সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৬

আগুনের নদী

মিজানুর রহমান রানা
আগুনের নদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

সাত.

ভালোবাসা কি অপরাধ? কানাডায় স্বামীর ফ্ল্যাটে বসে বসে ভাবছে মোনালিসা। তুষার আহমেদকে সে ভালোবেসেছিলো বিয়ের আগেই। সে তার চাচাতো ভাই ছিলো। ছোটকাল থেকে একসাথেই মানুষ হয়েছে। সে তুষার আহমেদের চেয়ে তিন বছরের ছোট। সেই ছোটকাল থেকেই দুজন পাশাপাশি ঘরে থেকেছে, খেলেছে, বড়ো হয়েছে। একজনের প্রতি আরেকজনের টান বেড়েছে।

বড়ো হয়ে দুজনের দুটি মনে একজনের প্রতি আরেকজনের আকর্ষণ বেড়েছে। মনের আকর্ষণ ভালোবাসার শক্তি যুগিয়েছে। পরিবারের লোকজন রাজি না হওয়ায় এক সময় তুষারকে মোনালিসা গোপনে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু ভয়ে কাউকে জানাতে সাহস করে না।

এক সময় তার বাবা বিষয়টা জানতে পেরে কানাডা প্রবাসী আদম ব্যবসায়ী সুমনের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেয়। সুমন কানাডা চলে যায়। কিন্তু মোনালিসা আর তুষার দুজনের যেহেতু আগেই বিয়ে হয়েছিলো, সে কারণে একজনের সাথে আরেকজনের আগের মতোই চলাফেরা বাড়তে থাকে।

বাবা ইলিয়াস মণ্ডল বিষয়টা টের পেয়ে যায়। তারপর একদিন যখন তুষার মোনালিসার সাথে দেখা করতে আসে সেই সময় তার বাবার লোকজন মিলে তুষারকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন তুষারের শরীরের আট টুকরো খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায় সুতিয়া নদীতে।

তারপর দিনই তার বাবা তাকে নিয়ে কানাডায় চলে আসে। কিন্তু তার মনের ভেতরে সেই দৃশ্য ভেসে উঠে বার বার।

সুতিয়া নদীর পাড়ে বসে তুষার আর মোনালিসা পাশাপাশি বসে কথা বলছিলো। তুষার মোনালিসাকে বলছিলো, ‘মোনালিসা, তোমার বাবা এভাবে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। চাচা তো ছোটকাল থেকেই আমাকে মানুষ করেছেন কোলেপিঠে করে। কত আদর-স্নেহ করতেন। কিন্তু যেই শুনেছেন তোমাকে আমি বিয়ে করেছি, তখনই তিনি আমার শত্রু হয়ে গেলেন। চাচাতো ভাইবোন বিয়ে করাটা কি অবৈধ নাকি?’

মোনালিসা উত্তর দিয়েছিলো, ‘না অবৈধ হবে কেনো? আসলে বাবা চেয়েছেন আমাকে সম্পদশালীর নিকট বিয়ে দিতে, যাতে আমার জন্যে ভালো হয়। সে কারণে তিনি এমনটা করেছেন।’

‘চাচার এটা বুঝা উচিত। পৃথিবীতে টাকা সুখ আনে না। সংসার সুখের হয় স্বামী স্ত্রী উভয়ের সেক্রিফাইসের কারণে। এখানে একজন আরেকজনের কথা মনোযোগ সহকারে শুনবে, প্রয়োজন হলে সেটা কর্তব্যে পরিণত করবে আর প্রয়োজন মনে না হলে সহমর্মিতা জানাবে। দুজনের মনের মিলেই সংসার সুখের হতে পারে। আমি তো পড়াশোনা শেষ করেই কিছু একটা করবো রোজগারের জন্যে। হয়তো চাকুরি না হয় ব্যবসা। ওনার এতো টেনশন কেনো। আমার বউকে চালানোর সম্পদ তো আমার বাবার আছেই? আমার বাবামায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান আমি। তাহলে এতো টেনশনের কারণ কী?’

‘জানি না, হয়তো সব পিতাই তার কন্যার জন্যে এমনই চিন্তা করে। সে কারণে হয়তো হবে।’

‘সব পিতা এক নয়। পিতা হতে হলে সন্তানের সুখ-দুঃখ বুঝতে হয়। সন্তান কী চায়, সেটা ভালো না মন্দ তার সুবিচার করাটাও পিতার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। চাচা সে কাজটি করতে ব্যর্থ।’

‘যা-ই হোক, আমি তোমাকে ছাড়া কোথায়ও যাবো না। মরলেও তুমি বাঁচলেও তুমি।’ কথার জবাব দিয়ে মোনালিসা তুষারের হাতটি ধরলো।

ঠিক সেই সময়েই আবির্ভাব হলো তার পিতা ইলিয়াস মণ্ডল ও তার বাহিনীর।

মোনালিসার ধরা হাতটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে তুষারকে ওরা টেনেহেঁচড়ে নিয়ে গেলো নদীর পাড়ে। আর তার বাবার লোকজন মোনালিসাকে জোরপূর্বক ঘরে এনে দরজা লাগিয়ে দেয়। মোনালিসার আর্তচিৎসার বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ঠিক এই সময়েই তুষারকে অন্ধকারে নদীর কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকজন মিলে ধরে রেখেছিলো তাকে। কিন্তু সে হঠাৎ করেই ধাক্কাধাক্কি করে পড়ে যায় নিচে। ধপাস্ করে একটা শব্দ হলো নদীর পানির। কিন্তু অন্ধকারে তারা অল্প অল্প করে দেখলো, নদীর পানির কাছে তুষার বসে প্রস্রাব করছে। এ সময় তার পেছন থেকে চুলের মুঠি ধরে অন্ধকারেই চার-পাঁচজন মিলে খুন করলো তাকে। খুনের পর তার মাথাসহ পুরো শরীরের চামড়া তুলে ফেলে তারপর তার মাথাটা কেটে ফেলে দেওয়া হয় সুতিয়া নদীতে। দেহটা খণ্ড খণ্ড করে একটা ব্রিফকেসে ভরে সেটা জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।

আত্মতৃপ্তির হাসি হাসে ইলিয়াস মণ্ডল। তারপর সে সঙ্গীদের প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা, ছেলেটার নদীতে পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনেছিলাম। কিন্তু সে আবার নদী থেকে উঠে প্রস্রাব করার অভিনয় করতে গেলো কেনো?

তার দলের একজন উত্তর দিলো, ‘তারে মরণেই ডেকেছে, তাই সে আবার উঠে বসেছে। না হয় ডুব দিয়ে নদী সাঁতরে চলে গেলে তো আমরা আর তার দেখা পেতাম না। সেও মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যেতো।’

‘ঠিক। মৃত্যুই তাকে ডেকেছে। আমাদের কোনো দোষ নাই।’ এই বলে হাসলো ইলিয়াছ মণ্ডল। তারপর তার দলবল নিয়ে চলে যায় সে।

সারাটি রাত কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় মোনালিসা। সকালে তার বাবার লোকজন তাকে জোর করে গাড়িতে তোলে। তারপর তাকে তার বাবা কানাডায় নিয়ে আসে তার স্বামীর কাছে। এখানে এসে দেখতে পায় তার স্বামী একজন চোরাচালানি। তার একজন বস মাঝে মাঝে তাকে কল করে। রাতবিরাতে সুমন বেরিয়ে যায়। সে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক গ্যাংলিডারের নির্দেশে কাজ করে। শুনেছে, এই লোকটা কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক এমপিকে খুন করে লাশটাকে কিমা কিমা করে বাথরুমের কমোডে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে। ভয়ানক খুনি এই লোকটা। সে অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিদিনই আপডেট পায় সেই খুন সম্পর্কে।

সে এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। কীভাবে পালাবে এই বন্দীদশা থেকে। সে সিদ্ধান্ত নেয়, তুষার যেহেতু বেঁচে নেই, সেহেতু সেও বেঁচে থাকবে না। জীবনকে দেখিয়ে দেবে সেও মরতে জানে। মৃত্যুর পর তার বাবার আহাজারি দেখতে চায় সে। তার বাবার অন্যায়ের বিচার যেনো আল্লাহ করেন, সেই অপেক্ষায় কবরে প্রতীক্ষার প্রহর গুণবে সে।

মোনালিসার অন্তরের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ঠিক যেনো পাহাড়ের ভেতরের লাভার গলিত আগুনের মতো। যে কোনো মুহূর্তেই সেই লাভা সব তছনছ করে দেবে।

এভাবে ভাবতে ভাবতে সে চিন্তা করতে থাকে, মৃত্যু আসলে কোনো সমাধান নয়। আল্লাহ বিপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। তাহলে সে কেনো আত্মহত্যা করবে? আত্মহত্যা তো কাপুরুষের কাজ। সে কাপুরুষ হতে চায় না। সে অপেক্ষা করবে এইসব অন্যায়কারীর শাস্তি দেখার জন্যে। নিশ্চয় একদিন এই অন্যায়র শাস্তি হবেই। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়