প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
মাঝরাতে অনেকটা চুপিসারে ভিনগ্রহের একটা মহাকাশযান নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। ওটাতে একজন মাত্রই অভিযাত্রী। কিন্তু এই মহাকাশযানের অভিযাত্রীটির বিন্দুমাত্রও ধারণ নেই, সে ঠিক কোথায় নেমেছে। সে ভেবেছিল এই গভীর রাতে মানুষজন নিশ্চয়ই সব ঘুমিয়ে পড়েছে। ভয়ে রাতের বেলা কেউ আর এই গহীন অরণ্যে বেড়াতে আসবে না। কিন্তু সে স্পেসশীপ থেকে নামার পরে তো অবাক। চারিদিকে তার মতোই দেখতে এরা কারা? একটু পরে সবকিছু বুঝতে পারে সে মভূতের রাজ্যে এসে পড়েছে সে!
ওদিকে এই গভীর রাতে মানুষজন সব ঘুমিয়ে পড়লেও পৃথিবীর ভূতদের চোখে কোনো ঘুম নেই। এমনিতেই মানুষকে নিয়ে তারা খুব টেনশনে আছে। সে নিয়েই এতোক্ষণ তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিলো। কিন্তু হঠাৎ একটা মহাকাশযান দেখে তারা থমকে যায়। কেউ কেউ বলে ফেলে, ‘বাব্বা, এটা আবার কী জিনিস!’
তা শুনে আরেক দল বলে, ‘হবে হয়তো মানুষের আরেকটা অদ্ভুত আবিষ্কার।’ কৌতূহলী হয়ে তারা সবাই স্পেসশীপটার দিকে এগিয়ে যায়।
ঠিক তখনই ধীর পদে নেমে এলো স্পেসশীপটার একমাত্র অভিযাত্রীটি। তাকে দেখে ভূত সমাজ তাজ্জব হয়ে গেলো। তাদের কাছে বড়ই আজিব মনে হলো এই প্রাণীটিকে। তখন, হৈ হৈ রব পড়ে গেলো পুরো ভূত রাজ্যে। প্রথমে তারা মনে করলো, এটা বুঝি কোনো মানুষ! ভূতেরা আবার মানুষজন খুব ভয় পায়। সে কারণে ইদানীং তারা মানুষের থেকে দূরে দূরে থাকে। আগের যুগে যখন মানুষ খুব বোকা ছিলো, মানে আধুনিকতার দিক থেকে কম উন্নত ছিলো, তখন ভূতেরা মানুষের সাথে একই সমাজে বসবাস করতো। যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়নি, তখন অন্ধকারের সাহায্য নিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতো তারা। তাছাড়া, স্বামীর সাথে স্ত্রীকেও যখন জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতো মানুষ, তা দেখে ভূতেরা হাততালি দিতো। ছেলে-পেলেরা যখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে পাড়ার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে চ্যাংড়ামি করতো, তা দেখেও ভূতেরা খুব আনন্দ পেতো। ওলাবিবি যখন ডায়রিয়া-কলেরা রোগের ছদ্মবেশে গ্রাম-গঞ্জে এসে মানুষের জীবন কেড়ে নিতো, তখন ভূতেরা আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিতো। কিন্তু এখন আর সে যুগ নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। ছেলে-পেলেরা দুষ্টুমি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে পুরো পৃথিবী। তা দেখে ভূতদের সে কী দুঃখ। লেখাপড়া যে করে না, তাকে ভয় দেখানো ভূতদের কাছে অনেক সহজ ব্যাপার। কিন্তু এখন তারা সে সুযোগ পাচ্ছে কই?
নতুন অভিযাত্রীটি পৃথিবীর বুকে নেমে আসার পর থেকেই সে এবং ভূতেরা এক পক্ষকে অপর পক্ষ ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো! অবশ্য একটু পরেই ভূত রাজ্যের সবাই বুঝে গেলো, এটা ঠিক মানুষ নয়। বরং তাদের মতো দেখতে এই জীবটা ভিনগ্রহ থেক আগত একটা এলিয়েন ভূতই হবে। এলিয়েন ভূতও বুঝলো, তার মতো দেখতে এরা মানুষ নয়, এরা পৃথিবীর ভূত। দু পক্ষের মধ্যে তাই খাতির জমতে বেশি সময় লাগলো না। ভূতদের রাজ্যে একটা এলিয়েন এসে হাজির হয়েছে এই খবরে পুরো ভূত জাতি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লো। অপরদিকে বিশেষ মিশন নিয়ে পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই বন্ধুতুল্য একটা জাতি পেয়ে এলিয়েন ভূতও হেভভি আনন্দিত হলো। এলিয়েন ভূতটা তাই আর কোনো রাখঢাক না রেখে তার মিশনের উদ্দেশ্য বলেই দিলো, সে এসেছে পৃথিবীর মানুষকে ভয় দেখাতে। তাদের গ্রহের মানুষ ভূত ভয় পায় না। উল্টো মানুষেরা কোনো ভূতের দেখা পেলে, তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়! তাদের গ্রহের ভূতেরা এখন তাই পুরানো বাংলো, পোড়া বাড়ি, পরিত্যক্ত দুর্গে গিয়ে আস্তানা গেড়েছে।
এলিয়েন ভূতের কথা শুনে পৃথিবীর ভূতেরা লজ্জা পায়। তাদের সাথে এলিয়েন ভূত কথা বলে জানতে পারে, পৃথিবীর ভূতদের অবস্থা তাদের থেকেও বেশি করুণ। এখানকার মানুষগুলো ভূতদেরকে বিন্দুমাত্রও পাত্তা দেয় না। পিচ্চি পিচ্চি ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত হাত ধুয়ে খাবার খায়। টয়লেট সেরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়। পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করে। কেউ এখানে-সেখানে মলত্যাগ করে না, ময়লা-আবর্জনা ফেলে না। সবকিছু শোনার পরেও এলিয়েন ভূতটা কয়েকদিন দূর থেকে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলো। সব দেখে সে বুঝতে পারলো এখানে ভূতেরা ‘ভূতবেতর (মানবেতর এর ভূতীয় সংস্করণ!) জীবনযাপন করছে। সব দেখে-শুনে তাই এলিয়েন ভূতের খুবই মন খারাপ হলো। সে সিদ্ধান্ত নিলো, সে তার নিজের গ্রহেই ফিরে যাবে। সেখানে আর কিছু না হোক, ভূতেরা ন্যূনতম সম্মান নিয়ে বেঁচে আছে! এখানে তো তা-ও নেই। সে তার সিদ্ধান্তের কথা পৃথিবীর ভূতদেরকে জানালো। তখন পৃথিবীর ভূতেরাও তার সাথে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো। এলিয়েন ভূত জানালো, তার স্পেসশীপে জায়গা সঙ্কট। তার গ্রহে এক সাথে এতোজনকে নেয়া যাবে না। একজন একজন করে যেতে হবে।
ভূতেরা তখন লটারীর মাধ্যমে ঠিক করে নিলো, কার পরে কে পৃথিবী ছেড়ে যাবে। সেই থেকে পৃথিবী থেকে ভূতের সংখ্যা দিনে দিন কমেই চলেছে।
তবে, মজার কথা হলো কিছু ভূত এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেছে। তারা মানুষের ভুলের সুযোগ নেয়ার অপেক্ষায় আছে...। সুতরাং সাবধান!
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা