প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০০
সাহিত্যপাতায় প্রকাশিত কবিতা

মবের রাজ্যে কাজী শাহীদুজ্জামান
সমাজ এখন দুষ্ট লোকের
ভদ্র লোকের জন্যে নয়,
শিক্ষা হলো মূল্যহীন পণ্য
টাকায় আজ সবকিছু হয়।
নির্বোধ বলে জ্ঞানের কথা
টেবিল-টকে চর্চা তার,
দুর্নীতিবাজ লুটেরা শোনায় নীতিকথার যত সমাচার।
শিষ্যের কাছে জিম্মি গুরু
নীতি-আাদর্শ অসহায়,
কলিযুগের হিংস্র থাবায়
প্রজন্ম আজ ধ্বংস প্রায়।
মানবতা নেই মানুষের মাঝে
দানবীয়তায় তার হৃদয় ভরা,
অসত্যের জয়ে সত্য আজ তাই
হয়েছে তমসায় দিশেহারা।
দিকে দিকে আজ সর্প সাবকেরা
তুলে ফণা ফেলছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস,
রক্তের হোলি খেলার উন্মাদ নৃত্যে
চলছে দানবের পৈশাচিক উল্লাস।
আইন-আদালত গায়ের জোরে
সব জায়েজ মবের রাজ্যে,
জীবন যেন মূল্যহীন আজ
বিচারালয় নিভৃতে মাথা ঠুকে কাঁদছে।
কুকুর এখন লেজ নাড়ে না
লেজে কুকুর নাড়ে,
উচিত বলার সাধ্য কার
আছে কয়টা মাথা ঘাড়ে।
কাজী শাহীদুজ্জামান, সাহেব বাড়ি, মকিমাবাদ, হাজীগন্জ, চাঁদপুর। রচনাকাল : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি.। মোবাইল : ০১৭১২১১৬৮৮২
অলস জলে মধ্যরাতে দেবদাস কর্মকার
মুহূর্তে স্থির হয়ে যাই, মধ্য মাঠে কি দেখা হলো একবার !
সিঁথি পথে প্রচণ্ড সবুজ কি লাবণ্যময় উদ্ভিদ
মেঘময় মুখে কি অসামান্য সুচিতা
একলা সূর্যাস্ত নানা রঙে ডানা ঝেড়ে নেমে যায়
জলতরঙ্গের শব্দ ভেদ করে ভেসে আসে নদী
সীমান্ত থেমে গেছে যেন মাঠের ওপাশে
দুজন দুধারে নেমে যাই, কতো দূরে অরণ্যের কানা বাঁক।তুমিই তো টেনে এনেছো দূর ভুবনের পথে
কেমন ঘুরতে ঘুরতে নেমে এলাম প্রকাশ্যে-আড়ালে
পিতা মাতা ভাই বোন বন্ধু সন্তান প্রিয়তমা, প্রতিবেশী
সরু থেকে বৃহৎ আনন্দ দুঃখ দীর্ঘশ্বাস সদরে অন্দরে
কখনও ভিড়ের মধ্যে কখনও অসীমে
মনের মধ্যে উঠে তোলপাড়, ঝড়, দ্বিধা দ্বন্দ্ব মত অমতে--হঠাৎ যেন টলে যায় ভুবনখানা বুকের ভেতর
মেঘ তন্ত্রে গভীর আওয়াজ শব্দকুহক রহস্য নীল
এখোন শুধু নির্জনতা অন্ধকারে চমকে উঠে মুখের জ্যোতি
এখোন যেন ঘোর বিনুনি শূন্যতাবোধ চারিধারে
কেবা আবার রাখবে মনে বটের ঝুরির সন্ধ্যাবেলা
জন্ম জীবন ফুরিয়ে গেল না বুঝতেই কেমন যেন
শব্দগুলো যায় মিলিয়ে একটু করে ঘুমের দেশে
ছলাৎ ছলাৎ জলতরঙ্গ অলস জলে মধ্য রাতে।১৭ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা, ৪ বৈশাখ ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল।
