বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বিতর্কে গঠনমূলক বক্তব্যের সূচনা
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

জগতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো সূচনা। যে কোনো সূচনাই কঠিন, সে যে ধরনের কাজই হোক না কেন। আসলে উত্তম সূচনা মানেই অর্ধ সমাপন। এ কারণে সূচনাকে কঠিন বলেই মনে হয় সবার কাছে। সূচনাকে কঠিন করে বোঝানোর জন্যেই উদ্ভূত হয়েছে এক প্রবাদ, 'বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?' সব কাজের সূচনার চেয়ে অধিকতর কঠিন কাজ হলো বক্তব্যের সূচনা। বিশেষত বিতর্কের মঞ্চে বক্তব্যের সূচনা। সনাতনী বিতর্কে ছয়জন বক্তা থাকেন। প্রতিজন বক্তার সূচনাই স্বতন্ত্র হতে পারে। রাজনৈতিক বক্তৃতা কিংবা আলোচনা সভার বক্তব্যের সূচনা হয় সম্বোধনের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সনাতনী বিতর্কে বক্তার বক্তব্য সূচনা করতে গিয়ে সম্বোধনের বড় কোনো তালিকা আসে না। অভিনব কিংবা অপ্রতিম সূচনা না হলে দর্শক ও বিচারকম-লী বক্তার বক্তব্যে মনোনিবেশ করেন না। বিতর্কমঞ্চে প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত মূল্যবান। সূচনাও যাতে একটি যুক্তির ভিত রচনা করে কিংবা একটি যুক্তি খণ্ডনের পথ তৈরি করে দিতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

বিতর্কে বক্তব্যের সূচনায় প্রথম বক্তার ক্ষেত্রে সম্বোধন ও প্রস্তাবনার পরিচিতি উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় বক্তা বা দলনেতার ক্ষেত্রে কিছুটা অভিনবত্ব দাবি রাখে। বক্তব্যের সূচনার জন্যে তিরিশ সেকেন্ড বরাদ্দ রাখা যায়। প্রথম বক্তার বক্তব্যের সূচনা সম্বোধন দিয়ে হলেও তাতে কুশলাদির কোনো সুযোগ নেই বা প্রয়োজনও নেই। কেননা এটি কোনো সামাজিক বক্তব্য যেমন নয়, তেমনি এটি জনসভাও নয়। এটি একটি নির্ধারিত সময়ের এবং নির্ধারিত ছকে বাঁধা প্রতিযোগিতা, যেখানে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কে কত দ্রুত ও কার্যকর যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে। কাজেই সময়ের সদ্ব্যবহার এখানে জরুরি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বক্তার ক্ষেত্রে প্রস্তাবনাকেন্দ্রিক গল্প বা আখ্যান নির্মাণ করে বক্তব্যের সূচনা করা যায়। যেমন উদাহরণ দেয়া যাক---

