিক খেলার প্রতিযোগিতা। দিনব্যাপী খেলা চলত। খেলার ছলে মেলাও চলত। পুরস্কার বিতরণীর আগে যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠান হতো।

আমরা উপভোগ করতাম। স্কুলে যাব না বলে কেঁদেছিলাম। বিদায় অনুষ্ঠানে কেঁদেছিলাম স্কুল থেকে চলে আসার জন্য। প্রধান শিক্ষক মারা গেছেন। তাঁকে খুব মিস করি। স্কুলজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। ব্যস্ততা যেন তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা কী মনে রেখেছে আমাকে!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়