শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

(অষ্টাদশ খণ্ড)

আমার প্রিয় কবি বলে সুনির্দিষ্ট কিছু কখনো ছিলো না। ছোটবেলায় যিনি যেভাবে মনে গেঁথে গেছেন তাঁকে সেভাবেই মনে রেখেছি। বাল্যশিক্ষায় পড়া হরিশ্চন্দ্রের ‘বড় কে’ কবিতাটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছিলো ইনিই আমার প্রিয় কবি। আবার মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘প্রভাত’ কবিতা আমাকে যেভাবে গ্রামীণ জীবনের সকালকে চেনাতে শিখিয়েছিলো তাতে আমার মনে দাগ কেটে যায় কবির সেই সকালের রূপ। বন্দে আলী মিয়ার ‘আমাদের গ্রাম’ কিংবা সুফিয়া কামালের ‘পল্লীস্মৃতি’ কবিতাও মনে হয়েছিলো আমার সকল চিন্তা ধারণ করে আছে। জসীমউদ্দিনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতাটি পড়তে বসলেই নিজেকে ভাবতাম সেই কিশোরের মতো যে তার বন্ধুকে গ্রামে যেতে আকুল করে ডাক পাড়ে। এরপর যখন নজরুল ধরিয়ে দিলো ‘সঙ্কল্প’ তখন তো চোখে কেবল আবিষ্কারের নেশা। এরই মাঝে যেদিন হঠাৎ আলোর ঝলকানি নিয়ে এলো রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ সেদিন যেন নূতন এক দিগন্ত খুলে গেলো আমার চোখের সামনে। মনোলোকের জ্যোতির্ময়তায় আমি হয়ে উঠি বিহ্বল। আরো একটু বড় হয়ে যখন প্রবাসী মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্বদেশের নদের স্মৃতিতে ভারাতুর হয়ে ওঠেন তখন আমার মনের মাঝে কে যেন গোপনে বাজিয়ে তোলে বিরহের সুর। কিন্তু বেশিদিন সে বিরহ থাকে না। কবি সুকান্ত কোথা থেকে উদয় হয়ে দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে দেন ‘ছাড়পত্র’ কবিতায়। আবার তিনিই ‘মহাজীবন’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান দারুচিনিদ্বীপে। সেখানে নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশ হাজার বছর ধরে পথ হাঁটার কথা বলতে বলতে আমাকে উপনীত করেন ‘বনলতা সেন’-এর কাছে। তাঁর কাছ থেকে দুদণ্ড শান্তি নিয়ে আমি সেই যে ‘আমার পরিচয়’ খুঁজে পেলাম, তাতেই যেন আমার স্বস্তি। অবশেষে আমার যেন আত্মপরিচয়ের সঙ্কটের অপনোদন হয়। ভালো লাগা সমুদয় কবিতার মধ্যে ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি থাকবে শীর্ষাগ্রে। কবিতাটির মধ্যে ইতিহাস ও প্রকৃতি, জীবন ও প্রণয় যেভাবে প্রোথিত আছে সেভাবে আর কোনো কবিতাতেই মেলে না। তাই যখন চাঁদপুর কণ্ঠের সাহিত্য পাতায় কবি জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ নিয়ে পাতার সম্পাদক মিজান রানা লেখা আহ্বান করলেন, তখনই সাড়া দিলাম। আগের পাঠ আর হালনাগাদ ভাবনা হতে একটা লেখার নির্মিতি হলো যার শিরোনাম ছিলো ‘কবিতার মোনালিসা’। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’ বইটিতে জীবনানন্দকে যতটুকু জটিল ও দুরাধ্যেয় কবি বলে অভিহিত করেছেন, আমি ‘কবিতার মোনালিসা’ শীর্ষক মূল্যায়নধর্মী লেখায় তাঁকে ততটুকু সহজ করে উপস্থাপন করলাম নাতিদীর্ঘ আলোচনায়। সেই শুরু হলো আমার দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে লেখা পাঠানো। আমি জানতাম, প্রতিটি লেখা প্রধান সম্পাদক মহোদয় নিজে পাঠ গ্রহণ করে প্রকাশ করেন। এরপর হতে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি পাঠাতাম দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে। সাহিত্যের লেখা পাঠানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে চিকিৎসা বিষয়ক লেখাও চিকিৎসাঙ্গন পাতায় প্রকাশিত হতে থাকলো। এরই ফাঁকে বন্ধু তৌহিদ ইবনে ফরিদ, যে কিনা দৈনিক জনকণ্ঠের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা ছিলো, একদিন হঠাৎ করে ফোন দিয়ে বললো, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয় যিনি দেখেন, নদীপ্রেমিক রোকন ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে বললেন, ডাক্তারদের ওপর একটা উপ-সম্পাদকীয় লিখে পাঠাতে। রোকন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম, তাদের চাহিদা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার তাঁর বক্তব্যে ডাক্তারদের গ্রামে যেতে বলছেন। এ বিষয়ে ডাক্তারদের দৃষ্টিভঙ্গি হতে একটা লেখা যাতে পাঠাই। ব্যস্, আমিও একটা ব্যারিস্টারি বুদ্ধির যুক্তি দিয়ে লেখা পাঠালাম দৈনিক সমকালে। লেখার শিরোনাম ছিলো, ‘পল্লী অঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা : ডাক্তারদের সেবা দেবে কে?’ আমার এই লেখাটি বদরুদ্দীন উমরের সাথে একই পাতায় স্থান পেলো। আমার খুশি আর কে দেখে? এর আগে মেডিক্যাল কলেজে পঞ্চম বর্ষে পড়াকালীন দৈনিক প্রথম আলোর শুক্রবারের ম্যাগাজিন ‘ছুটির দিনে’-তেও লেখা ছাপানো হয়েছিলো। তবে সেটা ছিলো ফিচার টাইপ লেখা। কিন্তু সমকালের লেখাটি ছিলো বিশ্লেষণধর্মী অভিমতপূর্ণ। ফলে সারা লেখাজুড়ে আমার কণ্ঠ বেজে উঠেছে। লেখাটির কপি সংগ্রহ করে আমি বেশে কয়েক জায়গায় পাঠিয়ে দিলাম। সবাই খুব প্রশংসা করলো লেখাটির। কিন্তু পরদিন উপ-সম্পাদকীয়তে আমার লেখার প্রত্যুত্তর দিয়ে সিডনির মেলব্যাগ কলামে লেখা লিখলেন অজয় দাশগুপ্ত। তার লেখাটা পড়ে বুঝলাম, বাংলাদেশের কিছু মানুষের কাজ হলো সমস্যার গভীরে না গিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তার জন্যে চটুল লেখা তৈরি করা। আমার প্রস্তাবনায় ছিলো গ্রামে যে সব ডাক্তারের পোস্টিং হবে তাদের সাপ্তাহিক বন্ধ যাতে শুক্রবারে না হয়ে সপ্তাহের মাঝখানে অর্থাৎ মঙ্গলবারে হয়। কেননা, তাদের যদি কোন অফিস-আদালতে কাজ থাকে তাহলে সেটা তারা তাদের সেবাদানের কাজকে ব্যাহত না করেই করতে পারবে। দেখা গেছে, শুক্রবারে ছুটি রাখলে ঐ দিনটায় কোনো অফিস-আদালত খোলা না থাকায় গ্রামে পোস্টিং পাওয়া ডাক্তারের জরুরি কাজ সম্পন্ন করা যাবে না। যে ভদ্রলোক আমার লেখার জবাব দিয়েছিলেন জনপ্রিয় ধারায়, তিনি কিন্তু নিজে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আসলে আমরা কেউই ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’ কথাটায় বিশ্বাসী নই। কেবল অন্যের ছিদ্রান্বেষণ ও পরশ্রীকাতরতায় ভুগি।

এ সময়ে এসে আমার হঠাৎ করে পুরানো বন্ধুদের কথা মনে ভিড় করতে থাকে। মনে পড়ে স্কুল জীবনের বন্ধু মিহিরের কথা। মিহির ক্লাস ফোর থেকেই লিভারের জটিল অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শ্যামল ছেলেটা আমার ক্লাসে সেকেন্ড ছিলো। খুবই শান্ত ছিলো। তার নামের অর্থ থেকেই প্রথম আমি জানতে পেরেছিলাম, মিহির মানে সূর্য। তাদের বাসা ছিলো পাথরঘাটা মহিম দাস লেনে। তার বড় ভাইও আমাদের স্কুলে পড়তেন। আমাদের চেয়ে তিন ক্লাস উপরে। সে আর আমি অনেকটাই ব্র্যাকেটে আবদ্ধ নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় পদের মতো ছিলাম। যদিও আমার বলা উচিত না, তবুও মনে রাখার স্বার্থে বলি, মিহিরের মা মানে আমাদের আন্টি মিহিরকে যখন স্কুলে দিতে আসতেন তখন দেখতাম, তাঁর গায়ে গহনার ঘনঘটা। কনকদ্যুতিতে তিনি সব সময় ঝলমল করতেন স্বর্গীয় বিভা নিয়ে যেন। যদিও মাঝে মাঝে বুঝতাম, মিহিরের মা হিসেবে তিনি আমাকে একটু প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্বের চোখে দেখতেন, নিঃস্বার্থ স্নেহ হয়তো কম পেতাম। মিহিরের লেখা ছিলো সরু এবং নির্মেদ। অক্ষরগুলো যেন ঠিক এক একটা বাঁশমোতি চাউলের দানা। আরেকজন বন্ধু আমি হারিয়েছিলাম কলেজ জীবনে। সে আর আমি কলেজিয়েট স্কুল থেকেই সহপাঠী ছিলাম। তার নাম ছিলো মিজান। ভালো নাম সালাউদ্দিন। দেখতে সুদর্শন এবং ভালো ক্রিকেট খেলতো। তার বড় বোন পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল কলেজে আমাদের ফিজিওলজির লেকচারার ছিলেন। মিজানকে সবাই ইলিয়াস কাঞ্চন বলে খেপাতো। সে মরে গেলো তুমুল বরষার দিনে অতিরিক্ত গতিবেগে চট্টগ্রাম-ঢাকা হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে গিয়ে। বেগ নাকি এতো বেশি ছিলো যে একপর্যায়ে চাকা বোধ হয় মাটির সংস্পর্শে ছিলো না। বন্ধু পুলকও আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ছিলো। মাঝখানে কলেজে উঠে বিচ্ছেদ হলো। এরপরে সে ইউএসটিসি থেকে পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়ে এলো। তার শখ ছিলো দেশ-বিদেশের ডাকটিকেট সংগ্রহ করা। সে ছিলো ছোটখাটো সহজ-সরল। তাকে আমি কখনো রেগে কথা বলতে দেখিনি। বরং তাকে দেখে অবাক লাগতো, সে এতো প্রশান্ত থাকতো কীভাবে! ছেলেটা ডাক্তার হওয়ার পরে কী এক অজানা কারণে হঠাৎ করেই মারা গেলো। আরেক বন্ধু মোস্তফা যার বাড়ি ছিলো বাঁশখালি। মোস্তফার সাথে আমি ক্লাস এইট থেকে পড়েছিলাম। কলেজে একই প্রতিষ্ঠানে পড়লেও সেকশন ছিলো ভিন্ন। আমার ছিলো বায়োলজি প্রধান আর গণিত ঐচ্ছিক। তার ছিলো গণিত প্রধান আর বায়োলজি ঐচ্ছিক। ক্লাসে দেখা না হলেও ক্যাম্পাসে দেখা হতো, আড্ডা হতো। পরে দুজনে একই মেডিক্যালে একই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হই। পাঠশেষে সে কক্সবাজারে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলো। হুট করে শুনি, মোস্তফা আর নেই। বিষণ্ণনতায় ভুগে সে নিজের জীবনের দীপ নিজেই জোর করে নিভিয়ে দিয়েছে। যে চারজন বন্ধুর কথা মনে পড়লো তারা সবাই আমার ছেলেবেলার বন্ধু ছিলো, সতীর্থ ছিলো।

