প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ১৪:০৭
পাঠক ফোরামে প্রকাশিত কবিতা

ক্ষুদীরাম দাস
ফুটপাতের মানুষ
আমি বা আমরা ফুটপাতের মানুষ;
অনেকেই, কেউ কেউ!
আমি ফুটপাতের মানুষ
দৃষ্টি আমার ফুটপাতে,
আমি হঁাটি ফুটপাতে,
আমি কিনি ফুটপাতে,
আমি বেচি ফুটপাতে,
আমি খাই ফুটপাতে,
আমার হাসি-কান্না ফুটপাতে,
নোংরা ফুটপাত,
তবুও আমার জীবন; আমার সম্পদ।
ফুটপাতে প্রধান সড়ক দেখি;
জীবনের প্রধান ছায়ামাত্র।
ফুটপাত প্রতিবন্ধক দ্বারা পৃথক,
জীবনের ক্ষেত্রগুলোও তাই।
ফুটপাত দখল হয়,
ফুটপাতের মানুষও দখল;
মানুষের হাতে!
সজীব খান
ধর্ষিতা মেয়ে
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে
আমি যে দম নিতে পারছি না
কুকুরগুলো যেভাবে আমাকে জাপটে ধরেছে।
বেলা যায় বেলা আসে
আমি কি আর ফিরিতে পারব না
কানামাছি ভেঁা ভেঁা
যাকে পাবি তাকে ছেঁা
আমি কি তাহলে সেই ছেঁায়ার শিকার।
কত সুন্দর রঙিন পৃথিবী
ঘুরবো আনন্দ করবো উল্লাস করবো
কত স্বপ্ন ছিল বুকে মা।
নরপিশাচগুলোর যৌন লালসায়
আমার রঙিন পৃথিবী যে
অন্ধকার হয়ে আসছে।
আমি যে ধর্ষিতা
গণধর্ষণের শিকার
সমাজে কীভাবে বঁাচবে তোমার ধর্ষিতা মেয়ে।
স্বাধীন বাংলায়
আমি তো স্বাধীন নই
আইনের যঁাতাকলে
বেরিয়ে যাবে ধর্ষক
আমি তো ক্ষত দেহ নিয়ে
জ্বলবো তুষের দহনে।
আশরাফ চঞ্চল
অধিকার
আমরা শোষিত জন্ম জন্মান্তর ধরে
আমরা নিরীহ
ভদ্র
শান্তিপ্রিয় বলেই তোমরা আমাদের রক্ত খেয়ে যাও; কিচ্ছু বলি না!
তোমরা আমাদের মাথায় কঁাঠাল ভেঙে আয়েশ করে খাও
এসিরুমে বসে কাঠফাটা রোদ্দুরে ঘুরাও
ঝড় বৃষ্টি ধুলোয় অসুখে জর্জরিত হয়েও মাঠে পরে থাকিÑ
সম্মুখে লোভের মুলা ঝুলিয়ে রেখে
গল্পের হাবলা রসুন চাষীর মতো আমাদের পেটেভাতে খাটাও
ফসল নিয়ে যাও তোমরা!
তোমরা এসিরুমে বসে মুখরোচক আলাপে ব্যস্ত থাকো
পরিবার পরিজন নিয়ে রাজার হালে থাকো
আমাদের ঘামের টাকায় নিজেরা আকাশচুম্বি দালান তুলো
দামি গাড়িতে চড়ো; আমাদের আপত্তি নাই!
কিন্তু আমাদের সম্মুখ থেকে যখন পান্তাভাতের থালাটাও কেড়ে নিতে চাও
আমাদের পায়ের চটি জুতা
পরনের পুরাতন শার্ট-প্যান্ট
উসকো খুসকো চেহারা দেখে যখন হাসি মশকরা করো
তখন খুব খারাপ লাগে রে বাপু!
মন চায় জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার মতো রাজপথে গিয়ে পুরো কাওরান বাজার কঁাপিয়ে দিই!
আমরা খুব নিরীহ ও গরীব
আদতেই যে শান্তিপ্রিয় নিশ্চয়ই সেটা এতোদিনে ভালোভাবেই বুঝে গেছো!
