প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৫২
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আক্তার। যার সুনাম- পরিচিতি কলেজের সকল শিক্ষার্থীর কাছে রয়েছে। সেই ফাতেমা আক্তার এবার একই কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শিক্ষকদের সাথে বৈষম্যপূর্ণ ও অসদাচরণ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ প্রদানসহ একাধিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
|আরো খবর
কলেজের ছাত্র- শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ। সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফাতেমা আক্তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক ও সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, শিক্ষার গুণগত মান বিনষ্টে পাঠদানে শিক্ষকদেরকে অনীহা দেখানো, নির্বাচনী ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নকল সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে বৈষম্য তথা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে ধরেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে অনৈতিক আচরণ, শিক্ষার্থীদেরকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিরুৎসাহিত করা, শিক্ষকদের এসিআর খারাপ ও বেতন বন্ধের হুমকিসহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কলেজের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও অনৈতিক আচরণের কথা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর মতে, অধ্যক্ষের প্রতি একটি অদৃশ্য আতংক নিয়ে শিক্ষকরা কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যক্ষ নিজেই কলেজ ক্যাম্পাসে স্কাউট রুমকে বাসা বানিয়ে থাকছেন বলেও অভিযোগ করেন ফাতেমা আক্তার। এ ছাড়া গত শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার পিছনে অধ্যক্ষ ৬০ ভাগ দায়ী বলে মন্তব্য করেন এই সহকারী অধ্যাপক।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ধারাবাহিক ফলাফল চলতি বছরে এসে থমকে দাঁড়ায়। এর জন্যে ৬০ ভাগ দায়ী অধ্যক্ষ। তিনি এই শিক্ষার্থীদের একে একে তিনবার ফি নিয়ে নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়েছেন। মোবাইল দেখে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং মেয়েদের লম্বা দৌড়ের খেলা চালু করেন। একটি মফস্বলের কলেজ হিসেবে শালীনতা ভঙ্গ হয় বলে আমরা পূর্ব থেকে এমন দৌড়ে নিরুৎসাহিত করে আসছিলাম।
ফাতেমা আক্তার আরো বলেন, অধ্যক্ষ ইচ্ছেমত শিক্ষার্থীদের অবাধে মেলামেশার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, নিয়মিত পাঠদানে শিক্ষকদের নিরুৎসাহী করেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অতীতে কলেজে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকতো। কিন্তু বর্তমানে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত থাকে, বাকিরা প্রায় অনুপস্থিত। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে অংশগ্রহণকারী জেলা পর্যায়ে প্রথম হওয়া দুই শিক্ষার্থীকে বিভাগীয় পর্যায়ে যেতে অধ্যক্ষ নিরুৎসাহিত করেছেন। পরবর্তীতে চাপের মুখে তিনি ওই শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় পর্যায়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে পাঠাতে বাধ্য হন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ফাতেমা আক্তার বলেন, তিনি (অধ্যক্ষ) সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরেও কলেজের স্কাউট কক্ষে থাকেন কেন? ওই কক্ষে অফিসের নারী স্টাফকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়ার জন্যে নিয়োজিত রাখেন। কেন তিনি পুরুষ পিওন রাখেন না? সহকারী অধ্যাপক রাশেদ সাহেবকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা ও অন্যান্য বিলে মারুফের নাম থাকে। অথচ সে গত এক বছর ধরে কলেজে আসে নি। কলেজের দুজন নাইট গার্ডকে দিয়ে দিনের বেলা কাজ করানো হচ্ছে। একজন স্টাফের ছেলে ও অপর এক স্টাফের স্ত্রীর নাম দিয়ে কাজ দেখানো হচ্ছে। অথচ তারা কাজ করে না। আমি, মল্লিকা ম্যাডাম, হারুন স্যারসহ সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে অধ্যক্ষ বৈষম্যমূলক আচরণ করেন। মল্লিকা ম্যাডাম ও আমার কলেজ অংশের বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। তিনি শিক্ষকদের এসিআর খারাপ করে দেওয়ার হুমকি দেন। আমার বোনাস ঈদের সময় না দিয়ে পূজার সময় দিয়েছেন।
ফাতেমা আক্তার বলেন, প্রতিষ্ঠান সরকারি হলেও আমরা ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর আত্মীকরণ হয় নি। যার ফলে আমরা শুধু এমপিও সুবিধা পেয়ে থাকি। সে হিসেবে আমার বয়স ৬০ বছর পর্যন্ত আমি শিক্ষকতা করতে পারবো। অথচ তিনি গত পয়লা জুন আমার ৫৯ বছর পূর্ণ হলে কাউকে না জানিয়ে ফুল দিয়ে অবসরে পাঠান। এতে আমিসহ মল্লিকা ম্যাডাম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রাপ্য বেতন ও বোনাস বন্ধ করে দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন শিক্ষক ছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আক্তারের আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি (সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আক্তার) আমার প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, অথচ আমি জানি না। এটি তার বিধি বহির্ভূত কাজ । তাছাড়া ডিগ্রি পরীক্ষা চলাকালীন মানে ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি থাকাকালে তিনি এই আয়োজন করেন। তিনি কলেজের রিটায়ার্ড পার্সন হয়ে কীভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করলেন?
অবসরের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী কারো ৫৯ বছর পূর্ণ হলে তিনি অবসরকালীন ছুটিতে যাবেন। আর এক প্রতিষ্ঠানে ২টি নিয়ম চলতে পারে না। তিনিসহ নন-ক্যাডারে শিক্ষক এবং কর্মচারীসহ ১৯ জন আত্মীকরণ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৩ থেকে চিঠি এসেছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
স্কাউট কক্ষে নিজের থাকার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের রেস্টরুম থাকে। আমি ওই কক্ষটি রেস্টরুম হিসেবে দিনে ব্যবহার করি এবং রাতে পরিমল স্যারের বাসায় থাকি। তাছাড়া ওই রেস্টরুমটি রাতে থাকার উপযোগী নয়। যেহেতু রাতে আমি থাকি না, সেহেতু ওই রেস্টরুমে রাত ১০/১১টায় খাওয়া-দাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মিথ্যা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানের খরচে বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। অন্য সকল অভিযোগ অস্বীকার এবং এর বিপরীতে বক্তব্য উপস্থাপন করে তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে কারো এসিআর দেওয়ার সুযোগ আমার নেই। পূর্বের অধ্যক্ষগণ ওনাদের (শিক্ষক) এসিআর দিবেন। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানে আমার চাকরির বয়স ১ বছরের কিছু বেশি। তাই, আমি এসিআর দিতে পারবো না। এই বছরের (২০২৪) পর আমি এসিআর দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবো।
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল জানান, বিষয়টিতে ডিজি কার্যালয় ব্যতীত কারো হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। কোনো ধরনের তদন্তের প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়, কুমিল্লা-এর পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রাথমিকভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা ও পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান।