প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে রোজাদার সংযম পালন করে থাকেন। এ মাসে কিছু বর্জনীয় কাজ রয়েছে, যা রোজার দিনে মনে অজান্তেই ঘটে যায়। যার ফলে রোজা ভেঙে যায় এবং পরবর্তীতে সেই রোজা কাজা করা আবশ্যক হয়ে যায়। তবে এসব রোজার কাফফারার প্রয়োজন হয় না। সে কাজগুলো কী?
১. অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে : রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজু বা গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা অবস্থায় অজু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করা যাবে না। কারো গলার ভেতরে পানি চলে গেলে রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (আবু দাউদ ২৩৬৩, ফতোয়ায়ে শামি ২/৪০১)
২. অখাদ্য খেলে : আহারযোগ্য নয়, এমন খাবার খাওয়া। সাধারণতে যা খেলে কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোজা ভেঙে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (বুখারি ১/২৬০, রদ্দুল মুহতার : ২/৪১০)
৩. থুথুর সঙ্গে রক্ত গলার ভেতরে গেলে : দাঁত বা মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে তা যদি থুথুর সঙ্গে গলার ভেতর চলে যায়, আর রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৯৬)
৪. বীর্যপাত হলে : হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোজা ভেঙে যাবে। এটা ভয়াবহ গুনাহের কাজ। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (বুখারি ১/২৫৪, ফতোয়ায়ে শামি ২/৩৯৯)
৫. বমি গিলে ফেললে : মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে; যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫)
৬. হায়েজ বা নেফাস শুরু হলে : রোজা অবস্থায় হায়েজ/মাসিক/ঋতুস্রাব বা নেফাস শুরু হলে রোজা ভেঙে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (বুখারি ১/৪৪, আন নুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১০০)
৭. পেটের ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগালে : পেটের ভেতর ওষুধ চলে যায়, এমন ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগালে রোজা কাজা করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগাতে হলে পরে সে রোজার কাজা করে নিতে হবে। কাফফারার প্রয়োজন নেই। (রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
৮. নাকের ভেতর ওষুধ বা পানি গেলে : নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
৯. মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি গেলে : মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোজা ভেঙে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
১০. ভোর হয়নি ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করা : সুবহে সাদিকের পর সেহরির সময় আছে ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোজা ভেঙে যাবে। তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করে নিলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (আল বাহরুর রায়েক ২/২৯১)
১১. রোজা নষ্ট হয়েছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে : রোজা রাখা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১)
১২. বমির কারণে রোজা নষ্ট হয়েছে ভেবে রোজা ভেঙে ফেললে : অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোজা ভেঙে ফেললে রমজানের পরে এ রোজার কাজা করা লাগবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৪৯, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১)