তোমাদের বিনয়েই বলে রাখিÑ
আমরা শুধু প্রাপ্য পারিশ্রমিক চাই
ন্যায্য অধিকার চাই
সুরম্য অট্টালিকা নয় শুধু একটু মাথাগেঁাজার ঠঁাই চাই
ছবি-১৭
আবু ইউসুফ
আবেদন
স্নিগ্ধ ভোরের শিশির গ্রীষ্মের পুলক, বর্ষার তিক্ততা, শীতে অস্বস্তি; নাঙ্গা পায়ে,
ইচ্ছা অনিচ্ছায় দলিত হয়েছে যত পদ যুগল স্নান।
ফুটফুটে ভোরের আলো, মিষ্টি মিষ্টি রোদের ভ্যাপসা ঘ্রাণ।
নান্দনিক অস্তাচলের আলো পুলকিত হৃদয়ে স্মৃতির স্লোগান।
আধো আলো আধো অঁাধার কালো থেকে কালো ঔজ্জ্বল্যের আবরণে নব শশীর আগমন।
নিরেট খঁাটি কক্ষপথে ফিরে আসতে বারবার করি বিনীত আবেদন।
স্ব-স্থানে পারাস্রিত
প্রভাত প্রতিশোধের আভায় আবেশিত হলে
কোথাও খুশি কোথাও ব্যাথিত প্রাণ,
কোথাও ক্ষতবিক্ষত অসহ্য যন্ত্রণার আয়োজন।
কেউ মা-বাবা, ভাই-বোন হারায়, কোথাও জনমানবশূন্য।
দখলের ভাবনায়, বেদখল যত প্রাণ অর্ধশত বছরের পীড়ন।
মানবতার গানের আয়োজক যারা, তারাই ঘৃণ্য খেলায় মত্ত।
আশার বন্ধুত্ব, তলে তলে উচ্ছেদের হলিখেলা।
নবজাতকদের নিঃশেষ চিৎকারে বাতাস নিত্য ভারি ভারি।
কবে কখন কোথায় কীভাবে শেষ হবে তিমির পথ পাড়ি?
ছবি-১৭
মুহাম্মদ কাউছার আলম রবি
ওরা মানুষ নয়
উৎসর্গ : প্রিয় ফিলিস্তিনের মাজলুম ভাই-বোনদের।
বাতাসে বারুদের ঝঁাঝালো গন্ধ, যেদিকে চোখ যায় শুধু ধংশস্তূপ,
ওরা লাল রং ভালোবাসে,
তাই তো রক্তের বন্যায় হোলি খেলে,
ওরা মানুষ নয়Ñ
ওরা শিয়াল শকুন শ্বাপদ সংকুল।
ওরা সভ্যতার বড় দুশমন,
মুসলিম নিধনে ওরা নেমেছে নানা কৌশলে,
ব্যবহার করছে প্রযুক্তির সব রসদ,
ভঙ্গ করছে যুদ্ধ বন্ধের শত চুক্তি,
ওরা অমানুষ, নেই হুঁশ,
একত্ববাদের দোষে দোষী হয়ে শহিদ হচ্ছে শতপ্রাণ,
কোথায় আছো ওগো ওমর-আলী-ওসমান,
আজ মুসলমানের দুঃখে কঁাদছে ধরণী সমীর আসমান।
ছবি-১৭
মহসিন আলম মুহিন
মোমের মতো প্রেম
মোমের মতো পুড়ে পুড়ে জ্বলে গলে শেষ,
এটাই কি প্রেম? জ্বালা জ্বালা নাই শান্তির লেশ।
দক্ষিণা পবন? কোথায় ফাগুন? কোকিল ডালে কই,
আনন কোথায়? কানন ফঁাকা! নাই কোথাও সই।
স্বপ্নভরা নয়ন দুটি ঢাকলো মেঘে যেন,
কালো মেঘে নিভলো আলো, জ্যোতিরা নেই কোনো।
কত আশা ভালোবাসা হারিয়ে গেছে সব,
আনন্দ শেষ! হেথায় এখন দুঃখের কলরব।
নিজে পুড়ে অন্যের ঘরে আলো জ্বালায় সদা,
মোমের মতো পুড়ে পুড়ে জমে হৃদয়ের শোকগঁাথা।