প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দেবদাস কর্মকারের কবিতা
হৃদয় অঙ্গার হলে
হৃদয় অঙ্গার হলে নেমে আসে রাতের বাতাস
ক্ষণিক শরীর হিম হয় তার অলীক পরশে
শতচ্ছিদ্র নগরীর আকাশ জুড়ে এক ফালি চাঁদ
আমার আত্মবোধের উপরে কেমন জমে ঘন নীল ।
জানি না কোথায় শান্তি, শতাব্দীর নিগূঢ়তম কথা
ছুটছে মানুষ, সভ্যতার করুণতম ছায়া পথে
কী চাই আমার?
ছিন্ন ভিন্ন গোলাপ, কাঁটা বিঁধা ক্ষত।
এই শীত সন্ধ্যায় খুব চাই কি অপার্থিব সুখ?
রাজ্য পুড়ে গেলে কী করে শুনি পাখির সংগীত!
পলি মেখে বয়ে যাওয়া নদীর প্রিয় কলস্বর!
মন জুড়ে আছে যেন বা ভাঙাচোরা ইট
অচেনা পথের টানে কখোন কোথায় দাঁড়াই!
ইচ্ছের ঘুড়ি ওড়ে দূর থেকে দূরে, আরও দূরে।
সব অনুকল্প মঞ্জু ভাষ যেন বা জেগে ওঠে ধীরে
যদি আলোয় ভরে ওঠো তুমি হে প্রিয়
অনন্ত প্রতীক্ষা হে চির জনমের সখা,
হৃদয় অঙ্গার করে
ক্ষণিক জীবনের পাড় ভাঙা কুলে
ঘোর সন্ধ্যায়--
শতচ্ছিদ্র এই নগরীর আকাশ জুড়ে
ওঠে যখোন একফালি চাঁদ।
২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা, ৭ পৌষ ১৪৩০; শীতকাল।
যা কিছু চলে গেছে দূরে
যা কিছু চলে গেছে ডাঙা ছেড়ে দূরে
সোনা হয়ে ওঠা ভোর কতো রাঙা রেখা
কোন মৃদু ভিজে মুখ কোন স্নিগ্ধ অবসরে
পুরনো প্রাণের কথা জাগে নিভৃত স্মৃতির মতো।
সেই সব দৃশ্যাবলি খুব যেন কাছে
কোন এক জলনারী ঈশ্বরীর মতো ডেকে নেয় দূরে
যেখানে ঢাকে মেঘ, মৃদু রোদ্দুরে রক্তকিংশুক
পারিজাত বনে হঠাৎ বাতাসে সুর কম্পন।
জীবনের কোথায় কী যেন নিভৃত কুহক
সবুজ পাতার ভাঁজে যখোন নীলাভ আঁধার
সারারাত শীতে শুয়ে মাঠ, পাকা ধান নিয়ে বুকে
জ্যোৎস্নার জলে যেন প্রেয়সীর শেষ চুম্বন।
মানুষের সকল হৃদয় উড়ে আসে বুঝি বা খুব চুপে
তখোন সন্ধ্যা হয়ে আসে চারিদিক, খুব একা
জীবনের কতো গাঢ়তর রূপ যত কিছু ভুলচুক
তুচ্ছ গৃহকোণ প্রেম স্বপ্ন আলোর রেখার মাঝে
ধূলি হয়ে সারারাত ভাসে।
ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫ পৌষ ১৪৩০; শীতকাল।
অনুরণন নগ্ন নির্জনে
তখোন হয়ত রাত তোমার মনের বারান্দায় শূন্যতা
কী যেনো এলোমেলো কথা শীতের বাতাস ঠেলে আসে মনে
হয়ত রাস্তার মোড়ে টিমটিমে আলো গাছের আড়ালে
কী জানি কী অবসাদ জানালার পর্দায় ওঠে কেঁপে
ও পাশে নীল নির্জন ছায়া মাথা কোটে একা।
কী বার্তা পাঠাও যেন দূরের বাতাসে
আমার সব অনুভব টের পায় অনন্ত পথের কথা
একটি বছর শেষে অতল অতীত অতিক্রান্ত পরমায়ু
দাঁড়াই আঁধারে, দেখি কুয়াশায় মরা জ্যোৎস্নার চাঁদ
সহস্র আতশবাজির আলোয় কাঁপে রাতের আকাশ
নতুন বছর আসে বুঝি পুরোনোকে পায়ে ঠেলে।
সমস্ত তারুণ্য বেলা কেটে গেছে বহুদূর পথে
যখোন হলো দেখা তখোন যেন বেলা নেই আর
ক্বচিৎ মনের এপাশে উদীচী আকাশ, কী যে ছিল কথা
তোমার বারান্দায় শূন্যতার অনুরণন ভিতরে বাহিরে
আমি নেই কবিতার পাণ্ডুলিপি পড়ে আছে পাশে
কোথায় যেন নিষ্ফল অধম অন্ধকার
কোলাহল থেকে দূরে আকাশ ব্যাপিয়া
দ্বিখণ্ডিত চিত্তে নগ্ন নির্জনে।
২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ঢাকা, শীতকাল।