প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ১০:৩২
মেঘনাপাড়ের দুটি রাস্তা ও কৃষকের বসতঘর বিলীনের পথে
জনদুর্ভোগ ও আতংক

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর পাড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে এবং আলতাফ মাস্টার ঘাটে যাওয়ার পাকা রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এর সাথে কৃষকদের বসতঘরও বিলীন হবার পথে। এতে ৮ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে ও আতংকে রয়েছে। ৪ বছরে সড়কটি মেরামত করা হচ্ছে না বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। উল্লেখ্য, গত ২০ দিনের টানা বর্ষণে রায়পুর উপজেলার পৌরসভাসহ মেঘনা উপকূলীয় তিনটি সহ দশটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ও পুকুর পাড় ভেঙ্গে গেছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে মেঘনার প্রায় লক্ষাধিক চরের বাসিন্দারা। চরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। দুর্বিষহ জীবন কাটছে অসহায় দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের। রোববার (২০ জুলাই ২০২৫) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অমাবস্যায় মেঘনায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে পানির চাপে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সাজু মোল্লার মাছ ঘাটে যাওয়ার পথে জালিয়ারচর গ্রামের আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে এবং চরইন্দ্রুরিয়া গ্রামের আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাটে যাওয়ার রাস্তাটিতে ৫-৬টি বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় মেঘনায় নদীর সংযোগ খালে তলিয়ে যাবে। সাজু মোল্লার মাছ ঘাট সংলগ্ন খাল পাড়ের ঘনবসতির রাস্তাটি গত চার বছর ধরে বেহাল অবস্থায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সাজু মোল্লার ঘাটে যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় স্থানীয় ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীসহ কৃষক ও দিনমজুররা চরম বিপাকে পড়বেন। বর্তমানে রাস্তাটির ভাঙ্গা স্থানে সুপারি গাছ ও বাঁশের পুল তৈরি করে উত্তরচরবংশী ইউনিয়নের চরইন্দ্রুরিয়া, চরকাছিয়া, জালিয়ারচর এলাকার ১০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন। অটোরিকশা চালক মিনহাজ ও সবুজ বলেন, ‘যে কোন সময় মাস্টারঘাট ও সাজু মোল্লার ঘাটে যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙ্গে মেঘনা নদীর-খালের সঙ্গে মিশে যাবে। ৪ বছর ধরে আতংকে অটোরিকশা চালাতে হচ্ছে। এতে আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে অনেক চালক পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে। দ্রুত রাস্তা মেরামত করলে হাজারও গ্রামবাসীর উপকার হতো।’ চরইন্দ্রুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোসনা বেগম ও ১নং চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফারুখ আহাম্মেদ জানান, মেঘনার চরাঞ্চলের বেশিরভাগ শিশুই এই স্কুলের শিক্ষার্থী। যে কোনো সময় আলতাফ মাস্টার ঘাটের রাস্তাটি ধসে পড়বে। সাজু মোল্লার মাছ ঘাটে যাওয়ার পথে আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে রাস্তাটি চার বছর ধরে বিচ্ছিন্ন। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।।কয়েজন শিশু ও বৃদ্ধও আহত হয়েছেন। স্থানীয় গ্রাম-পুলিশ আবদুল কাদের জানান, পৃথক দুটি ভাঙ্গা পাকা রাস্তা দিয়ে ছোট বাচ্চা, নারী ও বৃদ্ধদের চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় রাস্তা দুটি ভেঙ্গে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তা দুটির কয়েক জায়গা থেকে ভেঙ্গে খালে পরিণত হয়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’ উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক (সহকারী কমিশনার- ভূমি) নিগার সুলতানা বলেন, ‘মেঘনা পাড়ের আলতাফ মাস্টার ঘাটে যাওয়ার পথে পাকা রাস্তাটি ও হায়দরগঞ্জ বাজারের পরে সাজু মোল্লার মাছ ঘাট সংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রের সামনের রাস্তাটিতে বাঁধ দেয়া খুবই জরুরি। মাস্টার ঘাটে প্রতি শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে শত শত পর্যটক এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন ও নদী দেখতে আসেন। স্থায়ী সমাধানের জন্যে ভেঙ্গে যাওয়া পৃথক দুটি স্থানে শক্তভাবে মেরামত করে দিতে হবে।’ রায়পুর এলজিইডি প্রকৌশলী সুমন মুন্সি জানান, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের পৃথক দুটি পাকা রাস্তার ভাঙ্গা অংশে মেরামতের কাজ করা হবে। এছাড়াও কয়েকদিন পরেই মাস্টারঘাটের মেঘনার ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।