দুহাজার এগারো সালের শুরুতেই আমার মাথায় যেন বাজ পড়ে। খবর পেলাম, প্রবাসে আমার বড়োভাই তার কোনো এক স্বদেশি সহকর্মীর প্রতারণার শিকার হয়েছে কর্মক্ষেত্রে। তিনি প্রকৌশলী বিধায় নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করতেন যে দোকান হতে তাদের বিল পরিশোধ নিয়ে ঝামেলা করে স্বদেশি এই লোক। ফলে বড়ভাই বিপদে পড়েন সাময়িক। তাঁর এই বিপদের কথা জানতে পেরে আমার মা অস্থির হয়ে উঠেন। তিনি সেই বিপদমুক্তির আশায় আধ্যাত্মিক শক্তির সাহায্য নিতে চট্টগ্রাম চষে বেড়ালেন। সেবার শীত পড়েছিলো খুব জাঁকিয়ে। শৈত্যপ্রবাহ ছিলো খুব কঠিন। অতিশীতে উত্তরবঙ্গে কয়েকজন মারাও গিয়েছিলো। এমন সময় ছোটভাই ফোন করে জানালো, মায়ের কোমড় হতে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত তীব্র ব্যথা। তাকে বললাম, মাকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলপট খেতে দে, একজোড়া ভারী ও লম্বা টার্কিশ মোজা কিনে দে, বাটা দোকান থেকে একজোড়া শু কিনে দে, যাতে ঠাণ্ডায় কষ্ট না পায়। বাসায় একজন অর্থোপেডিক কন্সালটেন্ট কল করে মাকে দেখা। ছোটভাই করিৎকর্মা। উচ্চ ফি দিয়ে হলেও বাসায় একজন অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট নিয়ে আসলো। তিনি দেখে মাকে বেডরেস্ট দিলেন এবং দশ কেজি ওজনের ট্র্যাকশন দিলেন কোমড় হতে যাতে কোমড়ের হাড় বা ভার্টিব্রা লাইন বরাবর থাকে। দুদিন পড়ে ছোট ভাই জানালো, মায়ের ব্যথা আরও বেড়েছে। আমি আর দেরি না করে মাকে দেখতে গেলাম। আমার শিক্ষক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্তের কাছে মাকে দেখালাম। তিনি বুকের এক্স-রে করিয়ে বললেন, মায়ের ফুসফুসে ক্যান্সার। এ কথা শোনার পর আর আমার ধীরতা বজায় রাখতে পারলাম না। তিনি আরও জানালেন, ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। এ কারণেই তাঁর অস্থিতে ব্যথা হচ্ছে। মায়ের এই অসুস্থতা আমাদের জন্যে বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে দেখা দিলো। বড় দুভাইয়ের কাছে বার্তা গেলো। খুব দ্রুত মায়ের ভিসা করিয়ে ভারতে মাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো। এর ফাঁকে আমার বোনেরা মায়ের সুস্থতার আশায় দশটা করে বস্ত্র দান করা শুরু করলো। ইতোমধ্যে মায়ের কাশিতে রক্ত যেতে শুরু করলো। মায়ের রক্ত দেখে আমার ধৈর্যের বাঁধ গেলো ভেঙ্গে। এসময় উদ্ভব হলো মাটি ফুঁড়ে হাজারো উপদেশ দাতার। এই করো সেই করো। এখানে নে ওখানে নে ইত্যাদি। কিন্তু আমার মনের পাষাণভার কেউ নিতে পারলো না।

আমার ভারতীয় ভিসা হতে জটিলতা হলো। তাই মায়ের সাথে বড় মামাকে পাঠানো হলো। বড় মামা ভারতে বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করেছেন। কাজেই তাঁর সবকিছু ভালোই চেনা আছে। মাকে যেদিন ভারতে নেওয়া হবে সেদিন আমরা সবাই বিমান বন্দরে ভিড় করলাম। হুইল চেয়ারে করে মাকে বিমানে তুলে দিলাম আমরা। বিমান টেক অফ করলো। বলাকার মতো এক সময় বিমানও উড়ে চললো আকাশে। তার সাথে উড়ে চললো আমাদের হৃদয়-মন সকলই। তীব্র ব্যথায় বুকের ভেতর চেপে বসেছে বিরাট পাথর। বুকভরা বেদনায় মায়ের সুস্থতা কামনা করতে করতে আমরা ফিরে চললাম ঘরে, যেখানে মায়ের ঘামের ঘ্রাণ মিশে আছে, আমাদের মায়ের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। মায়ের পরিধেয় শাড়ির আঁচল যেখানে এখনও পাতা আছে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়