সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৮

উপকার

রোমান ইসলাম
উপকার

আমার স্ত্রী অনু যখন তিন মাসের প্রেগনেন্ট, তখন আমার মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার দুদিন আগে আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে একটা কথা বলেছিলেন যে, তিশান, বৌমার প্রতি খেয়াল রাখবি। সবসময় ওর পাশে থাকবি। আর মানুষের ভালো সময়ে পাশে না থাকলেও খারাপ সময়ে সবার আগে এগিয়ে যাবি। কে জানতো তার দুদিন পরেই মা মারা যাবেন।

আগে বাড়িটা কতো জমজমাট থাকতো। অনুও মায়ের সাথে সারাক্ষণ আড্ডা দিতো। মা মারা যাওয়ার পরে অনুও সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। কাজের মেয়েটাও এসে কাজ করে চলে যায়। বাড়িটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।

গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় দেখি আমাদের পাশের বাসার রনি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম, দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ভাইয়া? উনি বললেন, অফিসের বাস চলে গেছে। তাই সিএনজির জন্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমি বললাম, আমার বাইকে উঠুন, আমি নামিয়ে দিচ্ছি। আমি উনাকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি অনু রাগ করে আছে। তার জন্যে রাস্তা থেকে একগুচ্ছ বেলিফুল আর চকলেট কিনে নিয়েছিলাম। সেটা দেয়ার পরমুহূর্তেই তার রাগ ভেঙ্গে গেলো। আসলেই মেয়েদের খুশি করতে দামি কিছু লাগে না

যার একমাত্র প্রমাণ আমার স্ত্রী অনু।

পরের দিন ছিলো শুক্রবার। সকাল বেলা রনি ভাইয়া এসে বলতেছেন, অনেক ধন্যবাদ তিশান ভাইয়া।

আমি বললাম, ধন্যবাদ কেনো? তখন রনি ভাইয়া বলেন, গতকাল আমাদের অফিসের বাস রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছে। প্রায় ১৬ জনের মতো মারা গেছে। আর বাকিরা হসপিটালে। যদি আমিও কালকে বাসে উঠেই বাসায় ফিরতে চাইতাম, আমারও একই অবস্থা হতো। তারপর রনি ভাইয়া চলে গেলেন।

শুক্রবার ছিলো। তাই আমি অনুকে সব কাজে হেল্প করলাম। ও যতক্ষণ রান্না ঘরে ছিলো, ততক্ষণ ওর পাশে ছিলাম। এমনিতে তো পাশে থাকতে পারি না, তাই সেদিন দুজন মিলে আমাদের সব পছন্দের খাবার রান্না করলাম এবং রাতে খাওয়াদাওয়া করলাম দুজন মিলে।

পরের দিন সকাল বেলা যখন অফিসে যাচ্ছিলাম, তখন দেখি আমাদের বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার রহমান চাচা তপ্ত রোদে হেঁটে কোথাও যেনো যাচ্ছেন। আমি বললাম, চাচা এই রোদে হেঁটে যাচ্ছেন, একটা রিকশা নিয়ে যেতে পারতেন। উনি বললেন, বাবা তিশান, বুঝোই তো আমরা গরীব মানুষ, মাস শেষে ভাড়া দিতেই বেতনের অনেক টাকা চলে যায়, তারপর তোমার চাচি অসুস্থ, ওর জন্যে ওষুধ আনতে হসপিটালে যাচ্ছি। হেঁটে গেলে যে কয় টাকা বাঁচবে, তা দিয়ে ওষুধ কিনে নিবো।

আমি উনাকে বললাম, চাচা আপনি আমার বাইকে উঠুন। আমি আপনাকে হসপিটালে নামিয়ে দিচ্ছি। উনাকে হসপিটালে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যেতে অনেক লেট হয়ে যায়। আর কতক্ষণ বসের বকা শুনতে হলো। এটা ব্যাপার না। একজনের উপকার তো করতে পেরেছি।

দেখতে দেখতে ৯টা মাস কেটে গেলো। অনু এখন ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না। অনেক কষ্ট হয়। বাসায় ১টা কাজের মেয়ে আছে। ও-ই সবকিছু করে আমি অফিসে চলে আসলে।

হঠাৎ একদিন অফিসে বসে ফাইল দেখছিলাম, তখন বাসার কাজের বুয়া ফোন দিয়ে বললো, তিশান ভাইয়া, তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন, ভাবীর প্রসব ব্যথা উঠছে, উনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, তাড়াতাড়ি আসুন। এই বলে ফোন কেটে দিলো।

আমি বাসায় গিয়ে দেখি, বাসায় কেউ নেই, দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, পাশের বাসার রনি ভাইয়া বাড়িতে ছিলেন। আর উপরতলার রহমান চাচা উনাদের দারোয়ান কাকাকে ডাক দিয়ে আনার পরে, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে অনুকে হসপিটালে নিয়ে গেছে।

আমি বাইক নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় রনি ভাইয়া ফোন দিয়ে বললেন, তিশান ভাইয়া আসার সময় মিষ্টি নিয়ে আইসেন, আপনার ছেলে হয়েছে। আমি 'আচ্ছা' বলে রাখলাম।

হসপিটালে গিয়ে আমি অনুর কাছে গিয়ে দেখলাম অনু শুয়ে আছে। আমি ওকে বললাম, সরি জান, আমি তোমার পাশে থাকতে পারিনি, আই এম সরি, তুমি ঠিক আছো তো?

অনু বললো, আমি ঠিক না থেকে পারি বলো? রনি ভাইয়া, রহমান চাচা ও আমাদের পাশের বাসার সবাই আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। রক্তের দরকার ছিলো, রক্ত দিয়েছেন আমাদের বাসার সামনের মুদি দোকানদার রহিম ভাইয়া। তাই এখন তোমার জান অনেক সুস্থ আছে, আর আমাদের ছেলেও।

আমি অনুর কথা শুনে একটা কথাই ভাবছি, আজ মা থাকলে কতো খুশি হতেন! মা বলেছিলেন, খারাপ সময়ে যেনো সবার পাশে থাকি। আজ আমি অফিসে ছিলাম, অথচ আমার স্ত্রী ছিলো অসুস্থ। তবুও পাড়া প্রতিবেশী সবাই ছুটে এসেছে। উনাদের একদিন উপকার করেছিলাম বলেই আজ আমার স্ত্রীর খারাপ সময়টাতে আমি পাশে না থাকলেও সব ধরনের সাপোর্ট উনারা করেছেন। এই জন্যেই হয়তো গুরুজনরা বলে গেছেন, কারো ভালো সময়ে পাশে না থাকলেও খারাপ সময়ে পাশে থেকো। উপকারের প্রতিদান সবাই ভুলে না, তুমি মানুষের জন্যে যা ভালো করবে, তা তুমি অবশ্যই ফিরে পাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়