প্রকাশ : ১০ মে ২০২২, ০০:০০
আন্তর্জাতিক মা দিবস ও রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর সমাপতনে বিরল এক সুযোগ এসেছে রবীন্দ্র রচনায় মায়েদের ভূমিকাকে খতিয়ে দেখার। রবীন্দ্রনাথের নিজের জীবনে মাকে খুব একটা বেশি কাছে পাওয়া হয়নি। অকালপ্রয়াত বুধেন্দ্রনাথসহ মোট পনের সন্তানের মা সারদা দেবীর পক্ষে তাঁর চতুর্দশতম সন্তানকে ততবেশি সময় দেয়া হয়নি। তিনি থাকতেন ওপর তলায় আর রবি থাকতো নিচতলায় ভৃত্যসর্দার ব্রজেশ্বরের তত্ত্বাবধানে। রবি কী খাবে না খাবে, কিংবা কী তার বায়না, সে বিষয়ে সারদা দেবীর কোনো মাথা ব্যথা ছিল না। তিনি কেবল ওপরতলায় বসে ঘরের মেয়েদের সাথে সময় কাটানোর জন্যে তাস খেলতেন আর জমিদারগিন্নীদের যা হয়, অর্থাৎ আফিম সেবন করতেন। সে সময়ে এক-আধটুকু আফিম কর্তা মশায় বা কর্তামারা সবাই সেবন করতেন বৈকি। কেবল মাস্টার মশায়কে পড়া ফাঁকি দেয়ার জন্যে ওপরতলায় মাশের কাছে ধর্ণা দিতেন বালক রবি। মা-ও হাতে তাসের সজ্জা নিয়ে ব্রজেশ্বরকে বা মাস্টার মশায়কে বলে পাঠাতেন, আজ আর পড়াতে হবে না। এটুকুই ছিল রবির সাথে মায়ের বলার মতো স্মৃতি। সারদা দেবী যখন মারা যান তখন ওপরতলা থেকে নিচতলায় রবিদের কানে খবরটি আসতে বেশ সময় লেগেছিল। নিস্তব্ধ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা মাকে দেখেও রবির তেমন কোনো অনুভূতি হয়নি। ঘুমিয়ে থাকা মা যেন একটু পরেই উঠে যাবেন জেগে। কিন্তু মাকে যখন কপালে লাল সিঁদুর পরিয়ে শ্মশানযাত্রায় নেয়া হলো তখন বুঝাতে পেলেন রবি, মা বোধ হয় এবার আর ঘুম থেকে জাগবে না। মা আর এবার যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসবে না। মায়ের এই মৃত্যু নিয়েই রবি ভানুসিংহ নাম ধারণ করে মৃত্যুকে শ্যামের সাথে তুলনা করেছেন কিনা তা জানা না গেলেও পরবর্তী সময়ে আপনজনদের মৃত্যু রবিকে একে একে দেখতে যেমন হয়েছে, তেমনি সইতেও হয়েছে।
শৈশবে মাকে অন্যসব ছেলেদের মতো কাছে না পেলেও মাকে নিয়ে অন্যদের মতো এক কল্পজগত রবির ছিল, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আমরা 'বীরপুরুষ' কবিতায় কল্পজগতে বিচরণকারী সেই কিশোরটাকেই দেখি, যে মাকে নিয়ে যাচ্ছে কোনো এক ভ্রমণযাত্রায়। সব কিশোরের কাছেই জগত সম্পর্কে যেমন মা কম জানে তার চেয়ে, তেমনও রবীন্দ্রনাথের কল্পজগতের কিশোরের মা-ও তেমনি। তিনি হেঁশেল আর সংসারের বাইরে একটি কদম পা রাখেননি কোথাও। এই বোকাসোকা আদরিণী মাকে নিয়ে খোকা যে ভ্রমণে বের হলো, সে ভ্রমণযাত্রায় মাকে দেখভাল করার দায়িত্ব যেন বীরপুরুষ খোকার। ডাকাতদের সাথে লড়াইয়ে মা তাই ভয়ে ভয়ে পালকিতে এককোণে জড়সড় হয়ে কেঁপে কেঁপে ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করলেও তাঁরই ছোট্ট খোকা হঠাৎ যেন বড় হয়ে যায়। তার বীরত্বে মা বেঁচে যাওয়ার যে কল্পকাহিনী বালক রবীন্দ্রনাথ হৃদয়ে ধারণ করেছেন, তা তাঁর বয়সী ছেলেদের এক কাঙ্ক্ষিত কল্পলোকের ফিকশন।
রবীন্দ্রনাথের মায়েদের মধ্যে সত্যিকারের এক মায়ের চরিত্র 'আনন্দময়ী'। আনন্দময়ী পূজা-অর্চনা ও ধর্মীয় ছুঁৎমার্গ বিষয়ে শতভাগ গোঁড়া। কিন্তু সেই মায়ের কোলে যখন গোরা মানে গৌরমোহনের আগমন ঘটলো, তখন মাতৃত্বের মমতায় তাঁর সেই ধর্মীয় সংস্কারের সবটুকু আগল ভেঙে গেল। আমরা পেলাম তখন শাশ্বত এক বিশ্বজননীকে যিনি কোলে ও অন্তরের মাঝে ধারণ করতে পারেন জগতের সকল সন্তানকে। আইরিশ দম্পতির জীনজাত সন্তান গোরা যাকে দাঙ্গার সময় পাওয়া গিয়েছিল রাস্তায় বিপজ্জনকভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায়। সেই গোরাকে যখন আনন্দময়ী পেলেন, তখন আর তাঁর ছুঁৎমার্গ রইলো না। অন্তরের সর্বস্ব দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন গোরার মা। গোরার বন্ধু বিনয় ব্রাহ্মদের সাথে সংযোগ রাখার কারণে গোরা তাকে পরিত্যাগ করতে চায়। মা আনন্দময়ী এসে গোরাকে বুঝিয়ে নিবৃত্ত করতে চাইলেও গোরা অনড়। তবু খাঁটি ব্রাহ্মণরূপে নিজেকে গড়ে তোলা গোরাকে মা আনন্দময়ী কখনো একবারের জন্যেও বুঝতে দেননি, আইরিশজাতক গোরার নিজের গোড়াই টলোমলে।
চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্যে চণ্ডালকন্যা প্রকৃতির মা মায়া, যিনি মেয়ের আহত মনকে প্রশমিত করতে জাদুমায়ার আশ্রয় নেন। জাতপাতের আগল টেনে সমাজ চণ্ডালকন্যা প্রকৃতিকে নির্মমভাবে আহত করে। সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে মা মায়াবলে বুদ্ধসেবক আনন্দকে ঘরের মধ্যে এনে আটকে রাখেন। এখানে প্রকৃতির মা হিসেবে মায়া তাঁর অপত্যস্নেহে বেদনার্ত মেয়ের জন্যে অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হতে দ্বিধান্বিত হননি। মেয়ের প্রতি ভালোবাসায় তিনি পাপ হবে জেনেও আনন্দকে আটকে রেখে বলেন,
'বাছা, তুই যে আমার বুকচেরা ধন।
তোর কথাতেই চলেছি
পাপের পথে পাপীয়সী
হে পবিত্র মহাপুরুষ,
আমার অপরাধের শক্তি যত
ক্ষমার শক্তি তোমার
আরো অনেকগুণে বড়ো
তোমারে করিব অসম্মান
তবু প্রণাম তবু প্রণাম তবু প্রণাম।'
'শেষের কবিতা'র যোগমায়া এক মায়াবতী মমতাময়ী মা। বাস্তবে তিনি অমিত রায় বা লাবণ্য-কারুরই মা নন। কিন্তু তাঁর মাঝে মাতৃত্বের ফল্গুধারা বয়ে চলেছিল অন্তরজুড়ে। পাহাড়ি পথের পাগলামো দুই পথিক তথা অমিত-লাবণ্যকে কাছে এনে দিলেও, তাদের জোড় বাঁধার অনিশ্চিত সময়ে তিনিই হয়ে ওঠেন লাবণ্যর মা। নিজের মেয়ের প্রতি যে টান মায়েদের থাকে, লাবণ্যর প্রতি যোগমায়ারও সেই টান এবং সেই দায়িত্ববোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অমিত রায় প্রথম দর্শনে যোগমায়াকে বর্ণনা করছেন এভাবেই, চল্লিশের কাছাকাছি তাঁর বয়স, কিন্তু বয়সে তাঁকে শিথিল করে নি, কেবল তাঁকে গম্ভীর শুভ্রতা দিয়েছে। গৌরবর্ণময় মুখ টস টস করছে শুভ্রতায়। বৈধব্যরীতিতে চুল ছাঁটা; মাতৃভাবে পূর্ণ প্রসন্ন চোখ; হাসিটি স্নিগ্ধ। মোটা থান চাদরে মাথা বেষ্টন করে সমস্ত দেহ সম্বৃত। পায়ে জুতো নেই, দুটি পা নির্মল সুন্দর। মাসীজ্ঞানে অমিত তাঁর পায়ে হাত দিয়ে যখন প্রণাম করলো, তখন ওর শিরায় শিরায় যেন দেবীর প্রসাদের ধারা বয়ে গেল। আর যোগমায়াও লাবণ্যের দিকে আড়চোখে চেয়ে একটু হেসে মনে মনে ঠিক করে নিলেন, এদের দুজনের জোড় খুব মানাবে। অমিতর সঙ্গে যথেষ্ট আলাপ হতে না হতেই তিনি ঠিক করে বসে আছেন, এদের দুজনের বিয়ে হওয়া চাই। সেই আশার প্রতি লক্ষ করেই তিনি অমিতকে বললেন, ‘বাবা, তোমরা দুজনে ততক্ষণ আলাপ করো, আমি এখানে তোমার খাওয়ার বন্দোবস্ত করে আসি গে।’
রবীন্দ্রনাথের আরেক বিখ্যাত চরিত্র ফটিক। দুরন্ত ফটিকের জন্যে ফটিকের অকাল বিধবা মাকে যে হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল তারই বদৌলতে ছেলেকে ভাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে মা একটু হাড় জিরেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাকে ছেড়ে মামার কাছে যাওয়ার অতি আগ্রহ দেখে মায়ের কোমল মনে কোথায় যেন বেজে ওঠে। পক্ষান্তরে বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রী নিজের তিন ছেলের মা হলেও ফটিকের জন্যে মাতৃত্বের মমতা ধারণ করতে পারেননি। ফটিককে উপদ্রব মনে করে সংসারে পরগাছার মতো ব্যবহার করা শুরু করলেন। জ্বরাক্রান্ত ফটিক শেষে স্নেহময়ী মায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেও মা তাকে ধরে রাখতে পারলেন না। ফটিক চলে যায় বৈকুণ্ঠে স্বয়ং। বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়িতে ফটিকের অবস্থান জানান দিতে রবীন্দ্রনাথ চমৎকারভাবে তের-চৌদ্দ বছরের কিশোরদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর এই বর্ণনায় সম্ভবত মা মারা যাওয়ার পরে নিজের তেরো-চৌদ্দ বছরের কিছু অনুভূতিও লুকিয়ে থাকতে পারে। তাঁর ভাষ্যে আমরা জানতে পারি, ' বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়; লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বোধ হয়।'
'দেবতার গ্রাস' কবিতায় আমরা দুজন মাকে দেখতে পাই যাঁদের ছেলে বটে রাখাল। দুইবোন অন্নদা আর মোক্ষদার ছেলে রাখাল বড় দুরন্ত। জীনগত মা মোক্ষদা জন্ম দিলেও তাকে স্তন্যপুষ্টি দান ও লালন-পালন করেন তিন সন্তানের জননী আপন মাসী অন্নদা। সাগর-সঙ্গমে যাত্রায় রাখাল মাকে ফাঁকি দিয়ে তরণীতে উঠে পড়ে। মাসী অন্নদা দৌড়ে আসেন রাখালকে নিরস্ত করার জন্যে। মা মোক্ষদা রাখালকে মানাতে না পেরে শেষমেষ বলে ওঠে, চল তবে তোকে সাগরে দিয়ে আসি। এবং সত্যি সত্যি প্রত্যাবর্তনকালে রুদ্র সাগরের কাছে রাখালকে দিয়ে আসতে বাধ্য হয় শোকমূর্ছিতা জননী। রাখালের মা এখানে চিরকালীন বাঙালি মায়ের শোকানলদগ্ধ প্রতিচ্ছবি।
'জন্মকথা' কবিতায় আমরা আরেক মাকে পাই যিনি কৌতূহলী শিশুর প্রশ্নের উত্তর দেন জন্ম বিষয়ক সত্য নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ এখানে চিরকালীন শিশু হয়ে মাকে শুধান,
"এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।'
শিশু রবীন্দ্রনাথকে উত্তর দেয়া মা-টিও যেন আবহমান বাঙালির মা হয়ে বলেন,
"ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।"
প্রকৃত সত্য এটাই, মায়ের মনের গভীরে যে মাতৃত্বের সুধা রয়েছে, সেই সুধার শক্তিতেই এই মাটির ধরায় আগমন হয় সকল শিশুর। শিশু তাই মায়ের 'ইচ্ছেশস্য।'
'নিষ্কৃতি' কবিতায় আমরা চিরকালীন এক বাঙালি মায়ের চরিত্র পাই যিনি তাঁর মেয়েকে বয়সের তুলনায় পাঁচগুণ বড়ো পাত্রের কাছে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। মঞ্জুলিকা অল্পবয়সী বালিকা হলেও তার কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত নয় বলে মা এখানে প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়ান। আবার অতি প্রশ্রয়ে নিজের সন্তানদের গোল্লায় যেতে দেয়া মা গান্ধারীকেও রবীন্দ্রনাথ এঁকেছেন তাঁর কবিতায়। দেখা যায়, বহুমাত্রিকতায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় মায়েদের ওপর আলোক সম্পাত করেছেন। তিনি কোমল মাকে যেমন টেনেছেন, তেমনি প্রতিবাদী মাকেও এনেছেন। তিনি সংস্কারত্যাগী মায়ের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি সংস্কারবাদী মায়ের কথাও শুনিয়েছেন।
মা হলো শিশুর শেকড়। শেকড়হীন গাছ যেমন বাঁচতে পারে না, তেমনি না ছাড়াও শিশু বাঁচা অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথ তাই মাকে বন্দনা করে গেয়েছেন,
'যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা!
আমি তোমার চরণ---
মা গো, আমি তোমার চরণ করব শরণ, আর কারো ধার ধারব না মা ॥'
যে মাকে রবীন্দ্রনাথ না ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই মা স্বয়ং দেশ মা। এই দেশ মাতার মুখ মলিন হলেই মায়ের নয়ন তাঁর সন্তানেরও কান্না পায়। তাই রবীন্দ্রনাথ আবারো গেয়ে ওঠেন,
'মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি।'
এই মায়ের কথা ভেবেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চার হাজার ছয়শ বিরাশি দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। তারপরও তাঁর দেশমাতাকে স্বাধীন করে রবীন্দ্রনাথের সেই গানকেই তাঁর দেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছেন। গানে গানে মাকে স্মরণ করে রবীন্দ্রনাথ কোটি কোটি মানুষকে দেশপ্রেমী ও মা-প্রেমী বানিয়ে তুলেছেন।
নিজের বিভিন্ন রচনায় মায়ের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ভুলে যাননি কিন্তু মা-হীনতার দুর্দশার কথা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় মা-হারাদের কথাও আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। মাতৃহীন হৈমন্তী ঋষিতুল্য বাবার কাছে বড় হলেও, মায়ের শিক্ষা ও মমতা না পাওয়ায় তার বয়স সমাজের ষোল হয়ে গেছে বটে তবে সে তার স্বভাবে পরিণত হয়ে ওঠেনি। অর্থাৎ সে ষোল স্বভাবের ষোল হয়ে ওঠেনি। আবার মাতৃপিতৃহীন অনাথ রতনকেও তিনি চিত্রিত করেছেন মা-হীনতার দুর্দশা দেখিয়ে।
অন্য মায়েদের চেয়ে বাঙালি মায়েরা একটু বেশি স্নেহময়ী। রবীন্দ্রনাথের রচনায় বর্ণিত মায়েরাও তাই। রবীন্দ্র-রচনায় মায়েরা গরীব হলেও আদর্শবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও মমতাময়ী। এই মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনায় অহর্নিশ আত্মহীন হয়ে বিলীন করে দেন নিজেকে অপত্যস্নেহে। রবীন্দ্রনাথ শিশুর মাকে যেমন চিত্রিত করেছেন, তেমনি সংগ্রামী যুবাপুরুষের মায়ের কথাও বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের মায়েরা আগাগোড়া বাঙালি ও সর্বাংশেই মা, কোন অংশেই তাঁর নারীত্ব শাশ্বত মাতৃত্বকে ছাপিয়ে যায়নি।