শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:১৬

জন্মান্ধ হয়েও বারো বছর বয়সে হলেন হাফেজ

শিক্ষকতা করে ইয়াহইয়া ছড়াচ্ছেন কোরআনের আলো

গিয়াস উদ্দিন রনি
শিক্ষকতা করে ইয়াহইয়া ছড়াচ্ছেন কোরআনের আলো
হাফেজ মো. ইয়াহইয়া (২২)

জন্ম থেকেই দুচোখে দেখতে পান না সিলেটের জৈন্তাপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে হাফেজ মো. ইয়াহইয়া (২২)। তিনি পেশায় একজন মাদরাসা শিক্ষক। তবে জন্মান্ধতা তাঁর জীবনে কোনো বাধা হতে পারেনি। এমনটা প্রমাণ করতে যেন তাঁর লড়াইটা জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত না পেতে বিভিন্ন মাদরাসায় গত পাঁচ বছর যাবত শিক্ষকতা করে আসছেন। তাঁর এমন চেষ্টায় অনুপ্রাণিত মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। তিনি যেন নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই। ২০০২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ইয়াহইয়া। জন্মান্ধ শিশুপুত্র ৷ জন্মের পরে তার বাবা-মাকে শুনতে হয়েছিল--এ ছেলে কী করবে? অনুপ্রাণিত করতে কেউ আসেনি বাবা-মা ছাড়া ৷ বরং ছোটো থেকেই কপালে জুটেছে পাড়া-পড়শির ব্যঙ্গোক্তি ৷ সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেন। এর কয়েক বছর পর হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। রীতিমত ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হয়ে সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি হার মানেন নি। তিনি পেরেছেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে। তখন থেকেই বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করে চলেছেন। শৈশব থেকেই ইয়াহইয়ার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর ও অসাধারণ কুরআন তেলাওয়াত যে কাউকে মুগ্ধ করে।বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তা'মীরুল উম্মাহ হিফজুল কোরআন মাদরাসায় হিফ্জ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তিনি যেন কোরআনে হাফেজ বানানোর কারিগর ৷ এই মাদরাসায় তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫জন শিক্ষানবিশ হাফেজের ছবক দেন। অন্যান্য শিক্ষকের মত তিনি খুব সাধারণ ভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া দেন এবং নেন। শিক্ষার্থীরাও তার পড়ায় সন্তুষ্ট। হাফেজ ইয়াহইয়া পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন বাগেরহাট আমতলী মাদরাসা ও পাবনার চাওতুল কোরআন মাদরাসায়। নিজের গ্রাম ও কর্মরত মাদরাসার সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। একা একা চলাফেরা করেন বিভিন্ন স্থানে। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজ হাতে কারো সাহায্য ছাড়া। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে তিনি পুরোপুরি আলাদা। নিজের সকল কাজ তিনি নিজে করতে পারেন। কোরআন পড়া ও কোরআনের বিস্তারই তাঁর জীবনের সাধনা। জন্মান্ধ শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহইয়া বলেন, আমি ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করি। জীবনের শুরু থেকে আমি পৃথিবীর কোনো কিছু উপভোগ করতে পারছি না। তবে মৃত্যু পর্যন্ত আমি কোরআনের সাথে থাকতে চাই। সুবর্ণচরের তা'মীরুল উম্মাহ হিফজুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম এইচ. এম. নাছরুল্লাহ বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্যে বাধা নয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শিক্ষক ইয়াহইয়া। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম বিলিয়ে যাচ্ছেন কোরআনের আলো। দৃষ্টি তাঁর সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী ইয়াহইয়াহ কারো বোঝা না হয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কোরআনের সাথে থাকতে চান। তাঁর এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়