শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   খাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
  •   নৌ পুলিশের হয়রানি বন্ধে জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে জেলেদের লিখিত আবেদন
  •   হাসান আলী মাঠে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শততম দিনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
  •   মাদ্রাসা খাদেমের লাশ নদী থেকে উদ্ধার
  •   পল্লবীতে দুই ছেলেকে জবাই করে হত্যার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০

কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে মায়াবতীর দেখা

সাজেদুর রহমান
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে মায়াবতীর দেখা

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শুষ্ক শীতের ভেজা কুয়াশা দেখার মধ্যে হয়তো একধরনের নেশা লাগানো ভাব কাজ করে। যা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভেজা মেঘ ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি কিছুটা হলেও ম্লান করে তোলে।

আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, জায়গাটির নাম ঠিক জানি না। হাড় হিম করা ঠান্ডা, নদীর পাড়ে বয়ে চলেছে উত্তরের হাওয়া। এমন পরিবেশে চোখ বেঁধে কাউকে এনে দাঁড় করিয়ে দিলে, সে হিমালয়ের কোনো পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে ভেবে বসবে। এমন কনকনে কুয়াশাজড়ানো সকালে নদীর পাড়ে এসেছি কিছুটা অনিচ্ছায়।

এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মূল কারণ হিমু। সে আমার বন্ধু। নাম দেখে কেউ আবার তাকে হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্রের সঙ্গে মিল খুঁজতে যাবেন না। আমার বন্ধুর মধ্যে হিমু চরিত্রের বিন্দু পরিমাণ ছিটেফোঁটা নেই। আঙ্কেলকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই নাম কেন রাখল? তিনি কিছুই বলেননি, শুধু হেসেছিলেন। সেই হাসির কোনো ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাইনি।

যা হোক, হিমু সম্পর্কে অন্য একদিন লেখা যাবে। মূল গল্পে ফিরে আসি। গতকাল রাত মোটামুটি ১১টা বাজে, এমন সময় ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি হিমুর নম্বর। ফোন ধরে কানে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হিমুর সেই ভাষণময় কণ্ঠ বেজে উঠল, ‘দ্রুত বের হ, রস চুরি করে খাইতে যেতে হবে।’ আমিও মোটামুটি উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পৌঁছে দেখি হিমুসহ আরও দুটি ছেলে এসেছে। ওহাব ও মাসুম। হিমুর শিষ্য। খেজুরগাছে চড়তে ওস্তাদ।

গাছ থেকে রস পেড়ে মোটামুটি খাওয়া শেষ; এমন সময় গাছের মালিক এসে উপস্থিত। দূর থেকে চেঁচিয়ে বলল, কে? ব্যস, ওই শুনে দৌড় দিলাম চারজন চারদিকে। শহরে থাকি, গ্রামের রাস্তা খুব একটা চিনি না। অচেনা পথিকের মতো হাঁটতে থাকলাম সারা রাত। সেই রাত থেকে হাঁটতে হাঁটতে এই সকাল হবে হবে মুহূর্তে নদীর পাড়ে এসে পৌঁছাই।

তখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন নদী দেখছি। হঠাৎ কিছু একটার রিনঝিন শব্দ কানে এল। প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো মনের ভুল, পরে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম, এটি কোনো ঝুনঝুনির শব্দ হবে। আশপাশে মনোযোগ দিয়ে তাকালাম। কোনো লাভ হলো না। কুয়াশার কারণে ১০ হাত দূরে কী আছে, তা দেখার সুযোগ নেই। নিজের কানকে আরও একটু সতর্ক করলাম। বুঝতে পারলাম শব্দটি আমার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। কিছুটা ভীতি ও কৌতূহল নিয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর কুয়াশার মধ্য থেকে একটি মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। মেয়েটির দিকে কিছুটা সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে খেয়াল করলাম, একটু আগে যে রিনঝিন শব্দ কানে ভেসে আসছিল, তার উৎস মেয়েটির হাতে পরিহিত কালো রেশমি চুড়ি।

এই শীতের সকালে রেশমি চুড়ি পরে ঘুরতে দেখে বেশ অবাক হলাম। মেয়েটিও আমার দিকে কিছুটা কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। কৌতূহলের থেকে অবিশ্বাস ও বিরক্তির ছোঁয়া বেশি মনে হচ্ছে। সে হয়তো কাউকে এত সকালে নদীর পাড়ে আশা করেনি। মেয়েটি অনেক রূপবতী। চেহারায় একধরনের মায়া আছে। উঁচু নাক, নাকে একটি ছোট্ট নাকফুল, কানে ত্রিভুজ আকৃতির দুল। গায়ে নেভি ব্লু রঙের জ্যাকেট, তার ওপর আকাশি চাদর। উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হবে। এর মধ্যে পাঁচ-ছয় বছর বয়সী একটি ছেলের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। ছেলেটি তন্বী আপু, তন্বী আপু বলে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে এল। ছেলেটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার তন্বী নামের মেয়েটির দিকে তাকালাম। সে এখনো বিরক্তির চোখে চেয়ে আছে। এবার চোখাচোখি হলো দুজনের। কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করলাম। মেয়েটি চোখ নামিয়ে আবার নিজের গন্তব্যে হাঁটা শুরু করল। নিমেষেই কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেল। চোখের আড়াল হওয়ার পর বুঝতে পারলাম, মেয়েটি আমার কাছ থেকে কিছু একটা নিয়ে চলে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়