কথার বিষাণে পরে ছেদ দেবদাস কর্মকার
তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আবছায়া অন্ধকার
যদিও খরা চৈত্রের চিরল পাতার ফাঁকে চিকন চাঁদ
বুকের ভেতরে অলীক শব্দ, কেমন বিরল কথা
দুচোখে বুলাই আঁধার বাতাস, ভেজা ভেজা অক্ষর
এখোন যে মুহূর্ত সত্য হয়তো তা আবার সত্য নয়।ছুটি বলেই জনবিরল নগরী ঢেকে আছে ঘাসে
শিথিল জল শিরায় শিরায়
আকণ্ঠ জলে ডুবে যায় নদী, সীমানা পেরিয়ে ঘূর্ণিপাকে
শহরের শেষ ধাপে দিগন্ত ব্যাপিয়া ধানি মাঠ বন
দেশ জুড়ে বড় দৈন্য ক্লান্তির কফিনে ঢেকে যায় রাত
জানালার গ্রীলে মাথা রেখে দেখি আকাশ
সহস্র নক্ষত্রমণ্ডল ছেয়ে আছে কালরাত্রি
বড়ো কৃপণ সময়, তাই কথার বিষাণে পড়ে ছেদ
অন্তহীন দূরে তোমার মানচিত্র
ছায়াবৃত্তে তোমাকে গোপন করো তুমি
সেই ভালো একটি জীবন
না হয় অজানাই থাক
মেঘ ছুঁয়ে যাওয়া কথার প্রণয়
বুকের অতলে ঢাকা
ভেজা অক্ষরে লেখা তবু সত্য নয়।১০ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা, ২৭ চৈত্র ১৪৩১, বসন্তকাল
বিমল কান্তি দাশের দুটি কবিতা ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া
অমৃতস্যপুত্রা : যতই শক্রিমান,
নিয়তি সকাশে ততই মৃতমান॥
ভ্রান্ত আসক্তিতে সমাজে ঘৃণিত,
অপকর্মের দুর্ভোগ পরোক্ষে ফলিত॥
সজ্জিত ধার্মিকের কতই না ছলনা,
কথায় কথায় অবাঞ্ছিত বাহানা॥
হীন যদি হয় কাহার পৌরুষ,
থাকবে না সত্য প্রকাশে সাহস॥
নিজ দেশে এখনো পরবাসে,
রয়েছে হতভাগারা সর্বস্ব নিঃশেষে॥
যুগে যুগে মানবতার অন্তর্ধান,
শীর্ষে বসে মিথ্যাচারটাই নিদান॥
মবোক্র্যাসির প্রতিক্রিয়া ঘটে সমপরিমাণ,
ইতিহাসেই রয়েছে প্রকৃষ্ট প্রমাণ॥
বিশ্বে যতক্ষণ চলমান থাকবে দ্বিচারিতা,
সুশাসন ততই মরুর ধুধু মরীচিকা॥কুহেলী
কোথায় হারিয়ে গেলো মনুষ্যত্ব,
মানুষের চিরন্তনী সমাজ থেকে;
পইপই করে খুঁজতেছি তাকে
পাওয়া গেল দুরন্ত মব সমাজে।
সে যে হায়! মারাত্মক অসহায়,
সাড়া দিতেই হলো দ্বি-চারিতার ডাকে;
কর্ডেটা পর্বের শ্রেষ্ঠতমেরাই তবে
অমানবিকতায় আক্রান্ত হয়েছে বটে।
নৈতিকার হয়েছে সার্বিক বিলুপ্তি,
অনৈতিকতার নির্মম ফাঁদে;
জনসাধারণ্যে অসহায়ত্ব জীবনের সর্বস্তরে
ফিরে আয় ঘরে মনুষ্যত্ব! বলে শুধুই কাঁদে॥
অনুসন্ধিৎসু যার মন,
প্রত্যক্ষের খোঁজে থাকে অনুক্ষণ;
আবেগে হারায় বিশ্বাস
মনেতে চঞ্চলতা বিরাজে বিলক্ষণ॥