সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ০৮:৩৮

লেজবিহীন সিংহ লায়ন মাহমুদ হাসানের কুড়মুড়ে জীবনভাষ্য : ‘জীবনের গল্প’

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
লেজবিহীন সিংহ লায়ন মাহমুদ হাসানের কুড়মুড়ে জীবনভাষ্য : ‘জীবনের গল্প’

সবার জীবনের একটা নিজস্ব গল্প থাকে। নিজের জগৎ নিয়েই এ গল্প। কিন্তু তার সাথে জড়িয়ে থাকে সময়, পারিপার্শ্বিকতা ও বন্ধু - স্বজন। নিজের জীবনের গল্প বলতে বলতে একসময় বলা হয়ে যায় তার সময়ের গল্প। জীবন নয়, বরং এ গল্পে বেঁচে থাকে সময়।

লায়ন মাহমুদ হাসান ভাই। কারো কাছে তিনি নানা ভাই। অনেকটা ‘গণ নানা’র মতো।

রোকনুজ্জামান খান যেমন শিশুবন্ধু বলেই দাদাভাই, তেমনি মাহমুদ ভাইও তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের বন্ধু বলেই ‘নানা ভাই’। তাকে সবাই নানা ভাইয়ের পাশাপাশি লেজ ছাড়া সিংহও বলে। তিনি লায়নিজমের আদর্শকে কড়াকড়িভাবে ধারণ করেন। একমুখ ভর্তি সফেদ শ্মশ্রুতে তিনি যেন ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর লেফ তলস্তয়। মুখের জ্যোতিতে দার্শনিকতার কিরণ জ্বলজ্বলে।

নানা ভাই অনেক গুণে গুণান্বিত। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তথা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। এককালের তুখোড় বাস্কেটবল খেলোয়াড়ও। প্রকৌশল জীবনে টেবিল টেনিসেও হাত পাকিয়েছেন। তিনি যেমন সংগঠনগুলো খুঁজে নেন, তেমনি সংগঠগুলোও তাকে খুঁজে নেয়। কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, লাইট ফর হিউম্যানিটি, তারুণ্যের অগ্রদূত তাকে খুঁজে নিয়ে নিজেরা উপকৃত হয়েছে তার নেতৃত্বে। টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটিতে তিনি আমার সহযোদ্ধা। বর্তমানে রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, চাঁদপুরের সভাপতি।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকফোরামে লিখে সম্মাননা পাওয়া মাহমুদ ভাই আত্মজীবনী ‘ জীবনের গল্প’ লিখতে গিয়ে এখন গ্রন্থপিতা। বইটি বেশ সুঠাম ও নাদুস নুদুস। দুশো আট পৃষ্ঠার কলেবর। ছবি ও লেখায় ঠাসা। বালকবেলার ছবি যেমন আছে তেমনি সংসার-কয়েদী হওয়ার সূচনারও ছবি আছে। লেখার মাধ্যমে নিজের শৈশব-কৈশোরকে বেশ ভালোভাবেই রোমন্থন করেছেন। ডাকনাম বিপ্লব থেকে বিপু। ঊনষাটের বিপ্লবদগ্ধ সময়ে জন্ম। তাই ডাকনামে বিপ্লবের তকমা। বইয়ের মধ্যে জীবনের বয়ান বেশ ঝরঝরে। বিনাহেতু পাণ্ডিত্য নেই। অনেককেই তাঁর লেখায় এনেছেন, টেনেছেন। তার জীবনে যারা এসেছেন তারাই বইয়ের গল্পে পদচারণা করেছেন। বয়সকে অতিক্রম করেছেন বলেই কি না, নিজের প্রেমের কথাও সাহসিকতার সাথে তুলে ধরেছেন। অদম্য একুশে এসে তিন তিনজন ভালোলাগা রূপসীর সান্নিধ্য পেতে উন্মুখ থাকতেন। তবে সেই ভালোলাগা প্রণয়ে পরিণত হওয়ার ফুরসত পায়নি।

সমাজকে তিনি দিয়ে যাচ্ছেন দুহাতে। চিত্ত-বিত্ত দুটো দিয়েই। এরসাথে যোগ হলো তার ‘জীবনের গল্প’। হাতে পেয়ে আমাকেই পাঠালেন প্রথম। প্রগাঢ় স্নেহ ও ভালোবাসায়। একশ পঁচিশ নম্বর পৃষ্ঠায় আমাকেও টেনে ধরে রেখেছেন।

বইটি উৎসর্গ করেছেন তার জীবনের তিন মহাগুরুত্বপূর্ণ মানুষকে। বাবা, মা ও জীবনসাথিকে। অত্যন্ত যৌক্তিক ও যুৎসই উৎসর্গ। পালক পাবলিশার্সের ঝকঝকে ছাপা। নাজিম ইউনুসের করা প্রচ্ছদ। আলোকচিত্র আর ডিজিটাল কারসাজিতে সহাস্য মুখচ্ছবি। তবে ছবিটা আঁকা হলে ভালো হতো বেশ। একটু অপূর্ণতা এ জায়গায়।

লেজবিহীন সিংহ, বিদিত নানাভাই বিপু ভাইয়ের স্মৃতিতে বাংলাদেশের জন্ম ও অভ্যুদয় বেশ ভালোভাবেই ফুটেছে। আসলে তিনি তো ঐ সময়েরই কিশোর। কিশোরের স্মৃতি জ্বলজ্বলে, ঝলমলে।

বিপু ভাই শতবর্ষের যাত্রী হবেন নিঃসন্দেহে। তখন জীবনের গল্প দ্বিতীয় খণ্ড পাবো আমরা। দুয়ে মিলে লেজহীন সিংহকে গল্পের খাঁচায় সম্পূর্ণ আটকাতে পারবে বলে বিশ্বাস।

লায়ন মাহমুদ হাসান ভাইকে কৃতজ্ঞতা। বইটা খুব যত্নে ও ভালোবাসায় পাঠিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়