সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

জ্যোৎস্নাময় অদ্ভুত রাত
অনলাইন ডেস্ক

রুপমের আশপাশে বসে আছে দশ-বারোজন। সবাই তার বন্ধু। অনেকক্ষণ হাসপাতালের এই কেবিনে বসে আছে তারা। উৎকণ্ঠায় ছিলো সবাই। কি হয়েছে রুপমের! রুপমের জ্ঞান ফেরা ছাড়া এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন অসম্ভব। সবাই অপেক্ষা করছে রুপমের মুখে সব শোনার জন্যে। সকাল সাতটায় হাসপাতালে আনা হয় রুপমকে। সে অজ্ঞান ছিলো সাড়ে দশটা পর্যন্ত। জ্ঞান ফিরছে মাত্র আধা ঘণ্টা হলো। এর মধ্যেই ডাক্তার এসেছে কয়েকবার। একটু আগে চেকআপ করে গেছে আরেকজন ডাক্তার। ঘড়িতে এখন প্রায় পৌনে ১টার কাঁটা ছুঁইছুঁই।

সাকিব জিজ্ঞেস করে, রুপম কি হয়েছে তোর? বানু খালা সকালে সাড়ে ছয়টার দিকে ছাদে হাঁটতে গিয়ে দেখে তুই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস্। পরে উনার ডাকাণ্ডডাকিতে সবাই গিয়ে তোকে ছাদ থেকে নামায়। আমরা খবর পেয়ে তোকে এখানে নিয়ে আসি। বসে আছি চার-পাঁচ ঘণ্টা। এতোক্ষণ তুই অজ্ঞান ছিলি। ডাক্তার বললো সিজোফ্রেনিয়া এটাক হয়েছে তোর। কি হয়েছিলো একটু বলবি?

রুপম সবার দিকে তাকায়। ভাবতে থাকে কি হয়েছিলো তার! হঠাৎ তার মনে পড়ে রাতে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এক নিশ্বাসে রুপম বলতে শুরু করে...।

তখন রাত ৩টা বেজে ১৩ মিনিট। বাসায় বিদ্যুৎ ছিলো না অনেকক্ষণ। মিটারের টাকা শেষ হয়ে গেছে। ব্যস্ততার কারণে আজকাল ছোটখাটো এসব খেয়ালই থাকে না তার। গরম লাগছিলো খুব। ভ্যাপসা গরম। ঘুম ভেঙ্গেছে ঘণ্টাখানেক হয়। আর ঘুম আসে না তার। কেনো জানি গরমে অসহ্য লাগে। ভাবলো ছাদে গিয়ে একটু বসি। চারদিকে চাঁদের জ্যোৎস্না। প্রকৃতিতে এক অন্যরকম মন-মাতানো জাদুকরি সুন্দরের মায়া। চারতলার ছাদে গিয়ে দক্ষিণ পাশের রেলিং ধরে দাঁড়ায় রুপম। দৃষ্টি নদীর দিকে। হেঁটে গেলে এ বিল্ডিং থেকে নদীর দূরত্ব মিনিট দুয়েকের। ভর রাতেও নদীতে এখনো কিছু আলোর ফোয়ার এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করছে। মাছধরা ট্রলার থেকে চোখে আসে এ আলো। মৃদু বাতাস বইছিলো চারদিকে। সুনশান নিরবতায় কেমন যেনো এক ¯িœগ্ধ ভালো লাগা কাজ করছিলো রুপমের। যাক বিদ্যুৎ গিয়ে ভালোই হয়েছে, মনে মনে ভাবে সে। পাশের নারকেল গাছের পাতাগুলো বাতাসের সাথে সাথে দুলতে থাকে। হঠাৎ রাস্তায় চার-পাঁচটা কুকুর ঘেউ ঘেউ চিৎকারে ডেকে উঠে। সমস্বরে কিছু কুকুর মনে হয় কান্না শুরু করে। মুরুব্বিরা বলেন, বিভিন্ন প্রাণী, জীব-জন্তু বিশেষ করে কুকুর মানুষের আগে বিপদণ্ডআপদ টের পায়। আর কোনো বিপদণ্ডআপদ দেখলে কুকুরগুলো কান্নার স্বরে ডেকে ওঠে। যাই হোক, সেদিকে তেমন মনোযোগ ছিলো না তার। মনোযোগ নদীর দিকেই। চাঁদের পূর্ণ আলোয় যেনো নদীর পানি চিকচিক করছে। কেমন যেনো এ এক অন্যরকম স্বর্গীয় অনুভূতি। এমন সময় কে যেনো তার ঘাড়ে হাত রাখলো। রুপম ভাবলো হয়তো রুমমেট হাত রেখেছে। সে তার মতো তাকিয়ে আছে নদীর দিকে। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে এই মাত্র একটা তারা মনে ভোঁ করে দৌড় মেড়েছে। এই মাত্র লঞ্চঘাটে লঞ্চ ভিড়ার হুঁইসেল শুনতে পায় সে। ঢাকা থেকে এই শহরে এই সময়ে কোনো লঞ্চ নেই তবু কেনো যেনো শব্দ। সে ভাবলো হয়তো অন্য কোনো রুটের লঞ্চ, এখানে যাত্রাবিরতি করেছে বোধহয়। আপন মনে ভাবতে থাকে সে।

