সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

জ্যোৎস্নাময় অদ্ভুত রাত
অনলাইন ডেস্ক

(গত সংখ্যায় প্রকাশিতের পর ॥ পর্ব-২)

ঐশীর খুনের পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ বিভাগ। কারণ এক সাথে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি পুলিশ বিভাগের জন্যে বিব্রতকর। অন্যদিকে পত্র-পত্রিকায় ঐশীর খুন লিড নিউজে ছাপা হয়। চারদিকে আতঙ্ক। সবাই ভয়ে আছে এরপর কি হবে। পুলিশ পুরোদমে তদন্ত শুরু করে। এর পিছনের ঘটনা উদ্ধার করে নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে হবে। পুলিশ তাদের তদন্তের কাজ শুরু করে। খুনের রহস্য উন্মোচন যে কোনোভাবে হোক উদ্ঘাটন করতেই হবে তাদের। সিনিয়র এএসপি গতকাল তার সার্কেলের ওসিসহ সবার সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেছেন। যে কোনোভাবেই হোক খুনিকে ধরা চাই-ই চাই।

ঐদিন বিকেলের দিকে আবার জ্ঞান ফিরে রুপমের। বাসায় ফিরে আসে সে। তবে রাতের ঘটনার পর রুপম ভয়ে আছে। কারণ রুপম এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না কিসব উদ্ভুত কাণ্ড হয়েছিলো রাতে। বাসায় আসার পর অনেকে রুপমের সাথে দেখা করতে আসে। অনেকে জানতে চায় কি হয়েছিলো রাতে। রুপম বলতে চায় না। নয়টার দিকে বাড়ির মালিক সাজ্জাদ সাহেব রুপমের সাথে দেখা করতে আসে। তার অনুরোধে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিস্তারিত সাজ্জাদ সাহেবকে বলে রুপম। সাজ্জাদ সাহেব শুনে একবারে নিরুত্তর। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার। এ যেনো সাধারণ কোনো ঘটনা। সাজ্জাদ সাহেব বলেন কি বলো বাবা। এটা কোনো ঘটনা হলো? তুমি ভুল-ভাল কিছু দেখেছো হয়তো। এমন কিছু মনের ভুলের কারণে হয়। ভয় পেয়ো না। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানিও। এই বলে চলে যান সাজ্জাদ সাহেব। আসার সময় তিনি কিছু ফলফলাদি এনেছেন রুপমের জন্যে। যাওয়ার সময় তিন হাজার টাকা দেন রুপমকে। এই নাও বাবা এই টাকাগুলো রাখো তোমার কাছে। রুপম ইতস্তত করে। সে টাকা নিতে চায় না। সাজ্জাদ সাহেব জোর করে টাকাগুলো দিয়ে যায় এই বলে তুমি ছাত্র মানুষ, অনেক টাকা খরচ হয়েছে তোমার। আংকেল দিয়েছি কিছু মনে না করে রেখে দাও। আমার ছেলে হলেও তো আমি তাই করতাম। জোরাজুরিতে রুপম টাকা রাখে। সাজ্জাদ সাহেব চলে যায়। এরপর পাশের বাসার আরও কয়েকজন দেখা করতে আসে রুপমের সাথে। সবাই রুপমকে বলে এটা তোমার মনের ভয়। রুপমও তাই ভাবে। এমন কিছুই হয়তো।

এদিকে ঐশী খুনের দুই দিন পর নদীর সাথে লাগোয়া জঙ্গলে জিকুর লাশও পাওয়া যায়। অর্ধগলিত পঁচা লাশ। মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। জিকুর মৃত্যুর পর সবদিকে আতঙ্ক। কি হচ্ছে এ শহরে। সব নিউজ পেপার টানা এক সপ্তাহের মতো এ নিউজই করে যাচ্ছে। এ ঘটনার পর রুপম চূড়ান্ত মাত্রায় ভয় পেয়ে যায়। ঘটনার দিন রাতেও তো জিকুর সাথে কথা বলেছে রুপম। জিকু তো বলেছিলো সে খুলনায়। তাহলে এখানে তার লাশ আসলো কিভাবে। রুপম যেনো তার নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। মোবাইল হাতে নিয়ে আউটগোয়িং কল চেক করে। না ঠিকই তো আছে। জিকুর নাম্বারই তো। পুলিশ আসে রুপমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। রুপম জিকুর শহর ছেড়ে খুলনায় যাওয়ার কথা বলে। রুপম ভীষণ ভয়ে আছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেছে সে। ঐ রাতে তার সাথে কিসব ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটেছে। জিকুর পঁচা লাশ। সাথে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে সবুজ, ঐশী খুন। সব কিছু কেনো যেনো এলোমেলো লাগে রুপমের কাছে।

