সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
  •   রোগীর চাপে বেসামাল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল!
  •   মেঘনাপাড়ের দুটি রাস্তা ও কৃষকের বসতঘর বিলীনের পথে
  •   র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও আতশবাজি উদ্ধার, আটক ১

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী ছিলেন সকলের হৃদয়ের মণিকোঠায়

মো. মঈনুল ইসলাম কাজল
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী ছিলেন সকলের হৃদয়ের মণিকোঠায়

দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপির সভাপতি, ছিলেন দু বারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি সকল দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা শুধু দেলোয়ার হোসেন মিয়াজীর দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। তাঁর কাছে কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, সকল জনগণ ছিলেন নিরাপদ। একজন রাজনৈতিক নেতা কতোটা নিষ্ঠাবান ও আস্থার প্রতীক হলে প্রতিপক্ষের সমর্থন আদায় করা সম্ভব! এটা শুধু দেলোয়ার হোসেন মিয়াজীর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে।

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের মিয়াজী বাড়ির মরহুম আব্দুস ছাত্তার মিয়াজীর মেঝো ছেলে দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী। পিতা আ. ছাত্তার মিয়াজীর রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে ছোটবেলা থেকেই নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত করেন দেলোয়ার হোসেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে সর্বদা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রাখেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া যুব কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা পরবর্তীতে যুবদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রত্যেকটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দলের প্রয়োজনে নেতাকর্মীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৯৬ সালে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে তিনি সর্বাধিক ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সাথে জুটি বেঁধে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন পাটোয়ারী। তিনিই শাহরাস্তি উপজেলার একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নেতাকর্মীদের ভোটে নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনটি মেয়াদে এ জুটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৮ বছর বিএনপির নেতৃত্বে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের পর প্রকাশ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপি। শুধু বিএনপির নয়, শাহরাস্তি উপজেলার সাধারণ জনগণের নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন মরহুম দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী। বিগত সরকারের আমলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২০০৯ সালে তিনি প্রথম বারের মত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পুনঃমেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪ সালে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করে ২১ মার্চ ২০১৮ সালে তিনি বিগত সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দেশে কোনো জনপ্রতিনিধির স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দৃষ্টান্ত দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী স্থাপন করেন। কোনো পদ পদবির লোভ কখনো তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। ক্ষমতার লোভ কিংবা অর্থনীতি কোনোটাই তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি ছিলেন সৎ ও নিষ্ঠাবান।

সামাজিক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মরহুম দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী। রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আস্থার জায়গায় ছিলেন তিনি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তাঁর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণায় দেখা যেতো। নির্বাচনী ফলাফলেও সেই চিত্র ফুটে উঠেছিলো। তিনি বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত সহযোগিতার জন্যে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

শাহরাস্তি উপজেলার উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়। সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মতিন স্যারের বিশ্বস্ত ছিলেন মরহুম দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টেলিফোন ভবন, ফায়ার সার্ভিস, ভাসমান সেচ প্রকল্প, পৌরসভা গঠন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক ও মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০২১ সালের ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় সবাইকে কাঁদিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জানাজায় সর্বস্তরের জনগণের ঢল নামে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র দেলোয়ার হোসেন মিয়াজীর জানাজায় সকল রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়