শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০

মায়ের ছায়াহীন ঈদ
অনলাইন ডেস্ক

১৪ জুলাই ফজরের নামাজের পরে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত শেষে মায়ের জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করতেই দু চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। ২০১৯ সালে ঈদের ছুটিতে প্রবাস থেকে দেশে এসেছি তখনও আমার মমতাময়ী মা ফিরোজা বেগম কাছেই ছিলেন। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে মিষ্টিমুখ করে মাকে সালাম করতেই মা হেসে উঠে বললেন, আজ কিন্তু ঈদ-সালামি আমি তোকে দিবো না, আজ তুই আমায় দিবি। কারণ তুই আজ আমার বাবা বাদশা জাহাঙ্গীর আর আমি তোমার মেয়ে। আমিও বললাম, মা তুমি যা-ই বলো অসুবিধা নাই ঈদ সালামি দিবো, তবে অতীতের মতোই তুমি আমায় দিবে। তারপর ঈদ সালামি মাকে দিলাম এবং নিলাম। চলে গেলাম ঈদের মাঠে।

ঈদের মাঠ থেকে ফিরে এসে মা-ভাইয়ারাসহ একসাথে খাবার খেলাম। যাক্ সে অনেক কথা, ঈদ আনন্দ শেষ দেখতে দেখতে আমার ছুটিও শেষ আবার পাড়ি জমাতে হবে সৌদি আরবে।

আমার যাওয়ার দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে মা ততোই বলছে বাবা তুমি আমাকে ছোট মাছ, কই মাছ এগুলো কিনে দাও আর তুমিও খাও। হয়তো এ বছরই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা, আগামী বছর (২০২০ সালে) তুমি আমায় দেশে এসে না-ও দেখতে পারো। মায়ের মুখে এমন কথা শুনে কার খারাপ লাগবে না বলুন? আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের মা-ছেলের দেখা করিয়ে দিবেন।

২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর আমি প্রবাসে গেলাম। বিদায় নিতে মায়ের রুমের দিকে গেলাম। মা দেখি খাটের উপর বসে তাজবি পড়ছেন আর আমায় জড়িয়ে ধরে দু চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে আর বলছে ‘তুমি আমায় আর দেখবে না বাবা’। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে, দু গালে চুমু খেয়ে দোয়া করে দিলেন আল্লাহ তোমাকে চিরকাল দুধে-ভাতে রাখবে। ইজ্জতের সাথেই রাখবে। শান্তিতে রাখবে মা দোয়া করে দিলাম। মা-ছেলের চোখের পানি দেখে আশপাশের সবাই কান্না করতে লাগলেন। সকলের আবেগের মায়া আর মায়ের বাঁধন ছেড়ে রওনা হলাম প্রবাসের পথে। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়া থেকে প্রবাসে পৌঁছেও এক সেকেন্ডের জন্যে মা এবং পরিবারের কথা ভুলতে পারিনি।

আমার মা বারবার বলছিলেন, আমায় তুমি আর দেখবে না। তা-ই হলো। মহামারি করোনার কারণে দেশে আসা অনিশ্চিত। ২০২০ সালের ১০ জুন মাকে বাংলাদেশ সময় রাত ১টার দিকে কল দিলাম প্রবাস থেকে। মা আমার কথা শুনতে পেয়ে বললো, ‘বাবা আমার জন্যে দোয়া করবে। আমি মরে গেলে তুমি নিজে কোরআন পড়বে। আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামবাসীদের নিয়ে দোয়া পড়বে এতিম, গরিবদেরকে একবেলা খাওয়াবে বলো করবে কি না?’ আমি বললাম, আপনি যা বলবেন তা-ই করবো মা।

‘আপনি হঠাৎ এসব বলছেন কেনো’ বলতেই মা আবারও বললেন, আমার মনে হয় হায়াত শেষ। করোনার কারণে বিদেশ থেকে তুমি আসতে পারবে না। আমি তোকে দোয়া করি। সেই রাতেই কালিমা মুখে নিয়ে মা আমার সুস্থাবস্থায় দুনিয়া ছেড়ে চিরকালের জন্যে চলে গেলেন। মায়ের কথাই সত্যি হলো, আমি মাকে দেখলাম না। ২০২১ সালে দেশে এসে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করেছি মায়ের প্রতিটি কথা রেখেছি। গত ঈদে মা ছিলেন, এই ঈদে মা নেই। মায়ের ছায়া নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়