মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

একজন মায়ের স্বপ্ন
অনলাইন ডেস্ক

আমার ছেলের নাম বিশুদ্ধ। ওর বাবার সাথে নাম নিয়ে আলাপচারিতায় নাম নিয়ে কী জল্পনা সে তো এক উপ্যাখ্যান। ওর বাবা অবশ্য অবশেষে আমার নামটাই মেনে নিলো। বিশুদ্ধকে কোলে নিয়ে ওর বাবাকে বললাম, শোনো বলতে পারো আমি কেনো বিশুদ্ধ নাম রেখেছি?

সোহেল বললো, তার নামের মতো করে সে বিশুদ্ধ মানুষ হবে তাই।

আমি চোখে ভাসা ভাসা পানি আটকিয়ে না রেখে একদমই তাই।

সোহেল সংবরণ করে বললো, সুপ্তি কেঁদো না তো। তুমি ছোটোবেলা থেকে নিশ্চয় এমনভাবে মানুষ করবে দেখবে ও একদম তোমার স্বপ্নের সমান বড় হবে।

বিশুদ্ধ তখন সব প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সে আর্ট করছে। আমি বললাম বাবা, তোমার কটা বন্ধু হয়েছে?

বিশুদ্ধ বললো মা, বন্ধু মানে কী?

আমি বললাম বন্ধু মানে সে তোমার সঙ্গী হবে। যার সাথে তুমি সময় কাটাবে। খেলাধুলা করবে।

বিশুদ্ধ বললো আমি কি বন্ধু বানাবো?

আমি মাথা নেড়ে বললাম নিশ্চয়ই। তবে তোমার বন্ধুরা কে এবং তোমাকে কী বলছে সব আমাকে বলবে কিন্তু।

বিশুদ্ধ বললো, আচ্ছা মা।

কিছুদিন পর বিশুদ্ধ এসে বললো মা, আমার দুটো বন্ধু হয়েছে। আজ আমরা স্কুলের মাঠে হাঁটতে গিয়ে আদিল পড়ে গিয়েছিলো। সবাই হেসেছিলো। আমি এবার বললাম, কেউ ধরে পড়ে যায় তাকে গিয়ে হাত ধরে উঠাবে। কিন্তু কখনো হেসো না।

কয়েক বছর পরের কথা আমার ছেলে কলেজে উঠে গেলো। আমি সেদিন রাতে ওকে ডেকে আনলাম। ওর বাবা আমার সামনেই বসে আছে।

আমি বললাম, জানো বিশুদ্ধ আমি তোমাকে একটা স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছি। বিশুদ্ধ বললো, জ্বি মা জানি তো। বলোতো কী সেটা?

মা সেটা হলো আমি ভালো পড়াশোনা করবো। একজন বিচারক হবো।

আমি বললাম, নাহ বাবা। পেশার স্বপ্ন সেটা জীবনের প্রয়োজনে। কিন্তু আমার, তোমার সব মানুষের ভালোর আমি একটা একটা স্বপ্ন দেখেছি।

বাবা আমি তোমাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেছি তা হলো তুমি একজন বিশুদ্ধ মানুষ হবে। এতোটাই বিশুদ্ধ মানুষ হবে যাতে কখনো অনুশোচনাবোধ তোমার ভেতরে না আসে। আমি এটাও চাই কারো একফোঁটা কান্নার কারণ তুমি না হও। তুমি মানবিক মানুষ হও।

বিশুদ্ধ বললো, মা আমি তো এখনো ভালো ছেলে হয়ে আছি।

আমি মুচকি হেসে বললাম, আমার লক্ষ্মী ছেলেটা।

এবার আমি বললাম, শোনো তোমার এখন বয়ঃসন্ধিকাল চলছে। অনেক ভুলের স্বীকার হতে পারো। যাই যা করো আমাকে আর তোমার বাবাকে বলবে। কখন কার সাথে মিশছো, কে তোমাকে কী বলেছে তাণ্ডও আমাকে বলবে।

বিশুদ্ধ বললো, আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি তো মা।

আমি হাতে হাত রেখে বললাম, না বাবা না, এখনো তুমি সব বুঝতে শিখোনি। তুমি ভয় পেয়ো না। এমনকি কোনো মেয়েকে ভালো লাগে সেটাও তুমি আমাকে বলবে। আমাকে তুমি তোমার বন্ধু ভেবে নাও।

