প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
পর্ব-৩
২০১৭ সাল। সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ করছি। কলেজে ভর্তি হবো। কোন্ কলেজে ভর্তি হবো? এসব ভাবনা যখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, হঠাৎ আমাদের প্রিয় রাজন দাদা ম্যাসেজ করলেন চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে আমাকে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। একজন বিতর্কপ্রেমীর জন্যে এ এক আনন্দের সংবাদ। আমি ভাবতে লাগলাম, কখনো তো মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করিনি। তিন মিনিটে, দেড় মিনিটে সতর্ক করতে হয় বিতার্কিককে, আবার উপস্থাপনাও করতে হয়। সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো?
আমার হাতে তখন নোকিয়া সি২ মডেলের একটি ফোন। ভালো মতো চেক করে নিলাম ফোনে স্টপওয়াচ আছে কিনা, ঠিকঠাক চলে কিনা। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে বাড়ি থেকে হেঁটে রহিমানগর বাজার এলাম। একটু ভোরেই বের হলাম। কারণ কাজী শাহাদাত আংকেল সময়ের ব্যাপারে আপসহীন। আশ্চর্যজনকভাবে আমার বন্ধু অভিজিৎ রায় সে বছর কচুয়াতে আমার মতো মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলো। অভিজিৎ গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। গাড়িচালক আলমগীর হোসেন আংকেল আমাকে দেখেই বললেন, ‘সোহেল সাহেব কেমন আছেন?’ আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে চেনেন?’ বললেন, শাহাদাত আংকেলের কাছে আমার প্রশংসা শুনেছেন। তিনি কিছুদিন আগে প্রয়াত হয়েছেন। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
কাজী শাহাদাত আংকেল আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা করলেন। আমি রেজিস্ট্রেশন বুথে বসলাম। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুটো বিতর্ক দল রেডি থাকায় বিতর্ক শুরু হয়ে গেলো। ইসমত আরা সাফি বন্যা আন্টি, এএইচএম আহসান উল্লাহ আংকেল, রাজন দা ছিলেন বিচারক। আমি আর অভিজিৎ মডারেটরের দায়িত্ব পালন করি। খুবই প্রাণবন্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা বিতর্ক শেষে সাংবাদিক ফরহাদ চৌধুরী আংকেলের আমন্ত্রণে গোহট চৌধুরী বাড়িতে তার বাসায় দুপুরের খাবার খেলাম। বাড়িতে পুকুরের উপর তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার নির্মাণ করেছেন। কাজী শাহাদাত আংকেল আমাকে আর অভিজিৎকে নিয়ে ছবি তুললেন। যা তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করেছিলেন। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘দুইজন প্রতিশ্রুতিশীল বিতার্কিক সোহেল ও অভিজিৎ আমার সাথে, গোহট চৌধুরী বাড়িতে’।
আমরা খাবার ও ফটোসেশন শেষ করে চাঁদপুর থেকে আগত অতিথিবৃন্দকে বিদায় জানালাম। আমি আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম। এ ছিলো আমার প্রথম বিতার্কিক থেকে মডারেটর অধ্যায়ে প্রবেশের স্মৃতি।
২০২০ সালে আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও থেমে যায় চাঁদপুর কণ্ঠের বিতর্ক প্রতিযোগিতা তথা প্রাণের উৎসব। তার একটাই কারণ মহামারি করোনা। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আবারো শুরু হচ্ছে আমাদের প্রাণের উৎসব। আমি চাঁদপুরের সকল প্রতিষ্ঠানকে এ উৎসবে শামিল হওয়ার অনুরোধ জানাই। আমাদের গুরু কাজী শাহাদাত আংকেলের নেতৃত্বে আমরা প্রাক্তন বিতার্কিকরা এক ও অভিন্ন। তিনি চাঁদপুরে হাজারো বিতার্কিক গড়ার সফল কারিগর। তিনি তাদের পাশে অভিভাবক হিসেবে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আমাদের প্রাক্তন বিতার্কিকদের নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করার দাবি জানাই এবং চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)-এর কার্যপরিধি বিস্তৃত করার অনুরোধ জানাই। নানা রকম প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার আয়োজন করে চাঁদপুরের বিতর্ককে আরো শাণিত করার উদ্যেগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। (চলবে)।