প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দাদা! এ কথাটি অতি আপনজন ব্যতীত কাউকে সম্বোধন করা হয় না। এটি মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার এক পরশ। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে এ অঙ্গনে অনেকের সাথেই পরিচিতি হয়েছে, অনেকের সাথে সখ্য তৈরি হয়েছে কিন্তু প্রয়াত পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী ছিলেন সবার চেয়ে ব্যতিক্রমী একজন মানুষ। হাঁটাচলার পথ থেকে শুরু করে যে স্থানেই দেখা হতো দাদা বলে ডাক দিতেই হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলতেন নাতি কি খবর! আমিও নাতির মতোই বলতাম, দাদা এইতো ভালো। আপনার শরীরটা কেমন আছে। এই ভালো। তারপর কুশল বিনিময় হতো হাসিমাখা মুখেই। কথার মধ্যে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করতো আমার নাতবউ কেমন আছে। দাদা আছেতো বেশ। আমি ভালো থাকলেতো আপনার নাতবউ ভালো থাকবেই। আমিও জিজ্ঞাসা করতাম দাদা দাদীর খবর কী?-এসব কথা হতো একান্ত আপনজনের মতো। কখনও দেখিনি দাদা কারো সাথে রাগ করেছে। সর্বদা হাসিখুশি একটি চরিত্র, যার নাম পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী। হাঁটাচলার পথে যদি দেখতাম দাদা সামনে আর আমি পেছনে তখনই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতাম। দাদা কেনো জানি বলে ফেলতো উজ্জ্বল। আমি অবাক হতাম, দাদা কি করে বুঝলেন। দাদা উত্তর দিতেন এ কাজটি তুমি ছাড়া আর কেউ করে না। আর আমার কাছে এটি বেশ ভালো লাগতো। তাই আমি পেছনে থাকলে প্রায়ই করে ফেলতাম এ কাজটি। কখনও রাগ করতেন না।
দাদার সাথে যখন শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ গঠন করি দাদা আমাদের ক’জনকে বলতেন তোরা সবাই মিলে এ সংগঠনে একসাথে থাকবি। আমরাও কখনও দাদার বিপরীতে যাইনি। আজ প্রায় ১০/১১ বছর আগে একবার বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের আবৃত্তি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অন্য সকলের সাথে দাদা আমাকে বললেন উজ্জ্বল তুমিও আবৃত্তি কর্মশালায় থাকবে। আমি রাজি হলাম কারণ কথাটিতো দাদা বলেছেন। অনেকবার দাদার বাসায় আমরা বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সভা করেছি। আমি পীযূষ দাদাকে বলতাম দাদা এটাতো আপনার বাসা সাথে এটা আবৃত্তি পরিষদের স্থায়ী কার্যালয়।
একটি স্মৃতি এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে। সেটা হলো ২০১১ সালে শেষের দিকে আমি তখন সদ্য বিবাহিত। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সম্ভবত পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। ফোন করে দাদা আমাকে বললেন নাতবউকে নিয়ে আসবা কিন্তু। আমি বাসায় আমার স্ত্রীর সাথে কথাটি শেয়ার করার পর সে যেতে রাজি হলো। নির্ধারিত তারিখে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে দাদার বাসায় হাজির হলাম। দাদা আমাদের দুজনকেই নববিবাহিত হিসেবে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেদিনের কথা কখনও ভুলতে পারবো না। কারণ দাদা নিজের নাতির মতো করেই সবার কাছে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবশেষে যে কথাটি সারাজীবন আমাকে কাঁদাবে সেটি হলো, দাদা যেদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তার আগের দিনও নতুনবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় ও কতগুলো উপদেশ দিয়েছিলেন যা আজও চোখের সামনে ভেসে আসে। দাদা যে এভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে তা বিশ^াস করতে কষ্ট হচ্ছে। শুধু এটুকু বলবো পরপারে যেনো দাদা শান্তিতে থাকেন-এই কামনা করি।
লেখক : সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, চাঁদপুর।