আমার বাচ্চাটা সবচেয়ে সুখী হয়ে গেলো। আমি দেখলাম, আগের চেয়ে প্রাণবন্ত হয়ে যাচ্ছে। সে আমাকে খুলে বলছে। সে যা কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আমাকে আর সোহেলকে বলছে।

বিশুদ্ধ পড়া শেষ করলে আমরা একসাথে খাবার খাই। আমি প্রতিনিয়ত কষ্টের স্মৃতিচারণ করি। বিশুদ্ধ মনোযোগ দিয়ে শোনে। মাঝেমাঝে আমি সোহেল আর বিশুদ্ধকে বলি চলো আমরা চাঁদ দেখি।

বিশুদ্ধ বলে মা, তোমার পছন্দের গ্রিন-টি বানিয়ে আনি। আমি সুখে কেঁদে ফেলি।

মাঝে মাঝে বিশুদ্ধকে নিয়ে আমরা বেড়াতে বের হই। ওকে যখন আমি হাত ধরে হাঁটতে যাই। ও হেসে বলে মা, তুমি আমার হাত ধরো। আমি বরং তোমাকে হাত ধরে উঠাই।

আমি আনন্দে কেঁদে ফেলি। সোহেল বলে এই দেখো তো কিছু হলেই কেঁদে দাও।

বিশুদ্ধ বলে উঠে বাবা, মা যখন কাঁদে কি সুন্দর লাগে জানো।

আমি হেসে উঠি।

আমার ছেলে আজ ত্রিশ বছরের যুবক। আজ আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে বললো, মা আমি আজো কোনো মানবের কান্নার কারণ হয়নি। মা আমি তোমার চাওয়ার মতো মানবিক আর বিশুদ্ধ মানুষ হয়ে থাকার চেষ্টা করছি।

আমি এইবার বললাম, সবে জীবনের শুরু। আমি যেই আদর্শ দিয়ে তোমাকে গড়েছি তা তুমি সারাজীবন ধরে রাখবে।

আমি এইবার বললাম, বিশুদ্ধ তুমি কি কোনো মেয়েকে পছন্দ করো? কেউকে ভালোবাসতে পারো তবে অনুরোধ থাকবে সেই ভালোবাসা যেনো তোমার শেষ ভালোবাসা হয়।

বিশুদ্ধ এবার মুচকি হেসে বললো মা, একটা মেয়ে আমাকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু...

কোনো কিন্তু না মেয়েটা যদি ভদ্র, শালীন, সরল হয় তবে তুমি এক্ষুণি হ্যাঁ বলে দাও। তারপর বললাম, তুমি সরি দ্বীপান্বিতা গানটা শোনো?

বিশুদ্ধ বললো, মা কয়েকবার দেখেছি। সে তো এক পুরানো গান।

দ্বীপান্বিতার মতো কোনো সরলতা তোমাকে পেতে চায় তুমি না করো না। যে তোমাকে ভালোবাসে তাকেই তুমি ভালোবাসো। এতে হবে কী তুমি সারাজীবন সুখী হবে।

বিশুদ্ধ বললো, মা এতোদিন কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসা নিয়ে কোনো কথা বলোনি?

আমি বললাম, আমি সবসময় চেয়েছি তুমি আগে বিশুদ্ধ মানুষ হও। তারপর জগতে সমস্ত ভালোবাসার সন্ধান করো।

বিশুদ্ধ একটা কথা বললো মা, তুমি এতো ভালো কেনো?

আমি এইবার বললাম, কিছু মানুষকে আল্লাহ্ ভালো মানুষ করে পাঠিয়ে দেয়।

আমি বললাম, চলো আমরা চাঁদ দেখি।

বিশুদ্ধ মা দাঁড়াও তোমার প্রিয় গ্রীন-টি বানিয়ে দিই।

আমি মুচকি হেসে বললাম, বাবা, এইদিকে আসো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম বাবা, তুমি বড় হও। বাবা, তুমি এই পৃথিবীতে শুদ্ধ হয়ে বেঁচে থেকো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়