সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

বাজি
অনলাইন ডেস্ক

ঈদ শব্দটির মধ্যেই রয়েছে এক খুশি বা আনন্দের সংবাদ। এই ঈদকেই ঘিরে রয়েছে শৈশবের নানা রকমের ইতিহাস। শৈশবের এক স্মৃতি রচিত ঘটনা আমাকে আমার শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দীর্ঘ এক মাস রোজা। রোজা শেষ হলেই ঈদ। আর ঈদ মানেই আনন্দ। তখন আমার বয়স ১০/১১। রমজান এসেছে তাই মনের মধ্যেই এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিলো এটা ভেবে যে রমজান এর পরেই ঈদ। ঈদের জন্যে তখন অনুভূতিটাই ছিলো অন্যরকম। তখন আমি রোজা রাখার জন্যও অনেক বায়না করতাম। কিন্তু পুরো দিন রোজা রাখতে পারতাম না বলে দুপুর পর্যন্ত এক রকম রোজা রাখতাম এ রকম ২দিনে একটি রোজা রেখে মনকে শান্ত¡না দিতাম।

আমার একটা স্বভাব ছিলো যে আমি একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছিলাম। সারাদিন কারো না কারো সাথে আমার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। কখনো কারো জুতা নিয়ে পুকুরে ফেলে দিতাম বা কখনো কারো ভাগের চিপস্ কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলতাম। এক কথায় সবার সাথে হাসি আনন্দে মেতে থাকতাম। তখন যদি কাউকে ভয় পেতাম তাহলে সে ছিলো আমার আব্বু। অনেকটা রাগী স্বভাবের মানুষ উনি। যতোই সারাদিন দুষ্টুমি করি না কেনো আব্বু বাসায় আসলে অনেকটা ভদ্র হয়ে যেতাম। পড়াশোনা করতে বসতাম।

একমাত্র উনাকেই আমি সবচেয়ে ভয় পেতাম। রমজান যতোই যাচ্ছে আমার আনন্দটাও বাড়তে শুরু করছে। কারণ ঈদ আসলেই নতুন জামাকাপড় মার্কেট করা ঘুরা সব কেউ কিছু বলার কোনো সুযোগ থাকে না। এভাবেই দিন পেরুচ্ছে আর ঈদের আনন্দ বাড়তেই চলছে। এখন ঈদের আর মাত্র অল্প কয়দিন বাকি সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। তারপর আমিও আমার ইচ্ছে মতো অনেক কেনাকাটা করলাম। আর নিজে নিজেই বলতে লাগলাম, ‘কেনাকাটা তো করেই পেললাম কিন্তু এখন যদি কেউ আমার এগুলো যদি দেখে ফেলে তাহলে কি হবে আমার তো আর ঈদ থাকবে না’। এ রকমই একটা মনোভাব ছিলো ছোট বলায় সবার। তাই চুপি চুপি মার্কেট করে এসে সব কিছু লুকিয়ে ফেললাম কাউকে ঈদের আগে কিছুই দেখাবো না। এ রকমই শৈশবের কিছু কিছু ঘটনা আমাকে প্রতিনিয়ত হাসায়। তারপর অবশেষে ঈদের নতুন চাঁদ দেখা গেলো রমজান এ সিয়াম সাধনা শেষ হলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়স্বজনরা আসছে। আমারো আনন্দের কোনো সীমা থাকছে না সবার সাথে হাসি আনন্দে মেতে উঠছি। বাড়িতে একটা হৈচৈ ও আনন্দের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সবাই সাজসজ্জা করতে ব্যস্ত। তাই আমিও একটু সাজসজ্জা করতে বসে গেলাম। হাতে মেহেদী দিতে বসলাম। বড়ো দাদুকে এনে পাশে বসালাম কারণ মেহেদী দিতে একটু সময় লাগে আর আমি একা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তো আমি যতক্ষণ মেহেদী দিচ্ছি ততক্ষণ দাদুকে বসিয়ে তার কাছে গল্প শুনতাম। আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প ছিলো ভূতের গল্প তো দাদু আমাকে প্রায় প্রতিদিন এসব গল্প শোনাতে থাকতো। সবসময় নতুন নতুন কাহিনি নিয়ে গল্প বলতেন তিনি আর এভাবেই আমি আমার বিকেল বেলা পার করতাম। এমন করে ভূতের গল্প শোনার মাধ্যমে আমিও মেহেদী দেয়া শেষ করলাম। একে একে সবাই এসে মেহেদী দিতে লাগলো। এবার হচ্ছে ঈদের সবচেয়ে মজার বিষয় বাজি ফুটানো। বাজি কেউ ফুটায় নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল সবাই শৈশবে বাজি ফুটিয়েছেন। তেমনি আমিও বাজি ফুটানোটা খুবই উপভোগ করতাম। কিন্তু ঐদিক দিয়ে আমাকে আব্বু বলে দিয়েছে কোনো বাজি যাতে না ফোটাই। কিন্তু কে শুনে কার কথা! আমিতো আজকে বাজি ফুটাবোই আমার বাজি চাই-ই চাই।