চাঁদের আলোতে নদীর পানি চাঁদের পূর্ণ আলোকে হাজারগুণ বর্ধিত করে বিকিরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেনো মনোমুগ্ধকর সুন্দরের ফোয়ারা। কী অভাবনীয় সুন্দর। হৃদয় শীতল করা বাতাস। সাথে মন মাতানো ও চোখ জুড়ানো আবহ যেনো।

আবার কাঁধে হাত অনুভব করে রুপম। এবার বিরক্ত হয় সে। কি পাগলামিটা নাই করছে জিকু। এই রকম পরিবেশেও দুষ্টুমি করতে হবে তার? কি আশ্চর্য। সময়ও বুঝে না। এবার দু কাঁধে যেনো কে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে। রুপম এবার চরম মাত্রায় বিরক্ত হয়। বিরক্ত হয়ে পিছু ফিরে তাকায় সে। তাকাতেই দেখতে পায় জিকুকে। এই জিকু কি দুষ্টুমি করছিস্? কি সুন্দর পরিবেশ, কি সুন্দর আবহাওয়া। দুষ্টুমি না করলে হয় না? কোনো উত্তর দেয় না জিকু। জিকু হাসতে থাকে। হাসি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে জিকুর। দাঁত ও জিহ্বা বের করে হাসে সে। হাসি অট্টহাসিতে রূপ নেয় জিকুর।

রুপম কিছু বুঝে উঠতে পারে না জিকুর এই হাসির রহস্য। রুপম মনে মনে ভাবে, এই ছেলে পাগল হয়েছে। নইলে এতো রাতে কেউ এইভাবে হাসে? আশপাশের বিল্ডিংগুলোর মানুষ তার হাসির শব্দে নিশ্চিত জেগে যাবে। আর এতে কাল সকালে নিশ্চিত বাসার মালিকের কাছে বিচার যাবে অন্য বাসার মানুষের কাছ থেকে। বাসার মালিক যে ধরনের বেয়াড়া লোক, কালই বাসা ছাড়তে বলবে নিশ্চিত। রুপমের বিরক্তি বাড়তে থাকে। কিন্তু জিকুর হাসির মাত্রা আরও বাড়ছে। জিকুর গালে ঠাস করে চড় মেরে বসে রুপম। জিকু আরও জোরে হাসা শুরু করে। পাশে আরেকজনকে জানি জিকুর হাসির সাথে তাল মিলায়। হাসির শব্দ উপচেপড়ছে যেনো। বিরক্ত হয়ে পাশে তাকায় রুপম। পাশে তাকাতেই সবুজকে দেখতে পায় সে। সবুজ ছিলো রুপমের কলেজের বন্ধু। এক সাথে এক বেঞ্চে বসতো তারা। স্যারের কাছে একসাথে প্রাইভেট পড়তে যেতো তারা। রুপম বলে আরে সবুজ! এতো রাতে এখানে? হঠাৎ করে রুপমের মনে পড়ে আজ থেকে ২১ দিন আগে মারা গেছে সবুজ। বড় রাস্তার পুরাতন ব্রিজের নিচে অর্ধগলিত পঁচা লাশ পাওয়া যায় তার। মাথা আর দেহের অর্ধেক থেতলে গেছে। পুলিশ লাশ নিয়ে ময়নাতদন্তে পাঠায়। কেউ বলছে সবুজ আত্মহত্যা করেছে। কেউ বলে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে না সবুজ। আবার কেউ বলছে, শত্রুপক্ষের কারো হাতে করুণ এ মৃত্য হয়েছে সবুজের। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো শত্রুও ছিলো না তার। সবুজের পরিবার থানায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করেছে। আর এদিকে পুলিশ সবুজের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে টিম করে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রুপমের শরীর ভার হয়ে আসে। হঠাৎ করে মনে পড়ে তার, জিকুও তো বাসায় নেই। জিকু গত পড়শু তার গ্রামের বাড়ি খুলনায় গেছে দুর্গাপুজোয়। তাদের বাড়িতে বড় করে ধুমধাম করে প্যান্ডেল সাজিয়ে এই পূজা উদ্‌যাপন হয়। তাই এ সময়ে জিকুর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাছাড়া রাত ৮টার দিকে কথা হয়েছে জিকুর সাথে। আজ রাতে তো বাসায় শুধু সে একাই আছে। ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরে ওঠে রুপমের। মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায় সে। মাথায় ব্যথা পায়। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সে। এর পর কি হয়েছে আর কিছু মনে নেই তার।

কেবিনে বসা সবাই সবার মুখের দিকে তাকায়। কি বলছে রুপম! সবার চোখ ছানাবড়া। একঘণ্টা আগে বড় রাস্তার ওই পুরাতন ব্রিজের নিচ থেকে ঐশীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐশীর লাশও ঠিক সবুজের লাশের মতো ছিলো। ঐশীর মুখে ব্লেড দিয়ে দাগ দেয়া ছিলো নাম্বার দুই। সবার চোখে মুখে ভয়। রুপম সবার চেহারায় আতংকের ছাপ দেখতে পায়। আর সবাই ভাবছে কি হচ্ছে এসব! এটা কি কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ? নাকি আত্মহত্যা? এর পরও কি আরও কোনো অঘটন ঘটতে চলছে? নাকি অন্যকিছু?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়