এখনো সবুজ ও ঐশীর খুনের ঘটনার কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সাথে জিকুর খুনেরও। ঐশী খুনের পর আজ ঊনপঞ্চাশ দিন হতে চলেছে। পুলিশের এসআই জাহিদকে এ তিন খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব দেয় পুলিশ বিভাগ। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাহিদ। পুরাতন ব্রিজের কাছে টহল জোরদার করে পুলিশ। চারদিকে পুলিশের অতিরিক্ত নজরদারী। কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়ে না পুলিশের। ভয়ে পুরাতন ব্রিজের ওইদিকে কেউ আর চলাফেরা করে না এখন। আগে যারা কলেজে ওই পথ দিয়ে যেতো তারা এখন পথ চেঞ্জ করে বানিয়াপাড়ার চিকন পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে কলেজে যাওয়া আসা করে। সময় পেরোয়, দুই মাস-তিন মাস এভাবে সময় অতিক্রান্ত হয়। আস্তে আস্তে সব কিছু সহজ হয়ে আসে। সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পুরাতন ব্রিজ দিয়ে আবার যাতায়াত শুরু করে সবাই। কোনো ভয় নেই যেনো। মাঝে মধ্যে একজন লোককে দেখা যায় ব্রিজের আশপাশে। কি যেনো খুঁজেন মনে হয়। কিন্তু কারো মনে কিছু যায়-আসে না। খুনের ঘটনা কিছুটা ধামাচাপা পড়ে গেছে ইতিমধ্যে। তাই অনেক আগেই পুলিশের টহলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে পুলিশ অফিসার এসআই জাহিদ এখনো হাল ছাড়েননি। তিনি একজন কনস্টেবলকে মাঝে মধ্যে সিভিল ড্রেসে পাঠান ব্রিজের এইদিকে। যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায়, তবে রে! ঐদিন ব্রিজের ওইদিকে একজনকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে কনস্টেবল। জাহিদকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন কনস্টেবল। জাহিদ লোকটির পিছু নিতে বলে। লোকটির পিছু নেয় কনস্টেবল। মেইন রোডের কিছু দূর যেতেই লোকটি একটি বাসে উঠে পড়ে। বাস চলে যায় পূর্ব দিকের শহরের দিকে।

আজ রুপমের সাথে বাজারে হঠাৎ করে দেখা এস আই জাহিদের। জাহিদ রুপমকে জিজ্ঞাসা করে কোনো সমস্যা আছে কি না। রুপম না বলে উত্তর দেয়। এর কিছুক্ষণ পর দেখা হয় সাজ্জাদ সাহেবের সাথে। সাজ্জাদ সাহেব এসআই জাহিদকে খুনের মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। কত দূর এগোলো তদন্ত? এর আগে একদিন থানায় জাহিদের সাথে সাজ্জাদ সাহেবের পরিচয় করিয়ে দেয় সবুজের বাবা রেদোয়ান সাহেব। লাস্ট একবার রেদোয়ান সাহেব থানায় যাওয়ার সময় বন্ধু সাজ্জাদ সাহেবকে সাথে করে নিয়ে যায়। সেখানে পরিচয় তাদের। সাজ্জাদ সাহেবের প্রশ্নে হতাশ হয় জাহিদ। এ অবস্থায় সাজ্জাদ সাহেবকে আত্মপ্রত্যায়ী মনে হয়। সাজ্জাদ সাহেবের মুখে কেন জানি হাসি লেগে আছে। জাহিদের বিরক্ত লাগে। লোকটাকে অসভ্য মনে হচ্ছে। অন্যকে বিব্রত করে যেনো ভালো লাগছে তার। অবশ্য একে দোষ দিয়ে কি লাভ, আজকাল অনেকেই এ রকম আচরণ করে পুলিশের সাথে। শহরে যা ঘটুক, সব কিছুর দায় যেন পুলিশের। মনে মনে চরম মাত্রায় বিরক্ত হয় জাহিদ। সাজ্জাদ সাহেব বিদায় নেয়। জাহিদও চলে যায় থানায়। এর কয়েকদিন পর ব্রিজের দিকে আবার একজন লোককে দেখতে পায় কনস্টেবল। আজ আবার লোকটির পিছু নেয় কনস্টেবল। আজ লোকটি বাজারে এসে একটি গলির ভেতরে প্রবেশ করে। কনস্টেবল এসে আজও খুঁজে পায়নি লোকটিকে। তবে আজ জাহিদকে লোকটির ব্যপারে রিপোর্ট করে কনস্টেবল।