‘দুর্নীতি আমাদের উন্নয়নের বড় অন্তরায়’। এ প্রস্তাবনার পক্ষে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্য এভাবে সূচিত হতে পারে। 'ধন্যবাদ সম্মানীয় মডারেটর আমাকে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্যে। সম্মানীয় সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর 'কারাগারের রোজনামচা'র একটা গল্প শোনাই। কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী শেখ মুজিবের দেখা হয় তৎকালীন দক্ষিণবঙ্গের কুখ্যাত চোর রহিমের সাথে। এই রহিমই স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর কাছে, তাদের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি সে-ই করেছে। এ প্রসঙ্গে সে জানায়, চুরির টাকায় কোনোদিন বাড়ি হয় না।’ সম্মানিত সভাপতি, চোর রহিমের এই সরল স্বীকারোক্তি হতে আমরা জানতে পেরেছি, দুর্নীতিবাজের জীবন কখনও উন্নত হয় না। সে যতই সম্পদশালী হোক না কেন তার নিজের উন্নয়ন সুদূর পরাহত। এ শিক্ষা থেকে আমরাও বলি, দুর্নীতি আমাদের উন্নতির সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দেখা যাচ্ছে, একটা আখ্যান দিয়ে বক্তব্য সূচনা করায় সবার মনোযোগ ছিল বক্তার প্রতি এবং সূচনাটি প্রাসঙ্গিক হওয়ায় এর উপস্থাপন যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তেমনি কেউ কেউ প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য কবিতা দিয়ে তার বক্তব্য সূচনা করতে পারে। যেমন, একটি প্রস্তাবনা ধরা যাক, ‘জাতিকে উন্নত করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন অনস্বীকার্য’। কেউ যদি এই প্রস্তাবনার পক্ষে দাঁড়িয়ে নজরুলের 'নারী' কবিতা দিয়ে বক্তব্য সূচনা করে তাহলে তো কোনো কথা থাকে না। কিন্তু অনেকেই পদ্যের আশ্রয় নিতে গিয়ে নিজের বানানো চরণে যখন বক্তব্য সূচনা করে তখন তা মান হারিয়ে ফেলে। আবার কখনো কখনো জুতসই কোনো যুক্তি খণ্ডন বা যুক্তি প্রদর্শন করে নিজের বক্তব্যের সূচনা করা যায়। বক্তা তার বক্তব্যের সূচনায় কোনো পরিসংখ্যান কিংবা কোনো তত্ত্ব উপস্থাপন করেও গঠনমূলক অংশকে এগিয়ে নিতে পারেন। এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বিতর্কে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় দর্শকের হাততালিতে নয় বরং বিচারকের মুগ্ধতার ওপর। কাজেই বিচারকম-লীর মুখভঙ্গি মাঝে মাঝে খেয়াল করা কর্তব্য। এটা মনে রাখতে হবে সবার যে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্য বেস্ট ইমপ্রেশন। বক্তার চার/পাঁচ মিনিটের বক্তব্যকে বিচারকম-লীর হৃদয়ঙ্গম করাতে হলে তিরিশ সেকেন্ডের সূচনার গুরুত্বই সর্বাধিক।

বক্তব্যের সূচনায় নিজস্ব ও অপ্রতিম বাচনভঙ্গি উপস্থাপন করা জরুরি। বাচনভঙ্গির নান্দনিকতায় বক্তব্যের সূচনা দুর্বল হলেও পার পাওয়া যায়। সূচনাপর্বে যদি কঠিন কঠিন শব্দের সঠিক উচ্চারণ সংযুক্ত করা যায়, তবে বিচারক মনোযোগী শ্রোতা হয়ে উঠতে পারেন। বিচারককে বক্তা তার বক্তব্যের প্রতি মনোযোগী করে যদি তুলতে না পারেন তবে তার চার/পাঁচ মিনিটের বক্তব্যই বৃথা।

কখনো কখনো চটুল বাগধারা কিংবা লোক-প্রবাদ দিয়ে কেউ কেউ বক্তব্যকে আকার দিতে চাইলেও এ কথা তাদের মনে রাখা জরুরি, অপ্রাসঙ্গিক এবং মানহীন রম্যতা বক্তব্যের গাম্ভীর্য বিনষ্ট করে। কাজেই কোনরকম আবেগতাড়িত হয়ে নয়, বরং বুদ্ধি ও যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তা তার বক্তব্যের সূচনা করতে হয়। যারা প্রস্তাবনা পাওয়ার পর সূচনা নিয়ে অথৈ পাথারে পড়েন, তারা সূচনার সহজ পথ প্রস্তাবনা বিশ্লেষণে চলে যেতে পারেন। আপনার আগের বক্তা প্রস্তাবনা বিশ্লেষণে কোনো অপূর্ণতা রেখে গেলে কিংবা প্রতিপক্ষের বিশ্লেষণের সাথে আপনার দ্বিমত থাকলে তা পরিষ্কার করে প্রস্তাবনার বিশ্লেষণকে পূর্ণতা দিয়ে বক্তব্যের সূচনা করা আপনার জন্যে নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।

লেখক : উপদেষ্টা, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন; অধ্যক্ষ, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়