অনেক কান্নাকাটি করলাম বাজি কিনে দেয়ার জন্যে আমাকে তারা কিনে দিবেই না অবশেষে তাদের কাছে তা না পেয়ে মন খারাপ করে বসে রইলাম। অতঃপর কাকা এসে দেখে আমি মন খারাপ করে বসে আছি কাকা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিরে কি হইছে? মন খারাপ কেন?’ আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে উত্তর দিলাম কেউ আমাকে বাজি কিনে দেয় না ফুটাতেও দেয় না। তখন কাকা হাসতে হাসতে বললো, ‘ও, এই ব্যাপার। আচ্ছা চল আমি তোকে কিনে দিবো।’ আমিতো মহানন্দে লাফাতে লাফাতে কাকাকে জড়িয়ে ধরলাম। পরে কাকার হাত ধরে নাচতে নাচতে বাজির দোকানে গেলাম। গিয়ে দেখি নানা ধরনের বাজি দিয়ে দোকান সুসজ্জিত। কাকা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোনটা কিনবো?’ আমি কোনটা রেখে কোনটা নিবো ঠিকই করতে পারলাম না তখন কাকা নিজেই আমকে কিছু বাজি কিনে দিলো। আমি তারা বাজি, রকেট বাজি, চকলেট বাজি আরো নানা বাজি কিনলাম। বাজি পেয়ে বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে করতে বাড়ি থেকে বের হলাম। আর এটাই আমার শৈশবের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডিও মনে রাখার ঘটনা। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে খুবই হাসি আনন্দে মজা করতে লাগলাম। চারিদিকে কোলাহল চারিদিকে বাজি ফুটানোর আওয়াজ পরিবেশকে আরো আনন্দদায়ক করে তোলছে। সবাই বাজি ফুটাতে লাগলাম এবং বাজির প্রতিটি আওয়াজ এই এক একটি হাসি আনন্দের খোশ নিয়ে আসে। এমন বাজি ফুটাতে ফুটাতে কখন যে রাত ১২টা হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। যাক এখান দিয়ে বাড়িতে আমাকে খুজতে খুজতে সবার আনন্দের পরিবর্তে কান্না শুরু হয়ে গেলো। পরে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার বন্ধুদের সাথে বাজি ফুটাতে দেখছে, তখন আব্বু রেগে গিয়ে আমাকে বকাঝকা শুরু করছে তখন আমি ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। আমিও দৌড় দিচ্ছি আব্বুও আমাকে পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে মার খাবার ভয়ে ঘরে না গিয়ে বাড়িতেই এক কোনায় লুকিয়ে ছিলাম। তারপর আমাকে খুঁজতে খুঁজতে আব্বু ঘরের দরজা আটকে দিলো এবং ঘুমিয়ে পড়লো। ঈদের এই খুশীর দিনে আমার এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমাকে আজও স্মরণ করিয়ে দেয়। তারপর কিছুক্ষণ থাকার পর কিছুটা মনের মধ্যে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেলো কারণ প্রায় সময়ই ভূতের গল্প শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত। তাই একটু হলে গা কাটা দিবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি করবো এদিক দিয়ে ভয় ও লাগছে অন্যদিক দিয়ে প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। কিছুক্ষণ খুঁজে ঘুমানোর জায়গা খোঁজেও পেলাম না। তারপর হঠাৎ ছাদের কথা মনে পড়লো। চুপি চুপি ছাদে উঠতে গিয়ে দেখি ছাদের দরজা বন্ধ। মাথায় হাত দিয়ে বললাম হায় এখন কি করবো। পরে আর কোনো উপায় না পেয়ে নিচে আসে পাশে ঘুরতে লাগলাম আজ যেকোনো উপায়ে ছাদে উঠতে হবে। পরে দেখলাম যে ছাদের পাশে একটা সুপারীগাছ ছিলো। ওইটা দিয়ে সহজেই ছাদে উঠা যাবে। কিন্তু আমি ছাদে উঠবো কিভাবে আমিতো গাছেই উঠতেই পারি না। মানুষ চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছুই নয়। আজ যে করেই হোক আমাকে ছাদে তো উঠতেই হবে। মনে অদম্যশক্তি আর সাহজ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেলাম ছাদে উঠার জন্যে। তারপর আর কি অনেক চেষ্টা ও বুক ধড়পড় এর মধ্য দিয়ে উঠে পরলাম ছাদে। এখন একটাই কাজ তা হচ্ছে ঘুম যাওয়া। সুন্দর মতো ছাদে একা শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে লাগলাম। একেবারে যে শান্তির একটা ঘুম দিয়েছি তাণ্ডও নয় মশারা আমাকে গিলে খেতে লাগলো একবার এ-পাশ তো একবার ওপাশ হয়ে মশা তাড়াতে তাড়াতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে চোখের পলক মেলতেই দেখছি সবাই আমার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসতেছে। কিছুটা লজ্জাবোধ হচ্ছিলো তারপরও উঠে ভয়ে ভয়ে ঘরে গেলাম। তখন পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়েছিলো এবং আব্বুর রাগও এখন অনেকটা কমে গিয়েছে। যেটা নিয়ে আমার এতো প্লান সেই ঈদে যদি আনন্দ না করতে পারি তা কি করে হয় তাই আর মন খারাপ না করে গোসল করে নতুন জামাকাপড় পড়ে আগের সব ভুলে গিয়ে নতুন করে ঈদের আনন্দ উপভোগ ও উদ্‌যাপন করতে লাগলাম। আনন্দ-উল্লাসে সবাইকে মাতিয়ে রাখলাম। ঈদগাহে নামাজ পড়তে গেলাম। এসে পায়েস সেমাই খেয়ে সবাইকে সালাম দিতে গেলাম। কারণ ছোটবেলায় আমাদের ঈদ আসলেই সবার নজর বকশিশের দিকেই থাকতো। একদফা বকশিশ নেয়ার পর পকেট যখন সম্পন্ন ভর্তি তখন বন্ধুদের সাথে অনেক জায়গায় ঘুরতে গেলাম, খাওয়া দাওয়া করলাম। প্রচণ্ড আনন্দণ্ডউল্লাস এর মধ্য দিয়ে আমার ঈদ শেষ করলাম। সবাই সেই ঈদকে ভুলে গেলেও আমি কখনোই ভুলতে পারিনি। কারণ শৈশবের প্রতিটি বিষয়ই খুবই আনন্দদায়ক। আমাদের সবাইকেই এই অতীত স্মৃতিচারণ করে রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়