লোকটির সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে জাহিদের ভ্রু নেচে ওঠে। কেনো যেনো হাসির রেখা ভেসে ওঠে জাহিদের মুখে। কনস্টেবল কিছুই বুঝতে পারেনি কারণ কি। জাহিদ নিজে আবার লেগেপড়ে তদন্তে। লোকটির খোঁজ করে আশপাশে কিন্তু কয়েক দিন আর দেখা নেই লোকটির। ব্রিজের দিকেও আসে না। জাহিদ রুপমকে থানায় ডেকে পাঠায়। রুপম গেলে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে এসআই জাহিদ। সাজ্জাদ সাহেব সম্পর্কে কতগুলো প্রশ্ন করে। রুপম বলে, সাজ্জাদ আংকেল? উনি তো একজন ভালো মানুষ। অনেক আদর করে আমায়। তবে অনেকে বলেন, উনি নাকি ভীষণ রাগী। রাগলে নাকি খুব ভয়ংকর। তবে চুপচাপ থাকে বেশির ভাগ সময়। কারও সাথে অপ্রয়োজনে খুব একটা কথা বলেন না তিনি। জাহিদ রুপমের কথার সাথে মিলাতে পারে না সাজ্জাদ সাহেবকে। তাহলে উনি ঐদিন বাজারে আমার সাথে যেচে কথা বললেন কেন? ভাবতে থাকে পুলিশ অফিসার জাহিদ। ধুর, কি সব ভাবছি। এর পরদিন জাহিদ রুপমের বাসায় আসে। রুপম দরজা খুলে দেয়। জাহিদ আর রুপম কথা বলছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে রুপমের রুমে আসে বাড়ির মালিক সাজ্জাদ সাহেব। জাহিদ অবাক হয়। ব্যাপার কি! আপনারা বেগার খাটছেন। ঐসব খুন মানুষ করতে পারে না। এটা মানুষের কাজ না। হয়তো কোনো ভুত, প্রেত মেরেছে ওদের। বলতে থাকে সাজ্জাদ সাহেব। মনোযোগ দিয়ে শুনে জাহিদ সাহেবের কথা। কথা শুনে জাহিদের সন্দেহজনক মনে হয়। কনস্টেবলের করা রিপোর্টের সাথে কেন যেন অনেক কিছু মিলে যাচ্ছে সাজ্জাদ সাহেবের। আবার রুপমের বর্ণনার সাথে পুরো বিপরীত।

