রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

শূন্যতা

মোঃ জুয়েল হাওলাদার
শূন্যতা

কোনো এক নাম না জানা ঝড়ের রাতে, ঝড়ের লীলা সাঙ্গ করে ভোরের বিহানে বিপন্ন যাপিত জীবনের স্বপ্ন দেখা শেষে ঘুম থেকে দরজা খুলে দেখতে পেলাম, উঠানে লাউয়ের মাচায়, লাউ পাতার ফাঁকে ঝড়ের ঝাপটায় আছড়ে পড়ে আছে মুমূর্ষ বন্য শালিক ছানা। দেখে কেন জানি হৃদয়ের এক কোণে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। পরম মমতায় দুহাতে তুলে নিলাম শালিক ছানাটিকে। সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যেভাবেই হোক শালিক ছানাটিকে সুস্থ করে তুলবো, শিস দেওয়া শেখাবো, ডাক দেওয়া শেখাবো, আমার মনের না বলা কথাগুলো ওকে বলবো। খুব মনে পড়ে, মায়ের কাছ থেকে তিন টাকা নিয়ে কলা কিনেছিলাম। দুধ খাওয়াবো বলে ছোট একটা দুধের বাটিতে দুধ ভরে নিয়েছিলাম। যত্নের ঘাটতি রাখিনি। স্বল্প জ্ঞানের ডাক্তারি বিদ্যার সকল প্রয়োগ ঘটিয়ে সময়ের ধারাবাহিকতায় সুস্থ করে তুললাম। আমি আর আনন্দ ধরে রাখতে পারি না, যেচে যেচে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলকেই আমার শালিক ছানাটির গল্প শোনাতে লাগলাম। মোট কথা, পাড়ার মধ্যে ছোটখাট গোছের হিরো বনে গেলাম।

আমি আর শালিক, শালিক আর আমি এ এক কঠিন ভালোবাসা, অসাধারণ বন্ধুত্ব। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস চলে যায়। এ ভাবেই চলছিলো ভাবের লেনাদেনা। এর মাশুলও গুণতে হয়েছিল ভরত স্যারের কচার বাড়িতে, যেদিন পঞ্চম শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হলো। ছয় বিষয়ের মধ্যে যখন ধর্মে কাঁটায় কাঁটায় পাস আর বাকি সব বিষয়ে ফেল করলাম। সেদিন ভাগ্য খুব ভালো ছিলো ফুল হাতার লাল গেঞ্জি পরেছিলাম। তাই স্যারের কচার বাড়ি শরীরে যে মানচিত্র এঁকেছিলো সেটি বোধ হয় কেউ দেখেনি। যদি দেখতে পেতো তাহলে নতুন করে আর একটা মানচিত্রের জন্ম হতো। যাইহোক, ব্যাথাতুর শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরতেই মনের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠলো, আমি আনন্দে আত্মহারা--শুনতে পেলাম শালিকের অস্ফুট সুরে শিস দেওয়া। মা বললেন, তুই স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই কিছুক্ষণ পর পর শিস দিচ্ছে। নিমিষেই সব যন্ত্রণা ভুলে গেলাম। আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে--এখন ডাক দেওয়া শিখাবো, কথা বলা শিখাবো। ভাবতেই পারছি না এ আনন্দ, এ খুশি কোথায় ধরে রাখবো। ঠিক এক সন্ধ্যায় আমার শূন্য খাঁচা শূন্য পড়ে রইলো। এদিক-সেদিক, এখানে-সেখানে, আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, নেই কোথাও নেই। আমায় ছেড়ে সে চলে গেছে। কেন জানি মনে হলো, এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, অবুঝ হৃদয়ের ভাষা কেউ বোঝে না। সময় শুধু অশ্রুর লোনা জল দিয়ে লিখে রেখে যায়--যে যাবার সে চলে যায়, যা তোমার ছিল না তা কখনোই তোমার নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়