সন্দেহভাজন হিসেবে সাজ্জাদ সাহেব পরদিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পুলিশি রিমান্ডে সাজ্জাদ সাহেব খুনের কথা স্বীকার করে। আস্তে আস্তে সাজ্জাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। কিভাবে খুন করেন, বলতে শুরু করেন সাজ্জাদ সাহেব। সাজ্জাদ সাহেবের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন সবুজের বাবা রেদোয়ান। তাও আজ থেকে বছর পনেরো গত হয়েছে। সবুজের বাবার একটা ভুলের কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের লস হয় সাজ্জাদ সাহেবের। ব্যবসার যেহেতু সিংহভাগ শেয়ার সাজ্জাদ সাহেবের ছিল, লসটা মূলত তার উপর দিয়েই যায় বেশি। লস গুনে সাজ্জাদ সাহেব একবারে ভেঙ্গে পড়েন। এতো বড় লস তিনি মানতে পারেন না। ব্যবসায়িক লসে একবারে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। একবারে সাইকো হয়ে যান যেনো। বন্ধু রেদোয়ানেকে ব্যবসার লসের জন্য দায়ী করেন সাজ্জাদ সাহেব। তার মাথায় ভূত চাপে যে তিনি রেদোয়ান সাহেবকে শান্তিতে থাকতে দিবেন না। সবুজের পরিবারের বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা শুরু করেন সাজ্জাদ সাহেব। সন্ত্রাসী লাগিয়ে দুবার গাড়ি চাপা দিতে চেয়েছেন রেদোয়ানের পরিবারকে। কিন্তু কোনোবারই সফল হয়নি তিনি। অবশ্য সবুজের বাবা রেদোয়ান ও তার পরিবার সাজ্জাদ সাহেবের এই কুটফন্দি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার আচার-আচরণে এমন কিছু কখনো লক্ষ্য করেনি রেদোয়ান সাহেব। অন্যদিকে সাজ্জাদ সাহেব গত পনেরো বছর ধরে ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সর্বশেষ সবুজকে সেদিন ব্রিজের উপর একা দেখতে পেয়ে মেরে ফেলার ফন্দি আটেন সাজ্জাদ সাহেব। চরম শিক্ষা দিতে হবে রেদোয়ানকে। তার ছেলেকে মেরে বাপকে উপহার দেয়াই হবে তার লসের বড় পুরস্কার। এই ভেবে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্রিজ থেকে ফেলে দেয় সবুজকে। সবুজ ব্রিজের নিচে পড়ে ব্রিজের নিচের পাথরের সাথে আঘাত পেয়ে মারা যায়। আর ঐশীকে মেরেছে ভুলে। সবুজকে মেরে ফেলার সময় একটি মেয়ে যাচ্ছিল ব্রিজ দিয়ে। যখন সবুজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিল দেয় সাজ্জাদ সাহেব, মেয়েটি ব্রিজ থেকে প্রায় তিনশ গজ দূরে ছিল। সাজ্জাদ সাহেব ভেবেছিল মেয়েটি এ ঘটনা দেখে ফেলেছে। ভয় পেয়ে যান সাজ্জাদ সাহেব। যদি মেয়েটি কাউকে কিছু বলে দেয়! এ কারণে মেয়েটিকেও মারার সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি। একদিন মোক্ষম সুযোগ এসে যায়। মেয়েটি কার জন্যে যেন অপেক্ষা করছিলো ব্রিজের উপর। সাজ্জাদ সাহেব মেয়েটির কলেজ থেকে পিছু নেয়। মেয়েটি হাঁটতে থাকে। মেয়েটি ছিলো ঐশী। ব্রিজের উপর ঐশী দাঁড়িয়েছে দেখে খুশি হয় সাজ্জাদ সাহেব। দ্রুত গিয়ে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সাজ্জাদ সাহেব। ঐশীও সবুজের মতো একই পরিণতি ভোগ করে। পরে ব্রিজের নিচে গিয়ে মুখে ব্লেড দিয়ে কেটে দুই সংখ্যাটি লেখে দেয়। যাতে করে চারদিকে সবাই আতংকিত হয়ে পড়ে। এতে করে কেউ আর এ দিকটায় আসারও সাহস পাবে না। যদিও মেয়েটি আসলে জানতো না সবুজকে কে বা কারা খুন করেছে।

পুলিশ জিকু হত্যা সম্পর্কে জানতে চায়। সাজ্জাদ সাহেব বলেন, ঐশীকে আমি দুই দিন আগেই ফেলে দিয়েছিলাম ব্রিজের নিচে। দুই দিন পর মানুষ ঐশীর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে ডাকে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। আমি যখন ঐশীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই তখন তার হাতে একটি মোবাইল ছিল। ধাক্কায় ঐশী ব্রিজের নিচে পড়লেও মোবাইলটি ব্রিজের উপর পড়ে যায়। মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখি মোবাইলটি বন্ধ হয়ে আছে। আমি মোবাইলটি সাথে করে বাসায় নিয়ে আসি। জিকু যেদিন বাড়িতে যাবে সেদিন আমি মোবাইলটি চার্জ দিয়ে অন করি। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে একটি কল আসে। কল রিসিভ করে দেখি জিকুর কণ্ঠ। জিকু ছিল ঐশীর বয়ফ্রেন্ড। জিকুও আমার কণ্ঠ ধরে ফেলে। বলে ওঠে আংকেল ঐশীর মোবাইল আপনার কাছে কি করে এলো? একথা শুনে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। জিকু যদি কোনো সমস্যা করে? বা কাউকে কিছু বলে দেয়! আমি ভাবতে থাকি জিকুকে কি করা যায়। ঐদিন বিকেলে দেখি জিকু বাসা থেকে ব্যাগ কাঁধে বের হচ্ছে। ভাবলাম কোচিংয়ে যাচ্ছে হয়তো। আমি তার পিছু নিই। কিন্তু দেখি সে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হয়। বুঝতে পারি সে শহর ছাড়ছে। বাসস্ট্যান্ডের কাছে গিয়ে জিকুর পথ আগলে দাঁড়াই। জোর করে জিকুকে ধরে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখি। রাত আটটার দিকে দেখি রুপমের কল। জিকুকে বলি, যাতে সে রুপমকে বলে সব ঠিক আছে। সে খুলনায় আছে। আমার জোরাজুরিতে জিকু এ কথা বলতে বাধ্য হয়। পরে বলি আমার কাছে ঐশীর মোবাইল তা যেনো কেউ না জানে। সে বললো ঠিক আছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। তাই ভাবলাম তাকেও খালাস করে দিই। না হয় যে কোনো সময় বিপদে পড়তে পারি। কারণ যে কোনো সময় ঐশীর লাশ কারও না কারও চোখে পড়বে। আর তখন আমি বিপদে পড়ে যাব। সে ভয়ে একটা শাবল দিয়ে জিকুর মাথার পিছনের দিকে আঘাত করি। তখন প্রায় রাত নয়টা বাজে। শাবলের আঘাতে সেখানেই মৃত্যু হয় জিকুর। এরপর লাশ বস্তাবন্দি করে একটা ছোট পিক-আপ ট্রাক ভাড়া করি। জিকুকে বন্দী করে রাখা ঘরে আরও কিছু ভর্তি বস্তা ছিল। সাথে আরও কিছু বস্তা নিয়ে একসাথে নদীর পাড়ে নিয়ে যাই। সেখানে নিয়ে বস্তাগুলো নামিয়ে ট্রাকের ভাড়া মিটিয়ে বিদায় করে দিই। এরপর বস্তাসহ জিকুর লাশ নদীর ওই দিকটায় জঙ্গলের কাছে ফেলে দিই। জিকুর মোবাইল আর ঐশীর মোবাইলের সীম খুলে নদীতে ফেলে দিই একসাথে।

পুলিশের তৎপরতায় এভাবে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায় তিন খুনের ঘটনা। রুপমও জানতে পারে সাজ্জাদ সাহেব করেছেন খুনগুলো। রুপমের গায়ে কাটা দিয়ে আসে। কেমন যেন অবিশ্বাস্য ঠেকে সব। এলাকার সবাই ভাবছে কিভাবে সম্ভব! তাও আবার সাজ্জাদ সাহেবের মতো মানুষ! আর রুপম ভাবে ঐ রাতে সবুজ আর জিকু ওরা তো মৃত ছিলো। তাহলে ওরা কিভাবে আসলো ছাদে। আবার ভাবে হয়তো সত্যিকার অর্থে তাদের আত্মাই এসেছিলো সেদিন। এখনো ঐ রাতের সব কিছু অদ্ভুত মনে হয় রুপমের। অজ্ঞান হওয়ার রাতটা এখনো রহস্যময় হয়ে আছে রুপমের কাছে। কিছু রহস্য যে প্রকৃতির হাতে বন্দী। যেখানে প্রকৃতি নিজেই হয়তো চায় না তা উন্মোচন হোক। রুপমের কাছে এ যেনো রহস্যে ঘেরা অদ্ভুত রাত। (সমাপ্ত)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়